আমরা যে চকলেট এখন খাই তা কিন্তু অনেক আগ থেকেই মানুষের খুব পছন্দের খাবার। যে কোকোদানা থেকে চকলেট তৈরি করা হয় তার জন্ম মূলত লাতিন আমেরিকায়৷ ১৭০০-১৮০০ শতকে এটি প্রথম ইউরোপে আসে পানযোগ্য চকলেট হিসেবে৷ এরপর ১৯ ও ২০ শতকে কোকো প্রথম চকলেট আকারে বানানো শুরু হয়৷
কিন্তু চকলেটের জন্ম তারও অনেক আগে। চকলেট ব্যবহারের সবচেয়ে পুরনো লিখিত প্রমাণ পাওয়া যায় ১১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে। বেশিরভাগ মেসো-আমেরিকান লোকজনই চকলেট পানীয় তৈরি করত, যার মধ্যে আছে মায়ান ও আজটেকরা। তারা xocolātl নামের একটি পানীয় তৈরি করেছিল, নাহুয়াতি ভাষায় যে শব্দটির মানে দাঁড়ায় ‘তেতো পানীয়’।
কেননা যে কোকো গাছের বীজ থেকে চকলেট তৈরি করা হয় তার স্বাদ অত্যন্ত তেতো। তবে আমরা চকলেট খাওয়ার সময় সেটি তেতো লাগেনা কারণ কোকোর সেই বীজগুলোকে খুব ভালোভাবে প্রক্রিয়াজাত করেই আমাদের খাবার উপযোগী মজার মজার চকলেট তৈরি করা হয় এখন।
কোকো থেকে চকলেট :
ক্যাকাও গাছে হয় ক্যাকাও বীজ বা কোকো বীজ। কোকোর এই বীজ বা দানাই হচ্ছে চকলেট তৈরির মূল উপাদান। ক্যাকাও গাছে প্রচুর পরিমাণে ফুল ফোটে। সে ফুলগুলোর পরাগায়ন ঘটে ছোট ছোট বিভিন্ন কীটপতঙ্গ আর বাদুড়ের মাধ্যমে। পরাগায়নের পর এ ফুল থেকে সৃষ্টি হয় বীজপত্র বা বীজের খোসা।
এতে সময় লাগে প্রায় ২ বছর। এ খোসাগুলো পেকে হলদে-কমলা রং ধারণ করলে সেগুলো গাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। খোসাগুলো ভাঙার পর ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে সাদা রঙের কোকো দানা। একেকটা খোসার ভেতর থেকে এরকম প্রায় ৫০টি করে কোকো দানা বা বীজ পাওয়া যায়। দক্ষ শ্রমিকদের দ্বারা কোকোর এ বীজগুলো সংগ্রহের পর সেগুলো বড় বড় গামলাসদৃশ পাত্রে করে শুকানো হয়। এতে সময় লাগে প্রায় ২-৩ দিন।
শুকানোর পর বীজগুলো ব্যাগে ভরে প্রক্রিয়াজাত করার জন্য পাঠানো হয় বিভিন্ন কারখানাতে। কারখানায় এ বীজগুলো থেকে খোসা ছাড়ানো হয় এবং সেগুলো আবার শুকানো হয়। শুকানোর পর বীজগুলো একটি মেশিনে ঢুকিয়ে এমনভাবে চাপ দেয়া হয় যে সেগুলো পেস্ট বা আঠালো তরলে পরিণত হয়। এই পেস্ট সংগ্রহ করে অন্য একটি মেশিনে ঢুকিয়ে আরও বেশি চাপ প্রয়োগ করা হয়। ফলে মেশিনের একদিক দিয়ে বের হয়ে আসে কোকো বাটার এবং অন্য দিক দিয়ে বেরিয়ে আসে কোকো পাউডার। এ কোকো পাউডারের সাথে কোকো বাটারসহ আরও হরেক রকম উপাদান মিশিয়েই তৈরি করা হয় ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের মজার মজার চকলেট।