রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার দেশব্যাপী বিভিন্ন ডিজিটাল কার্যক্রমের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। এ লক্ষ্যে আইসিটি বিভাগ ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বাস্তবায়নাধীন এবং ইউএনডিপির সহায়তায় পরিচালিত এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রোগ্রাম আইসিটিনির্ভর নাগরিক সেবা সহজিকরণে নানা উদ্ভাবনী উদ্যোগে সহযোগিতা প্রদান করে আসছে। ২০২০ সালে এটুআইর বিভিন্ন উদ্ভাবনী উদ্যোগ নিয়ে প্রতিবেদনটি লিখেছেন- আদনান ফয়সল (পর্ব-১)
কোভিড-১৯ সময়কালীন উদ্যোগসমূহ
১. বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঘরে বসে চিকিতসা সেবা প্রাপ্তি, সরকারি ত্রাণ প্রাপ্তি কিংবা অনলাইন কেনাকাটার লক্ষ্যে জাতীয় হেল্পলাইন ‘৩৩৩’ এর মাধ্যমে নাগরিকরা বিভিন্ন সেবা পেয়েছেন। ৩৩৩ জাতীয় হেল্পলাইনের মাধ্যমে ৪০ লক্ষের অধিক নাগরিককে করোনা সম্পর্কিত সেবা প্রদান করা হয়েছে। এই হেল্পলাইনে আগত ১৮ লক্ষেরও অধিক ত্রাণ বিষয়ক নাগরিক কলের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে প্রায় ৪.০৭ লক্ষ নাগরিকের তথ্য ত্রাণ সহায়তার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। প্রায় ৪.৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক ডাক্তার ভলান্টিয়ার ডক্টরস পুল বিডি ব্যবহার করে ৩৩৩ জাতীয় হেল্পলাইনের মাধ্যমে করোনা বিষয়ে নাগরিকগণকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছেন। নাগরিকগণকে ৩৩৩ নম্বরের মাধ্যমে ফোনে নিত্যপণ্য সেবা প্রদান কার্যক্রম চালু করা হয়। এ পর্যন্ত এই হেল্পলাইনে ৪ লক্ষ ৫৮ হাজারেরও অধিক নিত্যপণ্যের অর্ডার গ্রহণ করা হয়েছে, যার মধ্যে ৬০% পণ্য সরবরাহ করা হয়েছে।

২. কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের শুরুতেই নাগরিকদের জন্য করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত যে কোনো প্রয়োজনীয় পরামর্শ, করোনা সম্পর্কিত সকল সেবার হালনাগাদ তথ্যের জন্য ‘করোনা পোর্টাল’ (www.corona.gov.bd) চালু করা হয়েছে। এতে করোনা বিষয়ক অগ্রগতি ও নির্দেশনা, ম্যাপে জেলাভিত্তিক করোনা হট জোন, এআই ভিত্তিক চ্যাট বট এবং হটলাইন, স্বাস্থ্য বাতায়ন, আইইডিসিআর-এর হেল্পলাইনসহ জাতীয় হেল্পলাইনের সকল তথ্য ও সাড়ে ৪ হাজারেরও অধিক কন্টেন্ট রয়েছে। এ পর্যন্ত ১ কোটি ৩৪ লক্ষেরও অধিক নাগরিক তথ্যের জন্য এই পোর্টালে ভিজিট করেছেন।
৩. সৌদি আরব ও বাহরাইন প্রবাসী বাংলাদেশীদের জরুরি স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে চালু করা হয় ‘প্রবাস বন্ধু কলসেন্টার’। ২২ লাখ সৌদি প্রবাসীর পাশাপাশি ২ লাখ বাহরাইন প্রবাসী বাংলাদেশীদের স্বাস্থ্যসেবায় চালু করা হয় এই কলসেন্টার। গত ২৯ এপ্রিল ২০২০ সৌদিআরব এবং এবং ২০ মে ২০২০ বাহরাইনে বাংলাদেশ দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আনার্স কল্যাণ বোর্ড এবং এটুআই কর্তৃক যৌথভাবে চালু করা হয় প্রবাস বন্ধু কলসেন্টার। এই কলসেন্টারের মাধ্যমে সৌদিআরব ও বাহরাইনে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের জরুরি স্বাস্থ্য পরামর্শ প্রদান করেন প্রবাসী বাংলাদেশী ডাক্তারগণ। এই কলসেন্টারের মাধ্যমে সৌদিআরবে ৩ হাজারের অধিক এবং বাহরাইনে ১ হাজারের অধিক প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিক এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মাধ্যমে স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।

