গত ২৪ ফ্রেব্রুয়ারী সোমবার ‘জাতীয় ডিজিটাল কমার্স (সংশোধিত) নীতিমালা-২০২০’ মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। গত ২০১৮ সালের জুলাই মাসে ‘জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা-২০১৮’ মন্ত্রিসভায় প্রাথমিকভাবে অনুমোদন পায়। ২০১৯ সালের শুরুতে সরকার ঘোষিত ডিজিটাল কমার্স নীতিমালায়- প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগে (এফডিআই) স্থানীয় কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারিত্বের বাধ্যবাধকতার শর্ত দেয়া হয়েছিল।
দেশীয় উদ্যোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা করে বিদেশী বিনিয়োগের সুযোগ রাখার প্রশ্নে, সদস্য প্রতিষ্ঠান ও শীর্ষস্থানীয় দেশীয় ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের সাথে ২০১৯ সালের আগষ্ট মাসে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)। উক্ত সভায় বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে ই-ক্যাব গত ২৯ আগস্ট ২০১৯ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে প্রয়োজনীয় সংশোধনী প্রস্তাব আকারে প্রেরণ করে।
ই-ক্যাব বিদেশী বিনিয়োগের পক্ষে তবে সেটা অবশ্যই দেশীয় বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করে। দেশীয় উদ্যোক্তা, দেশীয় জনবল এবং দেশীয় অন্যান্য রিসোর্সকে কাজে লাগনো এবং পুরো ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নের জন্য ই-ক্যাব সংশোধনী বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পেশ করে।
(অবগতির জন্য ই-ক্যাব প্রেরিত সংশোধনীর অনুচ্ছেদগুলো নিচে তুলে ধরা হলো)
ই-কমার্স খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগ অনুমোদনে ডিজিটাল কমার্স নীতিমালায় অনুচ্ছেদ ১.২ ও ৩.৬.৭ এ ই-
ক্যাবের সংশোধনী প্রস্তাবসমূহ:
অনুচ্ছেদ ১.২
২৬) মার্কেট প্লেস ভিত্তিক ডিজিটাল কমার্স (Market Place Based Digital Commerce) মার্কেটপ্লেস ভিত্তিক ডিজিটাল কমার্স অর্থ কোনো ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান কতৃক মার্চেন্ট বা বিক্রেতানির্ভর ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক্স নেটওয়ার্ক (তথ্যপ্রযুক্তি প্লাটফর্ম) ব্যবহার করে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে পন্য বা সেবা ক্রয় বা বিক্রয়।
২৭) ইনভেন্টরী ভিত্তিক ডিজিটাল কমামর্স (Inventory Based Digital Commerce)
ইনভেন্টরী ভিত্তিক ডিজিটাল কমার্স অর্থ কোনো ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান যার ক্রয়-বিক্রয়যোগ্য পন্য বা সেবার ইনভেন্টরীর মালিকানা বা নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এরুপ প্রতিষ্ঠান কতৃক ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক্স নেটওয়ার্ক (তথ্য প্রযুক্তির প্লাটফরম) ব্যবহার করে ভোক্তার নিকট পন্য বা সেবা সরাসরি বিক্রয়।
অনুচ্ছেদ ৩.৬.৭
ডিজিটাল কমার্সখাতে বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিধিবিধান প্রতিপালন করতে হবে-
ইনভেন্টরী ভিত্তিক ডিজিটাল কমার্সের ক্ষেত্রে বিদেশী মালিকানায় ৫০% এর বেশী বিনিয়োগ করা যাবেনা। মার্কেট প্লেস ভিত্তিক ডিজিটাল কমার্সের ক্ষেত্রে নিন্মলিখিত শর্তসাপেক্ষে ১০০% বিদেশী বিনিয়োগ করা যাবে।
শর্তসমূহ:
ক) ডিজিটাল কমার্সখাতে বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতি গ্রহণ করতে হবে।
খ) মার্কেট প্লেস ভিত্তিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান পন্যের স্টক এর উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারবেনা। সরবরাহের সুবিধার্থে সাময়িক (সর্বোচ্চ ৩০ দিন) গুদামজাত করা যাবে এবং শর্টিং ও প্যাকেজিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা যাবে।
গ) মার্কেটপ্লেস এর বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানসমূহকে বাংলাদেশে নিবন্ধনকৃত হতে হবে। একক কোনো বিক্রেতা বা বিক্রয় প্রতিষ্ঠান মার্কেট প্লেস এর মোট বিক্রির ২৫% এর বেশী নিয়ন্ত্রন করতে পারবেনা।
ঘ) মার্কেটপ্লেস এর প্রোডাক্টস শিপিং বা ডেলিভারী স্থানীয়ভাবে নিবন্ধনকৃত ও মালিকানাধীন কোম্পানীদ্বারা পরিচালনা করতে হবে। মার্কেটপ্লেস নিজে কোনো ডেলিভারী বা লজিস্টিক কোম্পানীতে বিনিয়োগ করতে পারবেনা।
ঙ) মার্কেটপ্লেস ভিত্তিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কোনো নির্দিষ্ট বিক্রেতাকে শুধুমাত্র তারসাথে কাজ করতে বা শুধুমাত্র তার কাছে পণ্য বিক্রয় করতে বাধ্য করতে পারবেনা।
চ) ভর্তুকি দিয়ে বা ক্রয়মূল্যের চেয়ে কমমূল্যে পন্য বিক্রি করা যাবে না।
ছ) প্রতিষ্ঠানের সর্বমোট বেতনভাতার নূন্যতম ৯৫% স্থানীয় বাংলাদেশী নাগরিকদের প্রদান করতে হবে।
জ) মার্কেটপ্লেসকে ডিজিটাল প্লাটফর্ম ও সকল প্রযুক্তি স্থানীয়ভাবে কাস্টমাইজেশন ও পরিবর্ধণে স্থানীয় মানবসম্পদ ব্যবহার করতে হবে।
ঝ) সকল ধরনের ডেটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে হোস্ট করতে হবে।
এছাড়া, ই-ক্যাবের আরো প্রস্তাব রয়েছে যে, বিদেশী কোম্পানীসমূহ যখন তাদের বাংলাদেশী ই-কমার্স বা মার্কেটপ্লেস এর জন্য ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন প্রদান করবে। তখন সেটা অবশ্যই বাংলাদেশী মুদ্রায় এবং বাংলাদেশী এজেন্সির মাধ্যমে প্রদান করার বিধান থাকতে হবে। এই বিধান না থাকলে সরকার বড়ো অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে। ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন হিসেবে ই-ক্যাব দেশীয় উদ্যোক্তা ও ইন্ডাস্ট্রির বৃহত্তর স্বার্থের বিষয়ে সর্বদা সজাগ রয়েছে।
টেকইকম ডেক্স