মুজিব শতবর্ষ এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষক দিবস উপলক্ষ্যে দেশ বরেণ্য ও আন্তর্জাতিক শিক্ষকদের অংশগ্রহণে ৬ মাসব্যাপী বিভিন্ন শিক্ষা কর্মসূচির উদ্বোধন এবং ‘শিক্ষক: সংকটে নেতৃত্ব, নতুন করে ভবিষ্যতের ভাবনা’ বিষয়ক সেমিনার গত সোমবার (৫ অক্টোবর) অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়। অনলাইনে উক্ত কার্যক্রম ও সেমিনারের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। এ ছাড়াও অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব (কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ) মো: আমিনুল ইসলাম খান এবং ইউনেস্কোর বাংলাদেশ প্রতিনিধি ক্যাট্রিস কালদুন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এটুআই প্রোগ্রামের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ এ বছর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছে। এই লক্ষ্যে বিশ্বের ১০০টি দেশের শিক্ষক, শিক্ষা অফিসার, গবেষক এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে এই আয়োজন করা হয়। ৬ মাসব্যাপী এ আয়োজনে আরও থাকছে ২০টি সেমিনার, ৫টি সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং ৭টি সাইড ইভেন্টস। আগামী ২০২১ সালের ১৭ মার্চ এই আয়োজনের সমাপ্তি ঘটবে।
শিক্ষক: সংকটে নেতৃত্ব, নতুন করে ভবিষ্যতের ভাবনা এই প্রতিপাদ্যকে সামনে নিয়ে ৫ই অক্টোবর বিশ্বব্যাপী উদযাপন হয় বিশ্ব শিক্ষক দিবস। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এবং মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চয়তায় শিক্ষাব্যবস্থাকে ডিজিটাইজ করার লক্ষ্যে বৈশ্বিক শিক্ষক নেতৃবৃন্দ বেশ কিছু যুগোপযোগী পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। শিক্ষকতার অন্যতম কাজ দক্ষ ও পেশাদারিত্বমূলক জাতি গঠন করা হলেও করোনা মহামারীতে যখন শিক্ষাব্যবস্থা স্থবির, তখন আমাদের শিক্ষকরা শিক্ষাক্ষেত্রে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রেখেছেন। এই ব্যবস্থা বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। বিশ্বব্যাপী শিক্ষকরা করোনা সংকটে এভাবেই যার যার দেশের শিক্ষাখাতে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন।
অনুষ্ঠানে ডা. দীপু মনি বলেন, এ বছর আমরা আমাদের শিক্ষক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করছি। আমরা সব সময়েই চেষ্টা করেছি বিজ্ঞান ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে। একজন শিক্ষকই পারেন সকলকে শিক্ষা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে। করোনার এই বৈশ্বিক সংকট বিশ্বব্যাপী শিক্ষাখাতের আমূল পরিবর্তন করেছে। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো মার্চ এর ১৬ তারিখ থেকে বন্ধ। ইতোপূর্বে আমরা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তিতে শিক্ষকদের দক্ষ করে তুলেছি। যার ফলাফল আমরা এই সংকটের সময়ে পেয়েছি। আমরা প্রথমে আমাদের টেলিভিশন চ্যানেল এর মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছি এবং পরবর্তীতে অনলাইনেও কার্যক্রম সচল রেখেছি। আমাদের অনলাইন পোর্টাল শিক্ষক বাতায়ন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে এবং আমাদের শিক্ষকরা এই সংকটে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন তারা সংকটেও কাজ করে যেতে সক্ষম।
মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, জাতিকে উন্নত করতে শিক্ষার গুরুত্ব এবং রাষ্ট্রীয় বাজেটে শিক্ষাখাতে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তারই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বাজেটকে সর্বোচ্চ শিক্ষাবান্ধব করেছেন। আমরা দক্ষতা ও কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। কেননা উন্নয়নের জন্য কেবল সাধারণ শিক্ষাই নয়, বরং প্রয়োজন দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা। অন্যদিকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও শিক্ষাখাতে উৎপাদন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখা প্রয়োজন।
মোঃ আমিনুল ইসলাম খান বলেন, সারাবিশ্বের মত আমরাও সংকটের সময়ে বাংলাদেশে নতুন উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষাখাতের সংকট নিরসন করতে চেষ্টা করেছি। আমাদের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সমন্বয়ে আমরা কিছু অনলাইন প্লাটফর্ম তৈরি করেছি, যাতে করে করোনা সংকটেও আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা সচল থাকে। আমাদের শিক্ষকরা এ করোনার সময়ে এ সকল প্ল্যাটফর্মগুলোতে তাদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান বিতরণ করতে সক্ষম হয়েছে। এক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য করেছি সম্মিলিত শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের নতুন পথে দ্বার উন্মোচন করতে পারে।
ক্যাট্রিস কালদুন বলেন, আমরা এই সংকটে আমাদের দ্বায়বদ্ধতা থেকে শিক্ষাখাতে নতুন কিছু করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। এই ধরনের সংকটকালীন মূহুর্তে সরকার এবং শিক্ষকদের সমন্বয়ে গৃহীত কর্মসূচি শিক্ষা কার্যক্রমকে অনেক এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এই মূলনীতির মাধ্যমেই বাংলাদেশ সরকার করোনাকালীন সময়ে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে, যার ফলে বাংলাদেশে শিক্ষা কার্যক্রমে নতুন গতি তৈরি হয়েছে।