১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ব্যবহৃত গাড়িগুলোর ঠাঁই হয়েছে জাদুঘরে। এক সময়ের যন্ত্রদানবগুলো এখন লোহার মোটা শিকলের ভেতর নিশ্চুপ পড়ে থাকে। যুদ্ধে বিশেষ ভূমিকা রাখা ওই গাড়িগুলোর পিছনে লুকিয়ে আছে নানা কাহিনী।
স্মৃতিবিজড়িত গাড়িগুলোর কয়েকটি মাত্র দেশের বিভিন্ন জাদুঘরে রয়েছে, আর কিছু সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হতে চলেছে। সবচেয়ে অধিকসংখ্যক গাড়ি একসঙ্গে দেখতে চাইলে যেতে হবে ঢাকার বিজয়সরণীতে অবিস্থত সামরিক যাদুঘরে।
মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানী যুদ্ধের সময় একটি জিপ গাড়ি ব্যবহার করতেন। ফোর হুইল ড্রাইভের ১/৪ টনের এই গাড়ির নাম ‘কাইজার উইলিজ জিপ ওয়াগনার’।
ব-১৪৬ নম্বরের নীল রঙের এই বিশাল জিপ গাড়িটি নিয়ে তিনি বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করতেন। শুধু পরিদর্শনের কাজেই নয় যুদ্ধ ব্যবহৃত অনেক কিছুই তিনি এই গাড়িটিতে বহন করতেন। যশোর শিক্ষাবোর্ডের সৌজন্যে এই গাড়িটি পাওয়া গিয়েছে।
জেনারেল এম এ জি ওসমানীর গাড়ির পাশে কালো রঙ্গের একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ স্টাফ কার রয়েছে। দেখতে চমৎকার এই গাড়িটি পশ্চিম জামার্নির তৈরি। গাড়িটি ব্যবহার করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১৪-ডিভিশনের জিওসি।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় এই গাড়িটি। পরবর্তী সময়ে লে. জেনারেল জিয়াউর রহমান, বীর উত্তম এটি ব্যবহার করতেন। ৪ সিলিন্ডারের ২০০০ সিসি এই গাড়িটির নাম্বার ০০০০০৫।
স্বাধীনতা-যুদ্ধের পর আর আর জিপটি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। ১৯৮৫ সালে পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জিপটি ব্যবহার করতো। উল্লেখ্য রিকোর্য়ালেস রাইফেল (আর আর) ট্যাংক বিধ্বংসী অস্ত্র হিসাবে ব্যবহৃত হয়। জিপটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি মাঝারি মানের শক্তিশালী গাড়িটি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ৫.০৮ মেট্রিকটন ওজনের যে কোনো গাড়ি উদ্ধার করতে সক্ষম। এই গাড়িটি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় এবং ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এটি ব্যবহার করতো।
এছাড়া সামিরক জাদুঘের গেলে, আরো দেখা যাবে মার্কিন যুদ্ধরাষ্ট্রের তৈরি একটি ডায়মন্ড টি মডেলের-৯৮১ ট্রাক। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছ থেকে ট্রাকটি উদ্ধার করা হয়। গাড়িটি নাম্বার ১৮৬৯৯০।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অস্ত্র, বেতার সামগ্রী বহনকারী এম ১০৯ মডেলের কারগো ভ্যানও রয়েছে এখানে। এই গাড়িটিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি। যুদ্ধক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় মেরামত করার যন্ত্রপাতি এই গাড়িটির ভেতরে সংযুক্ত থাকতো।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এই গাড়িটি ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ব্যবহার করে। গাড়িটির নাম্বার ০৭২০১২।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত রাশিয়ার তৈরি ট্যাংক পিটি ৭৬-এর দেখাও মিলবে এখানে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই যানটি উদ্ধার করে।
যুদ্ধ ব্যবহৃত গাড়িগুলোর নাম মাত্র সংখ্যা রয়েছে ঢাকার বেশ কিছু জাদুঘরে। দেশের নানা জাদুঘরগুলো ঘুরলে বোধ হয় আরো বেশ কিছু গাড়ির সন্ধান পাওয়া যেতে পারে।