কাট, কপি, পেস্ট। শব্দত্রয়ির সঙ্গে পরিচিত নন এমন কম্পিউটার কিংবা প্রযুক্তি ব্যবহারকারী গোটা দুনিয়া খুঁজেও হয়তো পাওয়া যাবে না। তবে এর উদ্ভাবক কে ছিলেন, তা হয়তো খুব কম মানুষই জানে। কম্পিউটারের এমন প্রয়োজনীয় ফাংশন কালজয়ী। আর এর জনক ছিলেন প্রযুক্তিবিজ্ঞানী ল্যারি টেসলার। ছিলেন এ অর্থে যে, তিনি আর নেই। ১৭ ফেব্রুয়ারি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এ মার্কিন কিংবদন্তি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
প্রযুক্তি জামানায় ল্যারি টেসলার একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। তিনি কাট-কপি-পেস্ট কমান্ডসহ কম্পিউটারের বেশ কয়েকটি সিস্টেম আবিষ্কার করেছেন, যা কম্পিউটারের ব্যবহারকে সহজ করেছে। ১৯৪৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ব্রোনক্সে জš§গ্রহণ করেন ল্যারি। পড়ালেখা করেন ক্যালিফোর্নিয়ার স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে। স্নাতক শেষে তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় সক্রিয় হন।
১৯৬০ সালে যখন কম্পিউটারের প্রচলন খুব একটা শুরু হয়নি, তখনই ‘প্রযুক্তি উপত্যকা’খ্যাত সিলিকন ভ্যালিতে কর্মজীবন শুরু করেন টেসলার। এ সময় কম্পিউটার বিষয়টি মানুষের কাছে বেশ দুর্বোধ্য ছিল। ১৯৭৩ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত জেরক্স পালো আলতো রিসার্চ সেন্টারে (পিএআরসি) কাজ করেন তিনি। এ প্রতিষ্ঠানের ল্যাবে কাজ করার সময় তিনি আরেক কম্পিউটার বিজ্ঞানী টিম মটের সঙ্গে মিলে তৈরি করেন ‘জিপসি’ নামের নতুন একটি ওয়ার্ড প্রসেসর। এ জিপসিতে কোনো শব্দ বা বাক্যাংশ কেটে সরিয়ে নেওয়া, প্রতিলিপি তৈরি করা ও অন্য জায়গায় দ্বিতীয়বার বসানোর জন্যই তৈরি করেন কাট-কপি-পেস্ট সিস্টেমটি। ১৯৭৬ সালে ওয়েব ব্রাউজারে শব্দটির প্রথম প্রচলন করেন তিনিই।
টেসলারের এ সিস্টেম আবিষ্কারের ফলে কম্পিউটারের কাজ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরিয়ে নেওয়া সহজ হয়। এ সিস্টেম ছাড়াও মোডলেস কম্পিউটিং নামে ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইনে বিশেষত্ব অর্জন করেছিলেন, যা কম্পিউটার সিস্টেমকে আরও সহজ করেছিল।
কর্মময় জীবনে জেরক্সে ছাড়াও তিনি অ্যাপল, ইয়াহু, আমাজনেও কাজ করেন। ১৯৮০ সালে জেরক্স থেকে বিদায় নিয়ে অ্যাপল কম্পিউটারে যোগ দেন। এখানে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ছিলেন। অ্যাপলের জনপ্রিয় কিছু হার্ডওয়্যার বা যন্ত্রাংশ তৈরিতেও অসাধারণ ভূমিকা রয়েছে তার। এরপর ১৯৯৭ সালে অ্যাপল ছেড়ে টেসলার স্টেজকাস্ট সফটওয়্যার নামের একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে শিশুদের প্রোগ্রামিং সম্পর্কে ধারণা দিতে নানা ধরনের অ্যাপ তৈরি হতো।
২০০১ সালে এ বিজ্ঞানী অনলাইন শপিং জায়ান্ট আমাজনে যোগ দেন। পরে শপিং এক্সপেরিয়েন্স বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন। ২০০৫ সালে ইয়াহুর ইউজার এক্সপেরিয়েন্স অ্যান্ড ডিজাইন গ্রুপের প্রধান হিসেবে যোগ দেন। এখান থেকে ২০০৮ সালে প্রোডাক্ট ফেলো হিসেবে যোগ দেন ২৩ অ্যান্ডমিতে। এক বছর পর সেখান থেকেও সরে কনসাল্টিংয়েই মনোনিবেশ করেন ল্যারি টেসলার।
সংগৃহীত/টেকইকম ডেক্স