Tuesday, December 10, 2024
More

    সর্বশেষ

    আপনিও হয়ে উঠতে পারেন একজন স্থপতি

    শফিকুল ইসলাম : নির্মাণের অপরূপ শৈলী প্রকাশ করে স্থাপত্য। একজন স্থপতি ইতিহাস আর সময়ের ছাপ রেখে যান এ শিল্পে। একটি জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ধারাকে বয়ে বেড়ায় সে দেশের স্থাপত্য। হয়ে ওঠে সাংস্কৃতিক প্রতীক ও শিল্পকর্ম। আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের স্থাপত্য প্রকৌশল। বাংলাদেশের স্থপতিদের কাজ প্রশংসা কুড়িয়েছে বিশ্ব দরবারে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সাবজেক্ট হিসেবে স্থাপত্য বেছে নেয়ার সময় দ্বিধাগ্রস্ত হন অনেক শিক্ষার্থী। অনেকেরই কোনো ধারণা নেই যে স্থপতি কারা এবং তারা কী করেন। স্থাপত্যবিদ্যায় কোথায়, কী শেখানো হয়, তারা কী কী দক্ষতা অর্জন করেন, তারা প্রতিদিন কতক্ষণ কাজ করেন, তারা কার জন্য কাজ করেন, তারা কত উপার্জন করেন এবং স্থাপত্যবিদ্যায় ক্যারিয়ার কেমন ইত্যাদি। আপনি যদি বিল্ডিং, ডিজাইন ও অবকাঠামোয় বিশেষ আগ্রহ অনুভব করেন তাহলে স্থাপত্য হতে পারে আপনার জন্য এক উজ্জ্বল ক্যারিয়ার। আপনিও হয়ে উঠতে পারেন একজন স্থপতি।

    স্থাপত্য প্রকৌশল কী
    একটি ভবনের মূল উপাদান হিসেবে কাজ করে স্থাপত্য। গণিত, বিজ্ঞান ও শৈল্পিক ভাবনার সমন্বয়ে ভবনের নকশা এবং নির্মাণশৈলীই হলো স্থাপত্য। এখানে শিল্প বা কলা ও প্রকৌশলেরও সংমিশ্রণ আছে। আপনি শিখবেন কীভাবে ভবনের সঠিক নকশা হাতে বা কম্পিউটার সফটওয়্যার দিয়ে আঁকতে হয়। ভবনের এবং অন্যান্য বাস্তব কাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা, নকশা ও নির্মাণ প্রক্রিয়া এ কাজের অংশ। একজন স্থাপত্য প্রকৌশলী গ্রাহকের চাহিদা, আর্থিক সামর্থ্য, শৈল্পিক দিক, আশপাশের পরিবেশ এবং তার প্রভাব বিবেচনা করে ভবনের নকশা, নির্মাণ, পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং সংস্কারে প্রকৌশল শাখার দক্ষতা প্রয়োগ করেন এখানে।

    কেন পড়বেন স্থাপত্য
    বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য অধ্যয়নের জন্য আপনাকে কঠোর পরিশ্রমী, সৃজনশীল ও যৌক্তিক হতে হবে। আপনার যদি একটি শৈল্পিক সত্তা থাকে তাহলে সাবজেক্ট হিসেবে স্থাপত্য প্রকৌশল আপনার জন্য উজ্জ্বল ক্যারিয়ার নিয়ে আসবে। আপনার সৃজনশীল কাজের মধ্য দিয়ে হয়ে উঠবেন একজন দেশসেরা স্থপতি। আমাদের জাতীয় সংসদ ভবন, পুরান ঢাকার লালবাগ কেল্লা, বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ কিংবা দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দির—এ স্থাপনাগুলো যদি আপনার মনে নতুন চিন্তার খোড়াক জোগায় তাহলে বলব প্রাথমিকভাবে আপনি স্থাপত্য পড়ার জন্য তৈরি আছেন। বিশ্বখ্যাত বাংলাদেশী আমেরিকান স্থপতি ও পুরকৌশলী ফজলুর রহমান খানের নাম আমরা সবাই জানি। তাকে বিংশ শতকের শ্রেষ্ঠ প্রকৌশলীদের মধ্যে অন্যতম বলা হয়। তিনি পৃথিবীর অন্যতম আকাশচুম্বী উচ্চ ভবন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর সিয়ার্স টাওয়ারের (বর্তমানে উইলিস টাওয়ার) নকশা ও গঠনকৌশল প্রণয়ন করেন। নব্বইয়ের দশকের শেষ ভাগ পর্যন্ত এটি ছিল বিশ্বের উচ্চতম ভবন। আধুনিকতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নগরায়ণ ও শিল্পায়ন। মানুষের আর্থিক সামর্থ্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তারা নতুন নতুন স্থাপনা গড়ে তুলছে। আগে বাণিজ্যিকভাবে এসব ভবন নির্মাণ হলেও এখন কাজের ব্যাপ্তি বেড়েছে বহুগুণ। শুধু স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মন্দির কিংবা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন নান্দনিক অবকাঠামোই নয় বর্তমানে ব্যক্তি উদ্যোগে বিলাসবহুল ভবন তৈরির প্রবণতা বেড়েছে। নান্দনিক ও আড়ম্বরপূর্ণ জীবনকে বেছে নিয়েছে আধুনিক এ সমাজ। ফলে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় একটি ক্যারিয়ার অপেক্ষা করছে স্থাপত্যে ডিগ্রিধারীদের জন্য।

    ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি
    স্থাপত্যে ভর্তিতে শৈল্পিক ক্ষমতা এবং গাণিতিক দক্ষতা উভয়ই বিবেচনা করা হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে পরীক্ষা পদ্ধতির ভিন্নতা রয়েছে। স্থাপত্যের মাদার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পরীক্ষা পদ্ধতি সবাই অনুসরণ করলেও প্রতি বছর কিছু পরিবর্তন আসছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় গণিত, পদার্থ, রসায়ন ও ইংরেজি বিষয়ে জিপিএ ৫ পেলে আবেদন করা যাবে। এবং ৬০০ নম্বরের তত্ত্বীয় ও ৪০০ নম্বরের মুক্তহস্ত অঙ্কন পরীক্ষা দিতে হয়। মোট ১ হাজার নম্বরের পরীক্ষা। বুয়েটের পর দ্বিতীয় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্থাপত্য বিভাগ চালু করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। তারা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের গণিত, পদার্থ, রসায়ন ও ইংরেজি বিষয়ে লিখিত মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষা নেন। নেই মুক্তহস্ত অঙ্কন পরীক্ষা। এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে পরীক্ষা পদ্ধতির ভিন্নতা রয়েছে, যা প্রতি বছর সার্কুলারে দেখা যাবে। তবে অধিকাংশ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বুয়েটের পরীক্ষা পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করে। তাই বুয়েটে পরীক্ষা পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রস্তুতি নিলে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি হয়ে যাবে।

    ক্যারিয়ার
    স্থপতিরা ফ্রিল্যান্স কাজ করতে পারেন অথবা সরকারি-বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরির বড় ক্ষেত্র রয়েছে। যেখানে নির্মাণ কোম্পানি এবং বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী তাদের জন্য কাজ করবেন। বাংলাদেশে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই স্থাপত্য বিভাগ চালু হয়েছে, সেখানে দক্ষ শিক্ষকের প্রয়োজন। সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ আছে। তবে স্নাতক পর্যায়ের অবশ্যই ভালো ফলাফল থাকতে হবে। যদিও স্থাপত্যবিদ্যার প্রাথমিক লক্ষ্য পেশাদার স্থপতি তৈরি করা। কিন্তু ব্যতিক্রম উদাহরণ আছে অনেক। অনেক স্থপতিই গণমাধ্যম বা বুটিক শিল্পে ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেন। আমাদের দেশে কিংবা সারা বিশ্বেই বহু আলোকচিত্রী, চিত্রশিল্পী, ভাস্কর, লেখক, চলচ্চিত্র পরিচালক বা অভিনয়শিল্পী স্থাপত্যে পড়ালেখা করেছেন। কারণ স্থাপত্যে অনেক তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক বিষয় শেখানো হয়, যা একজন শিক্ষার্থীকে ক্রিটিক্যাল থিংকিং শেখায়। আর্কিটেকচার ডিগ্রিধারীদের জন্য সাধারণ কিছু পেশার মধ্যে রয়েছে নগর পরিকল্পনাবিদ, আরবান ডিজাইনার, ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেক, নির্মাণ ব্যবস্থাপক, সার্ভেয়ার, ইন্টেরিয়র ডিজাইনার, ফার্নিচার ডিজাইনার, প্রডাকশন ডিজাইনার, আর্ট ডিরেক্টর, গ্রাফিক ডিজাইন। স্থাপত্যচর্চার পাশাপাশি স্থাপত্য তথ্যচিত্র বা ফটোগ্রাফি, স্থাপত্য পেইন্টিংয়ের মতো আরো নানা পেশা রয়েছে। এছাড়া সরকারের কিছু প্রতিষ্ঠান আছে, যেমন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), এডিএ, সিডিএ, আরডিএ, একইভাবে সিটি করপোরেশন, হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি ফ্রিল্যান্স কাজ করার সুযোগ তো আছেই।

    লেখাটি দৈনিক বণিকবার্তা থেকে সংগৃহীত

    সর্বশেষ

    পড়েছেন তো?

    Stay in touch

    To be updated with all the latest news, offers and special announcements.