মহামারী করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী লড়াইয়ের সমর্থনে দুটি উদ্যোগের কথা ঘোষণা করেছে হোয়াটসঅ্যাপ। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন এবং ইউএনডিপির সঙ্গে অংশীদারিত্বে ‘হোয়াটসঅ্যাপ করোনভাইরাস ইনফরমেশন হাব’ -এর বিশ্বব্যাপী উদ্বোধন এবং পোয়েন্টার ইনস্টিটিউটের আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট-চেকিং নেটওয়ার্ককে (আইএফসিএন) এক মিলিয়ন ডলার অনুদান প্রদান।
হোয়াটসঅ্যাপ.কম/করোনাভাইরাস-এ হোয়াটসঅ্যাপ করোনাভাইরাস ইনফরমেশন হাব চালু করা হয়েছে। এই ওয়েবসাইটে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগকারী সকল স্বাস্থ্যকর্মী, শিক্ষাবিদ, কমিউনিটি লিডার, এনজিও, স্থানীয় সরকার এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জন্য সহজ ও কার্যকর দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও এই সাইটটি বিশ্বব্যাপী হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের সাধারণ টিপস এবং তথ্য প্রদান করবে যাতে গুজব ছড়ানো কমে এবং ব্যবহারকারীরা সঠিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য পায়।
মানুষ যখন আলাদা বা দূরে থাকে হোয়াটসঅ্যাপ তখন তাদের যোগাযোগের একটি সহজ, নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। ছোট গ্রুপগুলো কীভাবে হোয়াটসঅ্যাপের ফিচারগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারবে এই নীতিমালাগুলো তারই নির্দেশিকা। স্থানীয় সহায়তায় ইউএনডিপি এই গ্রুপগুলোতে এই নির্দেশিকা বিতরণ করবে। এর পাশাপাশি হোয়াটসঅ্যাপ বিশ্বজুড়ে সরাসরি ব্যবহারের জন্য মেসেজিং হটলাইন সেবা দিতে ইউনিসেফ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যার সঙ্গে কাজ করছে। এই হটলাইনগুলো হোয়াটসঅ্যাপ করোনাভাইরাস ইনফরমেশন হাবে তালিকাভুক্ত করা হবে।
এপর্যন্ত হোয়াটসঅ্যাপ সিঙ্গাপুর, ইসরায়েল, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল ও ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে মেসেজের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের কাছে সঠিক তথ্য প্রদান করতে বেশ কয়েকটি জাতীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং এনজিওর সঙ্গে কাজ করেছে। এই হাবটি সবসময় সর্বশেষ তথ্য দ্বারা আপডেট করে রাখা হবে।
আইএফসিএনকে দেয়া হোয়াটসঅ্যাপের ১ মিলিয়ন ডলারের মাধ্যমে # করোনাভাইরাসফ্যাক্টস অ্যালায়েন্সের ফ্যাক্ট-চেকিং-এর কাজ চলবে যা কমপক্ষে ৪৫ টি দেশের ১০০ টিরও বেশি স্থানীয় সংস্থায় পৌঁছাবে। গত এক বছরে হোয়াটসঅ্যাপ সরাসরি ১২টিরও বেশি ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থাকে সরাসরি হোয়াটসঅ্যাপে সংযুক্ত করতে কাজ করেছে যাতে তারা ক্রাউডসোর্স করতে পারে এবং হোয়াটসঅ্যাপ ও এসএমএসের মাধ্যমে ছড়ানো গুজবগুলোকে রিপোর্ট করতে পারে। এই অনুদানের অর্থে হোয়াটসঅ্যাপ বিজনেস এপিআই সহ হোয়াটসঅ্যাপ বিজনেসে উন্নত ফিচারগুলো কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এই আইএফসিএন ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থাগুলোর সম্প্রসারণ স্থানীয় কমিউনিটিকে সচেতন ও সম্ভাব্য ক্ষতিকারক গুজবে করণীয় কী তা বুঝতে সহায়তা করবে।
উইল ক্যাথকার্ট, হেড অব হোয়াটসঅ্যাপ বলেন, “আমরা জানি হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীরা এই বিপর্যয়ের সময় আরও বেশি করে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করছেন যাতে বন্ধু ও প্রিয়জনদের সঙ্গে, ডাক্তাররা রোগীর সঙ্গে কিংবা শিক্ষক তার ছাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারেন। আর তাই আমরা একটি সহজ রিসোর্স নিয়ে এসেছি যা তাদের পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত থাকতে সহায়তা করবে।”
“আমরা পয়েন্টার ইন্সটিটিউটকে হোয়াটসঅ্যাপে ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা বৃদ্ধিতে এবং গুজব ছড়ানো বন্ধের মাধ্যমে জীবন বাঁচানোতে সাহায্য করতে পেরেও আনন্দিত। এছাড়াও আমরা পুরো বিশ্বের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সরাসরি কাজ চালিয়ে যাব যাতে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে আমরা তাদের আপডেট দিতে পারি।”
বেবারস অরসেক, পরিচালক, আইএফসিএন বলেন, “হোয়াটসঅ্যাপের এই সময়োপোযোগী অনুদান করোনা ভাইরাসফ্যাক্টস অ্যালায়েন্স দ্বারা প্রকাশিত ফ্যাক্ট-চেকগুলোকে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে সহায়তা করবে এবং ফলস্বরূপ, মানুষকে অনেকরকম তথ্যের ভীড়ে লোককথা থেকে সঠিক তথ্যটি বাছাই করতে সহায়তা করবে যাকে ডাব্লিউএইচও ‘ইনফোডেমিক’ বলছে।”
ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাক্ট-চেকিং নেটওয়ার্কও বিভিন্ন ফর্ম্যাটে হোয়াটসঅ্যাপে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত গুজবগুলোকে বোঝার উপায় আবিষ্কার করার জন্য এবং ফ্যাক্ট-চেকারদের জন্য একটি টুল তৈরি করার ব্যাপারে আশাবাদী যা গুজব সনাক্ত করবে এবং তা মেসেজিং অ্যাপ থেকে সরিয়ে দিবে।
আকিম স্টেইনার, প্রশাসক, ইউনাইটেড ন্যাশনস ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনডিপি) বলেন, “বিশ্বজুড়ে স্থানীয় কমিউনিটির কাছে কভিড -১৯ সম্পর্কে সর্বশেষ তথ্য পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে এই ভাইরাসের বিস্তারকে প্রতিরোধ করার প্রচেষ্টা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি সংবেদনশীল কাজ। হোয়াটসঅ্যাপের মতো বেসরকারী সংস্থাগুলোর অংশীদারিত্ব বিশ্বের কোটি কোটি ব্যবহারকারীদের কাছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পাওয়া সঠিক ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পৌঁছে দিতে সহায়তা করবে।”