‘মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক অনলাইন কনটেন্ট বনাম তথ্যবিভ্রাট ও গুজব বিড়ম্বনা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিকম সাংবাদিকদের সংগঠন টেকনোলজি মিডিয়া গিল্ড বাংলাদেশ (টিএমজিবি)। পাশাপাশি টিএমজিবির অফিশিয়াল ওয়েবসাইট www.tmgb.org আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
আজ রবিবার (২১ মার্চ) টিএমজিবি আয়োজিত ভার্চুয়াল সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কনটেন্ট গবেষক অমি রহমান পিয়াল। আলোচনায় বক্তব্য রাখেন র্যাবের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ, বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির, বিসিএস সভাপতি শহীদ-উল-মুনির, বিডব্লিউআইটি’র সভাপতি অধ্যাপক ড. লাফিফা জামাল, এপনিক’র নির্বাহী কমিটির সদস্য ও পলিসি চেয়ার সুমন আহমেদ সাবির, বিডিওএসএন’র সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান, যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্ডহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপিউটার এবং তথ্যবিজ্ঞান বিভাগ সহকারী অধ্যাপক (ডাটা সায়েন্স) ড. রুহুল আমিন এবং বাক্কো’র সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন। সঞ্চালনা করেন টিএমজিবির আহ্বায়ক মুহম্মদ খান।
জুনাইদ আহমেদ পলক বাংলাদেশে গুজব ছড়াতে ও সাইবার হামলায় একটি রাষ্ট্র প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অর্থ বিনিয়োগ করছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। এ বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য-উপাত্ত ও প্রমাণ এরই মধ্যে বাংলাদেশের হাতে এসেছে বলেও জানান তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তথ্য সংরক্ষণ এবং তা নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে একটি ডিজিটাল আর্কাইভ গড়ে তোলা হবে। এই কাজে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে টিএমজিবিকে কাজ করার আহ্বান জানান তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী। পাশাপাশি গুজব প্রতিরোধে সব মহলকেই সচেতন হতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অমি রহমান পিয়াল বলেন বুঝে না বুঝে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস নিয়ে নানা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। এ বিষয়ে একটি প্রাতিষ্ঠানিক এবং সর্বজনস্বীকৃত আর্কাইভ গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি বলেও মনে করেন তিনি।
আশিক বিল্লাহ বলেন, গুজব প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নানা উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। তিনি জানান, কক্সবাজারের রামুসহ বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সুনামগঞ্জের শাল্লায় সাম্প্রদায়িক হামলায় পেছনে কারা রয়েছেন তা খতিয়ে দেখছে র্যাব।
সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, গুজব প্রতিরোধে আমাদের সবচেয়ে বেশি যে কাজটি করতে হবে সেটি হলো সচেতনতা। আমরা যেহেতু ডিজিটাল বাংলাদেশের ডিজিটাল সিটিজেন, তাই আমাদেরকে ডিজিটাল প্লাটফর্মে কী করা উচিত, কী করা উচিত নয় সে সম্পর্কে সকলের মাঝে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
শাহীদ-উল-মুনির বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়টা সকল রাজনৈতিক বিষয়ের উর্দ্বে। আমরা যে রাজনৈতিক মতাদর্শের হই না কেনো মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে আমাদের সকলের আবেগ জড়িত। তাই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যাতে কোনো বিভ্রান্তিমূলক তথ্য না ছড়ায়, তার জন্য সরকারিভাবে এ সম্পর্কিত সকল দলিলাদি সংগ্রহ করে আর্কাইভ করে রাখা উচিত।
অধ্যাপক ড. লাফিফা জামাল বলেন, আমাদের লিবারেশন ওয়্যার নামে সরকারি ওয়েবসাইট রয়েছে। তবে সেটি এখনও সমৃদ্ধ নয়। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের ইতিহাস সঠিকভাবে ক্যাপশন এবং ওয়াটারমার্কের মাধ্যমে উক্ত ওয়েবসাইটে সমৃদ্ধ করা উচিত। মুক্তিযুদ্ধে বীরাঙ্গনা নারীদের ইতিহাস তুলে ধরতে সংশ্লিষ্ট সকলের সহায়তায় কাজ করবে বিডব্লিউআইটি।
সুমন আহমেদ সাবির বলেন, মুক্তিযুদ্ধের দলিলগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার কারণে বিভ্রান্তি ও তথ্যবিভ্রাটের সুযোগ তৈরি হয়েছে। তাই এগুলো একটি জায়গায় ধারাবাহিকভাবে সাজিয়ে রাখা প্রয়োজন। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোর মতো আমাদের মিডিয়াগুলোকে বিভিন্ন বিভ্রান্তিমূলক ইস্যুতে ফ্যাক্ট চেকিং বিশ্লেষণে নজর দেয়া উচিত।
মুনির হাসান বলেন, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের সঠিক ইতিহাস সবার কাছে উন্মুক্ত করা উচিত। এসব দলিলগুলো সাধারণ লাইসেন্সের আওতায় এনে অধিকভাবে ছড়িয়ে দিতে পারলে আগামী প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস সহজেই খুঁজে পাবে।
ড. রুহুল আমিন বলেন, গুজব প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়। তাই এটি প্রতিরোধে একটি সিস্টেম ডেভেলপ তৈরি করা উচিত। এ ছাড়া দেশের ইতিহাস নিয়ে যাতে কোনো গুজব তৈরি না হয় সেজন্য দেশের ইতিহাস সম্পর্কিত সকল দলিল এক জায়গায় আর্কাইভের মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে।
তৌহিদ হোসেন বলেন, দেশের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে সকল সংগঠনকেই কাজ করতে হবে। সার্চ ইঞ্জিনে যাতে সঠিক তথ্য আগে আসে সেজন্য মেটাডেটা ও সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনে গুরুত্ব দিতে হবে। বাক্কোর পরবর্তী বিপিও সামিটে মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তথ্য তুলে ধরতে বিশেষ আয়োজন থাকছে বলেও জানান তিনি।