৪. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উদ্যোগে এবং এটুআইর সহযোগিতায় কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষিতে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সারাদেশের চিকিতসা প্রত্যাশী মানুষকে ভিডিও ও অডিও কলের মাধ্যমে যেকোন চিকিতসা বিষয়ক পরামর্শ প্রদানের লক্ষ্যে চালু করা হয় ‘বিএসএমএমইউ-এটুআই স্পেশালাইজড টেলি-হেলথ সেন্টার’ (০৯৬১১৬৭৭৭৭৭)। এ সেন্টারটি গত ১৩ মে ২০২০ বিএসএমএমইউ এবং আইসিটি বিভাগের এটুআই যৌথভাবে উদ্বোধন করে। এই টেলি-হেলথ সেন্টারে প্রতিদিন ২৮ জন ডাক্তার সেবা প্রদান করছেন। ইতোমধ্যেই ৬১ হাজারেরও অধিক নাগরিককে সেবা প্রদান করা হয়েছে।
৫. করোনা সংকটের শুরুর দিকে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহকে ডিজিটাল ম্যাপিংয়ের আওতায় নিয়ে আসার জন্য এটুআই এবং গ্রামীণফোনের যৌথ উদ্যোগে ‘বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জ’ ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হয়েছে। দেশব্যাপী ডিজিটাল ম্যাপিংয়ের লক্ষ্যে এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে তরুণদের অভাবনীয় অংশগ্রহণে এক লাখ ১০ হাজার লোকেশন গুগল ম্যাপ ও ওপেন স্ট্রিট ম্যাপে যুক্ত করা হয়েছে। এই ক্যাম্পেইন গত ২১ জুন ২০২০ এক অনলাইন সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
৬. করোনা মোকাবেলায় সহায়তা করার লক্ষ্যে গত ২ এপ্রিল ২০২০ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, আইসিটি বিভাগ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং এটুআই সহযোগিতায় টেলিকম অপারেটর কোম্পানি রবি একটি ‘ডাটা এনালিটিক্স সিস্টেম’ গঠন করে, যা জনস্বাস্থ্যের জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় কার্যকর ভূমিকা রাখে। রবির এনালিটিক্স টিম ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ক্রাউডসোর্স থেকে ডাটা সংগ্রহ করে এনালিটিক্যাল সলিউশনটি তৈরি করে। ক্রাউডসোর্সিংসহ আইভিআর, ইউএসএসডি এবং মাই রবি ও মাই এয়ারটেল অ্যাপ থেকে ডাটা সংগ্রহ করায় রবির এনালিস্টরা বিভিন্ন উদ্ভাবনী ডাটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন নিশ্চিত করতে পারেন এই তথ্যভান্ডার থেকে সরকার সহজেই তাদের প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী গ্রহণ করতে পেরেছে। ডাটা এনালিটিক্স সলিউশনের তৈরি রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে কোন নির্দিষ্ট এলাকায় রোগটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা নির্ণয়ের মাধ্যমে সরকার পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পেরেছে।

৭. কোভিড-১৯ চিকিতসায় এটুআইর ‘ইনোভেশন ল্যাব’ (আইল্যাব) ৩টি ভেন্টিলেটর তৈরি করেছে। ১৫ অক্টোবর ২০২০ একটি ভেন্টিলেটর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে স্থাপন করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক খ্যাতনামা মেডিকেল ইকুইপমেন্ট উতপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মেডট্রনিকের পেটেন্ট, সোর্স কোড, ডিজাইন, হার্ডওয়্যার দিয়ে বাংলাদেশকে সহায়তা করছে। এ ছাড়াও এটুআই-আইল্যাবের সহায়তায় ওয়ালটন, মাইওয়ান, মিনিস্টার ফ্রিজ, মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান দেশীয় ভেন্টিলেটর তৈরিতে কাজ করেছে।
