Wednesday, December 25, 2024
More

    সর্বশেষ

    এক নজরে স্যামসাং ডিজিটাল সিটি

    দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল থেকে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে দাঁড়িয়ে আছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কর্পোরেট সেন্টারগুলোর একটি ‘‘স্যামসাং ডিজিটাল সিটি’’। এই সিটিতেই চলছে স্যামসাং গ্যালাক্সি সিরিজের বিকাশ ও নিরীক্ষণের কাজ। প্রথম দেয়াল টেলিভিশনের নকশাও আঁকা হয়েছিলো এখানেই। পাশাপাশি, অসংখ্য দুর্দান্ত সব গ্যাজেটের কনসেপ্ট বাস্তবায়িত হওয়ার অপেক্ষায় আছে। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে স্যামসাংয়ের আড়াই লাখ মেধাবী কর্মীদের কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছে এই অসাধারণ এই প্রাঙ্গণটি।

    ডিজিটাল সিটি তৈরিতে স্যামসাংয়ের এর খরচ হয়েছে প্রায় একশত কোটি ডলার। এ ডিজিটাল সিটি অবস্থিত সিউলের সুওন শহরে। একসময় চারদিকে দেয়াল দিয়ে ঘেরা, প্রাচীন সম্প্রদায়ের এই স্থানটির গোড়াপত্তন হয়েছে ৮ম শতাব্দীতে। সুওন শহরের ইতিহাস-সমৃদ্ধ অতীত সত্ত্বেও স্যামসাং ডিজিটাল সিটি অত্যন্ত আধুনিক। ৩৯০ একর জায়গা নিয়ে অবস্থিত অফিসটিতে আছে প্রায় ৩৫ হাজার কর্মী, চারটি ল্যান্ডমার্ক অফিস টাওয়ার, যার একেকটি উচ্চতায় ৩৮ তলা পর্যন্ত, ১৩১টি ছোট ছোট ভবন, সঙ্গে আরও অনেক গবেষণাগার, অফিস, বিনোদন কেন্দ্র এবং সাময়িক গবেষকদের থাকার জন্য অতিথি ভবন।

    ক্যাম্পাসটিতে একটি জায়গা আছে যার নাম ‘স্যামসাং ফাইভজি সিটি’। এটি মূলত একটি আউটডোর পার্ক, যেখানে স্যামসাং তাদের ফাইভজি নেটওয়ার্ক সরঞ্জামসমূহ পরীক্ষা করে। এগুলোই পরবর্তীতে সরবরাহ করা হয় যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশের টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে। ক্যাম্পাসটি কিছু অদ্ভুত এবং অত্যাধুনিক সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত, যেমন মাল্টিপল ইনপুট মাল্টিপল আউটপুট (এমআইএমও/মিমো), যেখানে স্যামসাং নানারকমের স্মার্টফোন প্রযুক্তি নিয়ে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে। এমআইএমওতে হওয়া পরীক্ষাগুলো নিয়ে স্যামসাং বেশ গোপনীয়তা বজায় রাখে। ফিউচারিস্টিক এ জায়গাটি দেখতে অনেকটাই স্পেসশিপের ককপিটের মত।

    গবেষণা ও উন্নয়নে (আরঅ্যান্ডডি) নিয়োজিত আছে স্যামসাং এক্ষেত্রে নিয়োজিত বৈশ্বিক জনশক্তির প্রায় ২০ শতাংশ-৬৫ হাজারেরও বেশি। আরঅ্যান্ডডি ক্যাম্পাসে একটি বহুতল পাঠাগার আছে, যেখানে অসংখ্য বই এবং ম্যাগাজিনের সান্নিধ্যে ডিজাইনারগণ এবং অন্যান্য কর্মীরা তাদের আইডিয়াগুলো নিয়ে সুচিন্তিত অনুশীলন করতে পারেন; চাইলে খুঁজে নিতে পারেন অনুপ্রেরণাও।

