টেকভিশন ডেস্ক: চতুর্থ শিল্প-বিপ্লব উপযোগী প্রযুক্তি-নির্ভর দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্যে আজ ২৪ আগস্ট ২০২০ চতুর্থ শিল্প বিপ্লব উপযোগী ৫০টি পাইলট প্রকল্প উদ্বোধন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, পিএএ এবং একই সঙ্গে অকুপেশন-ভিত্তিক রেডিনেস এনালাইসিস ও কম্পিট্যান্সি স্ট্যান্ডার্ড এবং কারিকুলাম তৈরি বিষয়ক এক অনলাইন কর্মশালার উদ্বোধন করা হয়।
উক্ত অনলাইন কর্মশালাটি টেমাসেক ফাউন্ডেশন ও সিঙ্গাপুর পলিটেকনিক ইন্টারন্যাশনাল-এর সহযোগিতায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন এবং ইউএনডিপি এর সহায়তায় পরিচালিত অ্যাস্পায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রোগ্রাম আয়োজন করেছে। এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) জনাব ড. মোঃ আব্দুল মান্নান, পিএএ এর সভাপতিত্বে ও এটুআই-এর হেড অব ফিউচার অব ওয়ার্ক ল্যাব জনাব আসাদ-উজ্-জামান ‘চতুর্থ শিল্প-বিপ্লব উপযোগী প্রযুক্তি নির্ভর ৫০টি পাইলট প্রজেক্ট’ এর ধারণা বিষয়ক একটি উপস্থাপনা প্রদান করেন। অনলাইন কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন সিঙ্গাপুর পলিটেকনিক ইন্টারন্যাশনাল-এর জেনারেল ম্যানেজার এন্ড্রুও টান।
এন এম জিয়াউল আলম, পিএএ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই আমরা চতুর্থ শিল্প-বিপ্লবের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। সব উদ্যোগগুলোর সাথে চতুর্থ শিল্প-বিপ্লবের উপাদানসমূহ সমন্বয় করে বিভিন্ন সেক্টরের দক্ষতা উন্নয়নে আমরা বর্তমানে কাজ শুরু করেছি। ভবিষ্যতে সকল সেক্টরে প্রযুক্তি-নির্ভর দক্ষ জনশক্তি বৃদ্ধি করা এখন আমাদের অন্যতম লক্ষ্য।
এন্ড্রুও টান বলেন, গত চার দশক ধরে বাংলাদেশ এবং সিংগাপুরের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে। যা ১৯৭২ সালে কুটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে শুরু হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে এ সম্পর্ক সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে আরো গতিশীল হয়েছে, এ প্রোগ্রাম তার অন্যতম উদাহরণ আমরা এ যাত্রা অব্যাহত রাখতে চাই।
সভাপতির বক্তব্যে এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক জনাব ড. মোঃ আব্দুল মান্নান, পিএএ বলেন, চতুর্থ শিল্প-বিপ্লবের ফলে বাংলাদেশে অনেক সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং সে সুযোগগুলো কাজে লাগাতে হবে। এজন্য আমাদের অকুপেশন-ভিত্তিক রেডিনেস এ্যানালাইসিস করা প্রয়োজন এবং কম্পিটেন্সি স্ট্যান্ডার্ট তৈরি করতে হবে। আমরা সিঙ্গাপুর ভিত্তিক টেমাসেক ফাউন্ডেশন ও সিঙ্গাপুর পলিটেকনিক এর সহযোগিতায় ৫০টি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এর মধ্যে ১৬টি প্রকল্প সরকারি দপ্তর (মন্ত্রণালয়/অধিদপ্তর), ২৭টি প্রকল্প শিল্প প্রতিষ্ঠান/এসোসিয়েশন এবং ২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ৭টি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। এ প্রজেক্টসমূহ আমরা বাস্তবায়ন করতে চাই এবং দেখাতে চাই চতুর্থ শিল্প-বিপ্লব মোকাবেলায় আমরা দক্ষতা অর্জন করেছি এবং আমাদের দেখে অন্যরা অনুপ্রাণিত হবেন, উৎসাহিত হবেন।