৮. করোনা আক্রান্ত রোগীদের স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শ, রোগীর মেডিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট, কাউন্সেলিং, ফলোআপ, কেয়ার গিভার কাউন্সেলিং, বিশেষজ্ঞ চিকিতসকের পরামর্শ দেওয়াসহ বিভিন্ন সহযোগিতামূলক সেবা যেমন- জরুরি ভিত্তিতে অ্যাম্বুলেন্স, হাসপাতালে ভর্তি, খাদ্য ও জরুরি ওষুধ সহায়তা, মরদেহ সতকার করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও এটুআইর সরাসরি পরিকল্পনা ও তত্ত্ববধায়নে কোভিড-১৯ টেলিহেলথ ইউনিট কাজ করে যাচ্ছে। আইসিটি বিভাগের সহযোগিতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ই-হেলথ্ সার্ভিস কোঅর্ডিনেশন ইউনিট তৈরি করেছে। ই-হেলথ্ সার্ভিস কোঅর্ডিনেশন ইউনিটের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে তিন ধাপে মোট ১ লাখ ৫০ হাজার রোগীকে সেবা প্রদান করা হয়েছে। গত ১৩ জুন ২০২০ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ লক্ষ ১৩ হাজারেরও অধিক রোগীকে সেবা প্রদান করা হয়েছে।
৯. প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধনকৃত আমার সরকার (MyGov) প্ল্যাটফর্মের বিভিন্ন সেবা যেমন: ই-নথি, একসেবা, মুক্তপাঠ প্রভৃতি উদ্যোগের সমন্বয়ে প্রয়োজনীয় সংযোজন, পরিবর্তন ও পরিমার্জন করে ‘ভার্চুয়াল কোর্ট’ সিস্টেম (MyCourt) প্ল্যাটফর্মটির কার্যক্রম ৮৭টি নিম্ন আদালতে শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ বিচার বিভাগের জন্য তৈরিকৃত এই প্ল্যাটফর্মে একইসঙ্গে শুনানি কার্যক্রমকে পরিচালনা করার জন্য একটি সুরক্ষিত ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম সংযুক্ত করা হয়েছে। এ কার্যক্রমের আওতায় এ পর্যন্ত ২৭ হাজারের অধিক জামিন আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৬ হাজারেরও অধিক জামিন শুনানির তারিখ নির্ধারণ এবং ১১ হাজারের অধিক ভার্চুয়াল শুনানি সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রায় ৯,০০০ আইনজীবী এই প্লাটফর্মে নিবন্ধিত হয়েছেন।

১০. ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম মুক্তপাঠে করোনা বিষয়ক ১০টি ই-লার্নিং কোর্স যুক্ত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ৪ লক্ষেরও অধিক প্রশিক্ষণার্থী অনলাইন কোর্সে অংশগ্রহণ করেছেন এবং প্রায় ২.২২ লক্ষ প্রশিক্ষণার্থী কোর্স সম্পন্ন করেছেন। উক্ত কোর্সগুলোতে ৬৩ হাজারেরও অধিক ডাক্তার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন এবং ৩৭ হাজারেরও অধিক জন প্রশিক্ষণ শেষে সনদ গ্রহণ করেছেন। প্রশিক্ষণার্থীগণ হচ্ছে ডাক্তার, স্বেচ্ছাসেবক, নার্স, বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মী, ফার্মাসিস্ট যাদেরকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হতে সনদ প্রদান করা হচ্ছে।