    ডিজিটাল সিটিতে আরও আছে স্যামসাংয়ের একটি সাউন্ড ল্যাব। এতে রয়েছে বিভিন্ন সঙ্গীত সরঞ্জাম এবং ভয়েস বুথ যেখানে স্যামসাংয়ের ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট বিক্সবি’র কণ্ঠ রেকর্ড করা হয়। স্যামসাংয়ের অসংখ্য গৃহস্থালি সরঞ্জামের শব্দগুলোও তৈরি করা হয় এখানেই; যেমন, একটি স্মার্টফোন ইলেক্ট্রিকাল আউটলেটে যুক্ত করার পর যে শব্দ হয়; বা অনেকক্ষণ দরজা খুলে রাখার পর একটি রেফ্রিজারেটর যে শব্দটি করে।

    বিস্তীর্ণ এ ক্যাম্পাসে রয়েছে ৪,১০০ আসনের একটি ক্যাফেটিরিয়া, যেখানে কর্মীরা খেতে পারেন বিনা মূল্যে। প্রতিদিন এতে প্রায় ৯২টি ভিন্ন ভিন্ন মেন্যুর ৭২,০০০ জনের খাবার পরিবেশন করা হয়। খাবারের উপকরণগুলো স্যামসাং সংগ্রহ করে সুওনের পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলো থেকে। ফলে, এ অঞ্চলের কৃষক ও অন্যান্য উতপাদনকারীদের সঙ্গে স্যামসাং -এর একটি শক্তিশালী বন্ধনও গড়ে উঠেছে। এ ছাড়াও, ক্যাম্পাসে আছে ডানকিন ডোনাটস -এর মতো আন্তর্জাতিক খাদ্য ও পানীয় আউটলেট।

    প্রতি সপ্তাহেই স্যামসাং বিভিন্ন ধরণের কর্মসূচি আয়োজন করে, যার মধ্যে রয়েছে কনসার্ট, ফ্যাশন শো এবং টক-শো। কর্মীদের বিনোদনের জন্য এখানে রয়েছে ৬৯০টি কালচারাল ক্লাব, যার মধ্যে রয়েছে কোরিয়ান লোকচিত্র থেকে শুরু করে প্যারাগ্লাইডিং এবং রান্নার ক্লাব। যেকোন ফ্যামিলি ডে’তে সম্পূর্ণ স্যামসাং ডিজিটাল সিটি যেনো এর বাসিন্দাদের জন্য একটি থিম পার্কে রূপান্তরিত হয়। এমনকি গো-কার্টও আছে ওখানে। হেডকোয়ার্টারটিতে আছে ৪৯০টি স্পোর্টস ক্লাব, ১০টি বাস্কেটবল কোর্ট, ৪টি ব্যাডমিন্টোন কোর্ট, ৩টি ফুটবল মাঠ, ২টি বেসবল মাঠ, ১টি ক্লাইম্বিং ওয়াল এবং একটি অলিম্পিক সাইজের সুইমিং পুল।

    দক্ষিণ কোরিয়ায় সেবাখাত ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। কিন্তু স্যামসাং ইলেকট্রনিকস বিনা মূল্যে এর কর্মকর্তাদের বিভিন্ন ধরণের সামাজিক সুবিধাসমূহ প্রদান করে। যেমন: স্বাস্থ্যসেবা, শিশু যত্ন, খাবার, বিনোদন এবং পরিবহন ব্যবস্থা। তাই, বিভিন্ন সামাজিক সেবাসমূহ প্রদানের মাধ্যমে আকর্ষণীয় ও বিশ্বস্ত নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্যামসাং ইলেক্ট্রনিকস সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছে। কাজের দিনগুলোতে কর্মী ৯০০ শিশুকে দেখাশুনা করার জন্য স্যামসাং ১৫০ জন কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক  নিয়োগ দিয়েছে। বৃষ্টির দিনে ডিজিটাল সিটির বিল্ডিংগুলোতে ব্যবহারের জন্য স্যামসাং এর প্রত্যেক কর্মকর্তাদের ৯,০০০ ছাতা দিয়ে থাকে। 

    ডিজিটাল সিটিতে আছে স্যামসাং ইনোভেশন মিউজিয়াম। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলেও এই মিউজিয়ামটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। মিউজিয়ামে প্রতিষ্ঠানের ইতিহাসসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি পণ্যের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। 

    সর্বশেষ

    পড়েছেন তো?

    Stay in touch

    To be updated with all the latest news, offers and special announcements.