২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ১ হাজার ৭২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৩০৬ কোটি টাকা বেশি। আজ বৃহস্পতিবার (৩ জুন) জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এর আগে দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে বিশেষ বৈঠকে মন্ত্রীসভা নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন করেন। এটি দেশের ৫০ তম, আওয়ামী লীগ সরকারের ২১ তম এবং বর্তমান অর্থমন্ত্রীর ৩য় বাজেট। ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার এ বাজেট দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহত বাজেট। যা জিডিপির ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বাজেট বক্তৃতা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি খাতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে জোর দেয়া হয়েছে।
স্মার্ট ওয়াচ, কমপিউটার ও যন্ত্রাংশ উতপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি: স্মার্ট ওয়াচ, কমপিউটার ও যন্ত্রাংশ, ডাটা ক্যাবলসহ অন্যান্য খুচরা যন্ত্রাংশ উতপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। প্রস্তাবিত বাজেটে প্রিন্টার, টোনার কার্টিজ/ইনকজেট কার্টিজ, কমপিউটার প্রিন্টারের যন্ত্রাংশ, কমপিউটার, ল্যাপটপ, এআইও, ডেস্কটপ, নোটবুক, নেটপ্যাড, ট্যাব, সার্ভার, কিবোর্ড, মাউস, বারকোড/কিউআর স্ক্যানার, র্যাম, পিসিবিএ/মাদারবোর্ড, পাওয়ার ব্যাংক, রাউটার, নেটওয়ার্ক সুইচ, মডেম, নেটওয়ার্ক ডিভাইস হাব, স্পিকার, সাউন্ড সিস্টেম, ইয়ারফোন, হেডফোন, এসএসডি পোর্টেবল এসএসডি, হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ, পেনড্রাইভ, মাইক্রো এসডি কার্ড, ফ্লাশ মেমরি কার্ড, সিসিটিভি, মনিটর, প্রজেক্টর, প্রিন্টার সার্কিট বোর্ড, ইরাইটিং প্যাড, ইউএসবি ক্যাবল, ডাটা ক্যাবল, ডিজিটাল ওয়াচ উতপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়ার প্রস্তাব করেন।
করমুক্ত থাকছে আইটি নির্ভর সেবা, ফ্রিল্যান্সারদের আয়: প্রস্তাবিত বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক বেশ কয়েকটি সেবা ও ফ্রিল্যান্সারদের আয়কে করমুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই কর অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে হার্ডওয়্যার পণ্য দেশেই উতপাদন করলে শর্ত সাপেক্ষে ১০ বছর কর অব্যাহতিরও প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রস্তাবিত বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন সেবা যেমন- ক্লাউড সার্ভিস, সিস্টেম ইন্টেগ্রেশন, ই-লার্নিং, ই-বুক, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস এবং আইটি ফ্রিল্যান্সিং সেবা থেকে উদ্ভূত আয় ২০২৪ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়াও ২২টি আইটিইএস খাতকে আরও সম্প্রসারণের প্রস্তাব পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী।
ই-কমার্স বিষয়ক প্রশিক্ষণে বিশেষ গুরুত্ব: প্রস্তাবিত বাজেটে উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমে অধিকতর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ই-বাণিজ্য করবো, নিজের ব্যবসা গড়বো শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর আওতায় পাঁচ হাজার নতুন উদ্যোক্তাকে ই-কমার্স বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে প্রায় তিন হাজার ৫০০ উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ই-কমার্স বিষয়ে নতুন উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে ই-কমার্স বিষয়ক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা সৃষ্টি করাই এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেকটিভিটি প্রকল্পের আওতায় কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে মহিলা উদ্যোক্তাদের কাট-ফ্লাওয়ার, অ্যাগ্রো প্রসেসিং ও আইসিটি স্কিল বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মকে উতসে কর কর্তনকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করারও প্রস্তাব করেছেন।
উতসে কর দিতে হবে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মকে: প্রস্তাবিত বাজেটে ই-কমার্স খাতকে উতসে কর কর্তনকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। কোনো পণ্য বা সেবা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে আসার সময় তার উতস থেকে কর কেটে রাখবে সেই প্ল্যাটফর্ম।
নারী উদ্যোক্তাদের করমুক্ত আয়সীমায় আরও ছাড়: নারী উদ্যোক্তারা আয় করে আরও ছাড় পাচ্ছেন। দেশে নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে এই ছাড় দেওয়া হচ্ছে। নতুন বাজেটে নারী উদ্যোক্তাদের করমুক্ত আয়ের সীমা বর্তমান ৫০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। অর্থাত, নারী উদ্যোক্তারা এক বছরে ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করলে কোনও কর দিতে হবে না।
দেশে মোবাইল ফোন উতপাদন-সংযোজনে আরও ২ বছর ভ্যাট অব্যাহতি: স্থানীয় পর্যায়ে দেশে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উতপাদন ও সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা আরও দুই বছরের জন্য বাড়ানোর প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।
সিম কার্ডের দাম বাড়ছে: প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল ফোনের সিম কার্ডের ওপর সম্পূরক শুল্ক হার ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রস্তাব পাস হলে সিম কার্ডের দাম বাড়বে। জানা যায়, আগে সিম কার্ডের ওপর সম্পূরক কর ছিল ১৫ শতাংশ। এবার ২০ শতাংশ আরোপ হলে তা দাঁড়াবে ৩৫ শতাংশে। অন্যদিকে বাজেট প্রস্তাবে স্মার্ট কার্ডে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিদেশি ফোনে বৃদ্ধি: প্রস্তাবিত বাজেটে বিদেশ থেকে ফোন আমদানিতে শুল্কহার বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। সেলুলার ফোন উতপাদন, সংযোজন ও পশ্চাদ সংযোগ শিল্পের প্রসারে এ শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা আরও বিনিয়োগ বান্ধব ও যৌক্তিকীকরণ এবং দেশীয় শিল্পের প্রতিরক্ষণে ফোন আমদানিতে শুল্কহার বৃদ্ধিকরণের প্রস্তাব করা হয়।