১১. করোনা প্রেক্ষাপটে দেশব্যাপী লকডাউনে শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমে ক্ষতি লাঘবে আইসিটি এবং এটুআইর সহযোগিতায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, মাদ্রাসা এবং কারিগরি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করা হয়েছে, যা সংসদ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে দেশব্যাপী সম্প্রচার করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত, মোট অনলাইন ক্লাস প্রচারিত হয়েছে ৫,৬৬৮টি এবং আপদকালীন সময়ে শিক্ষা কার্যক্রমে ৫,০৮৬ জনেরও অধিক শিক্ষক যুক্ত রয়েছেন। এই ডিজিটাল কনটেন্টগুলো অনলাইনে প্রায় ৪ কোটি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।
১২. বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের নিয়মিত শ্রেণি কার্যক্রম এবং সরকারি-বেসরকারি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসমূহের নিয়মিত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ডিজিটাল মাধ্যমে কার্যকরী ও সহজ উপায়ে চলমান রাখতে ‘ভার্চুয়াল ক্লাস’ প্ল্যাটফর্ম (www.virtualclass.gov.bd) চালু করা হয়েছে। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে লাইভ ক্লাস বা ট্রেনিং পরিচালনা, এডুকেশনাল কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট, মূল্যায়ন বা অ্যাসেসমেন্ট টুলস, মনিটরিং এবং সমন্বয় করার প্রযুক্তি যুক্ত থাকছে। এ পর্যন্ত এই সিস্টেমটি ব্যবহার করে ২৫০টিরও অধিক অনলাইন ক্লাস সম্পন্ন হয়েছে যাতে ৫ হাজারেরও অধিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী যুক্ত ছিল।

১৩. যাকাত কিংবা আর্থিক অনুদান যেকোনো সময় বা স্থান হতে সহজে যেকোনো ব্যাংকিং চ্যানেলের সহযোগিতায় প্রদানের লক্ষ্যে চালু হয়েছে দেশের প্রথম ক্রাউন্ডফান্ডিং প্ল্যাটফর্ম একদেশ। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র মানুষ ও ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহকে আর্থিক সহায়তা সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সহজলভ্য করতে প্রযুক্তি নির্ভর একদেশ প্ল্যাটফর্ম চালু করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ১ মিলিয়ন ডলারের অধিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে।
১৪. করোনাকালীন সময়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মোতাবেক এটুআই ইনোভেশন ল্যাব তিন লেয়ার বিশিষ্ট ওয়াশেবল মাস্ক নিয়ে গবেষণা ও উন্নয়ন কাজ করেছে। করোনাকালীন সময়ে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড লেভেল-৩ সাপোর্ট পিপিই (পার্সোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট) নিয়ে গবেষণা ও উন্নয়ন কাজ করেছে। দেশীয় বাজারে সংকটকালীন সময়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের নিকট দেশে তৈরিকৃত প্রায় ৩ লক্ষের অধিক স্বাস্থ্যকর এবং সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে।
১৫. এটুআই এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করোনা সচেতনতায় হাউটু, ফিকশনাল এবং এনিমেশন জাতীয় মোট ১,৬১৭টি কনটেন্ট প্রস্তুত করা হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিলবোর্ড ও অন্যান্য মাধ্যমে সচেতনতামূলক কনটেন্ট প্রচার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। করোনা হেল্পলাইন নিয়ে দু’টি বেসরকারি টেলিভিশনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাক্তারদের যুক্ত করে এপ্রিল মাস থেকে টেলিভিশন প্রোগ্রাম