উল্লেখ্য, তারুণ্যের শক্তি’কে যথাযথ ভাবে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে ‘জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতিমালা ২০১১’ ও ‘জাতীয় যুব নীতিমালা ২০১৭’ এর আলোকে এটুআই থেকে নানাবিধ দক্ষতা উন্নয়নমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন সেক্টরে চতুর্থ শিল্প-বিপ্লব উপযোগী দক্ষতা উন্নয়ন এর মধ্যে অন্যতম।
বাংলাদেশের শ্রমশক্তির বাজারে চতুর্থ শিল্প-বিপ্লবের প্রভাব নিরূপণের লক্ষ্যে এটুআই এর উদ্যোগে বাংলাদেশে পাঁচটি সেক্টরে (ফার্নিচার সেক্টর, এগ্রো ফুড সেক্টর, বস্ত্র ও তৈরি পোশাক সেক্টর, ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি সেক্টর এবং লেদার ও ফুটওয়্যার সেক্টর) একটি গবেষণা পরিচালিত হয়। পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায় যে, ২০৪১ সালের মধ্যে ফার্নিচার সেক্টরে ৫৫% (১৪,০০,০০০ লক্ষ), এগ্রো ফুড সেক্টরে ৪০% (১০,০০,০০০ লক্ষ), বস্ত্র ও তৈরি পোশাক সেক্টরে ৬০% (২৭,০০,০০০ লক্ষ), ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি সেক্টরে ২০% (৬,০০,০০০ লক্ষ) এবং লেদার ও ফুটওয়্যার সেক্টরে ৩৫% (৪,০০,০০০ লক্ষ) লোক চাকুরি হারাবে এবং একই সঙ্গে নতুন নতুন পেশায় চাকুরির সুযোগ তৈরি হবে। এ গবেষণার আলোকে বাংলাদেশ সরকারের প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষ জনবল উন্নয়নের ক্ষেত্রে নতুন নতুন ট্রেড/পেশায় এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।
এ লক্ষ্যে এটুআই সিঙ্গাপুর ভিত্তিক টেমাসেক ফাউন্ডেশন ও সিঙ্গাপুর পলিটেকনিক এর কারিগরি সহযোগিতায় অটোমেশনের ফলে সৃষ্ট কর্মসংস্থানের চাহিদা অনুযায়ী এগ্রো ফুড সেক্টর, বস্ত্র ও তৈরি পোশাক সেক্টর, ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি সেক্টর ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে বাংলাদেশে নতুন নতুন পেশায় কারিকুলাম ও মাস্টার ট্রেইনার তৈরি, চতুর্থ শিল্প-বিপ্লব ভিত্তিক দক্ষতা উন্নয়ন পলিসি ফ্রেমওয়ার্ক ও স্ট্র্যাটেজি তৈরিসহ দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ট্রেডভিত্তিক ৫০টি প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নের সর্বমোট ৭টি ধাপের মধ্যে ১ম ধাপ (দক্ষতা উন্নয়ন নীতি-নির্ধারকগণের জন্য সিঙ্গাপুরে কর্মশালা ও ২য় ধাপ (দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নকারীগণের জন্য বাংলাদেশে কর্মশালা) সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে ৩য় ধাপে (দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নকারীগণের জন্য অকুপেশন ভিত্তিক রেডিনেস এনালাইসিস ও কম্পিট্যান্সি স্ট্যান্ডার্ড তৈরি) ৫ দিন ব্যাপী প্রশিক্ষণ/কর্মশালা অনলাইনে আয়োজন করা হয়েছে।
টেক্সটাইল অ্যান্ড ফ্যাশন ইন্ড্রাস্ট্রি ট্রেনিং সেন্টার-এর প্রধান নির্বাহি ডোরেন টান, বাংলাদেশ টেকনিক্যাল এডুকেশন বোর্ড (বিটিইবি)-এর উপ-পরিচালক (কোর্স অ্যাক্রিডেশন) এস এম শাহজাহান এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তাগণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।