বেলুন শব্দটা কানে এলেই মনের মাঝে কেমন যেনো আনন্দের বুদবুদ উঠতে থাকে। রঙ বেরঙের বেলুন মানেই তো উৎসব। এই আনন্দ-উৎসবের প্রতীক রঙিন বেলুনগুলোর গায়েও কিন্তু লেগে আছে স্বপ্ন ভঙ্গের গল্প। ঘরে-বাইরে এই বেলুনগুলো যেমন ছোট ছোট কোমল হাতগুলোর আনন্দ উপকরণ হয়ে ওঠে ঠিক তেমনি কারখানাতেও এই বেলুনের কারিগরও ছোট ছোট কোমল হাতগুলো।
পার্থক্য শুধু একদল শিশু আনন্দে আকাশে উড়ায় বেলুন আরেকদল শিশু জীবন-জীবিকার টানেই বানায় বেলুন। কামরাঙ্গীরচর বেড়িবাঁধের বেলুন কারখানাগুলােতে কাজে করে কয়েকশ শিশু। যাদের এ বয়েসে স্কুলে গিয়ে পড়াশোনায় মনোযোগী হবার কথা তারাই খুব মনোযোগী হয়ে বেলুন তৈরি করে এই কারখানাগুলোতে।
সরজমিনে দেখা গেছে, এলাকার প্রায় সব বেলুন কারখানাতেই শিশুদের দিয়ে কাজ করানো হয়। সপ্তাহে বা মাসিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করে এই শিশু শ্রমিকরা। সপ্তাহ জুড়ে সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনির পর তাদের ভাগ্যে জোটে ৬০০ টাকা। শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও তা বন্ধের উপায় নেই।
কারণ ঘরে নিদারুণ অভাবের কারেণ একরকম বাধ্য হয়েই কারখানাগুলোতে কাজ করে এই শিশুরা।
একটি বেলুন কারখানার শ্রমিক রাকিবের (১২) সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে যারা কাজ করে তারা এক সময় স্কুলে যেতে। এখনো স্কুল থেকে তাদের নাম কাটা হয়নি। কিন্তু পরিবারের অভাবে কারণে তাদের ইচ্ছা থাকলেও তারা স্কুলে যেতে পারে না। তবে স্কুলে যেতে তার ভাল লাগে।
অন্য আরেকটি কারখানায় কর্মরত ১৪ বছর বয়সী উর্মি জানায়, এখানে কাজ করে সপ্তাহে ৬০০ টাকা পাই। বাড়িতে মা অসুস্থ তাই কাজ করি। তবে মা সুস্থ হলে কাজ ছেড়ে দিয়ে আবার স্কুলে যাবো। কারখানায় কাজ নেয়ার আগে উর্মি ক্লাস এইটে পড়তো।
কথা হয় করখানাগুলোতে কর্মরত বেশ কয়েকজন শিশু শ্রমিকের অভিভাবকদের সঙ্গে। তারা জানান, অভাবের সংসারে কিছু বাড়তি আয়ের আশায় তারা তাদের সন্তানদের এ কাজে লাগিয়েছেন। তারা জানেন এই কারখানাগুলোর পরিবেশ শিশুদের জন্য ক্ষতিকর। আর লেখাপড়া না করানো এর চেয়েও বেশি ক্ষতিকর। কিন্তু তারা একরকম বাধ্য হয়েই এ কাজে তাদের লাগিয়েছেন।
আজিজ বেলুন কারখানার মালিক আজিজ জানান, শিশুদের দিয়ে কাজ করানোর ইচ্ছা তাদেরও নেই কিন্তু ওদের বাবা-মা-ই এমন করে অনুরোধ করে যে হ্যাঁ না বলে উপায় থাকে না। তিনি স্বীকার করেন এই এলাকার প্রায় সব কারখানাতেই শিশুদের দিয়ে কাজ করানো হয়।
রাকিব, উর্মির মতো শত শত শিশু স্কুলে যাবার স্বপ্ন দেখলেও পূরণ হয় না তাদের স্বপ্ন। তাদের স্বপ্ন কবে পূরণ হবে তাও এক প্রশ্ন। এ জন্য প্রয়োজন পারিবািরক সচেতনতা আর সরকারের কড়া নজরদারি। তবেই এই ফুলকুঁড়িরা আবারো স্কুলের পথে পা বাড়াতে পারবে।