শুরু হয়েছে, যা এখনো চলমান রয়েছে। কোভিড পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী নারী নির্যাতন ব্যাপক হারে বেড়েছে। এ প্রেক্ষিতে বিশেষ করে নারীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, নির্যাতনরোধে সকল নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং করোনা পরিস্থিতিতে নারীদের অবদানকে উৎসাহিত করতে নারী নক্ষত্র শীর্ষক একটি ভিন্নধর্মী টেলিভিশন সিরিজ প্রোগ্রাম প্রচারিত হয়েছে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল-আরটিভি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান-এসএমসি এবং এটুআইর সার্বিক তত্ত্বাবধানে এই প্রোগ্রাম নির্মিত হয়েছে।

১৬. করোনা আক্রান্ত রোগীর অবস্থানগত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ম্যাপে জোনভিত্তিক উচ্চ, নিম্ন ও নিরাপদ এলাকা (লাল, হলুদ ও সবুজ) চিহ্নিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুবিধার্থে প্রেরণ করা হয়েছে।
১৭. কোভিড-পরবর্তী সময়ে দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে সম্ভাব্য নতুন খাতের বিকাশের জন্য নীতি নির্ধারণে অবদান রাখতে ১৬টি খাতের চাকরির বাজার এবং প্রয়োজনীয় দক্ষতা সম্পর্কে একটি গবেষণা করা হয়েছে।
১৮. কোভিড-১৯ বিস্তার রোধে সারাদেশের নাগরিকেদের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে একটি স্মার্টফোন অ্যাপ করোনা ট্রেসার বিডি চালু করা হয়েছে। গত ৪ জুন অনলাইনে করোনা ট্রেসার বিডি অ্যাপটির উদ্বোধন করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। করোনা ট্রেসার বিডি অ্যাপটি ব্লুটুথ ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দুজন ব্যবহারকারীর কাছাকাছি থাকার সময় এবং ব্যবহারকারিদের অবস্থান সুরক্ষিতভাবে সংরক্ষণ করে। যখনই অন্যকোনো অ্যাপ ব্যবহারকারি একটি নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে আসবে তখনই অ্যাপ দু’টি নিজেদের মধ্যে ‘ডিজিটাল হ্যান্ডশেক’ করে প্রয়োজনীয় তথ্য সুরক্ষিতভাবে আদান-প্রদান করতে সক্ষম হয়। আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে অ্যাপটি তৈরিতে কাজ করেছে স্বাস্থ্য অধদিপ্তর, আইইডিসিআর, এটুআই, এসডিএমজিএ এবং সহজ।

১৯. করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী সুস্থ্য হওয়ার পর তাঁর প্লাজমা সংগ্রহ এবং অসুস্থ্য রোগীর চিকিতসায় এই প্লাজমা বিতরণের লক্ষ্যে গত ০৯ জুন ২০২০ সহযোদ্ধা (www.shohojoddha.com) নামক একটি প্লাজমা নেটওয়ার্ক অনলাইনে উদ্বোধন করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, এটুআই ইনোভেশন ল্যাব এবং ই-জেনারেশনের সহযোগিতায় আইসিটি বিভাগ এই প্লাজমা ডোনেশন নেটওয়ার্ক তৈরি করে। নেটওয়ার্কটি করোনা পজেটিভ থেকে সুস্থ্য হওয়া রোগীদের কাছ থেকে প্লাজমা সংগ্রহের মাধ্যমে দেশের প্রথম ডিজিটাল প্লাজমা ব্যাংক তৈরি করে স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে।
২০. করোনা আক্রান্ত রোগী এবং গর্ভবতী ও মাতৃদুগ্ধদানকারী মা ও শিশুর সেবা পৌঁছে দিতে চালু করা হয়ে কোভিড-১৯ টেলিহেলথ সেন্টার এবং মা টেলিহেলথ সেন্টার। এই সেন্টার দু’টি হতে ৯ লক্ষ ১৬ হাজারেরও অধিক বার মা ও শিশু এবং কোভিড-১৯ রোগীদের জরুরি স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়েছে।