আল-আমীন দেওয়ান : এসএমএসভিত্তিক স্বাস্থ্যবিমা প্যাকেজ রবির গ্রাহককে অটো রিনিউয়ে বাধ্য করত মিলভিক বাংলাদেশ।
কোম্পানিটি বিটিআরসির টেলিকমিউনিকেশন ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিসেস (টিভ্যাস) লাইসেন্স নিয়ে রবির গ্রাহকদের কাছে স্বাস্থ্যবিমা বিক্রি করে আসছে। সেখানে রবির ‘এসএমএসভিত্তিক মাইহেলথ ফ্যামিলি প্যাক’ এবং ‘মাইহেলথ কম্বো প্যাক’ অটোরিনিউসহ গ্রহণ করতে হতো। অর্থাৎ, সেবাটি নিলে অটোরিনিউসহই গ্রাহককে নিতে হতো।
এছাড়া মিলভিক বিটিআরসি অনুমোদিত সার্ভিস অ্যান্ড ট্যারিফের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তা দিয়ে ব্যবসা চালাতো এবং অনলাইন টার্মিনাল স্থাপনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা করেনি। রেভিনিউ শেয়ারিং এবং সোশ্যাল অবলিগেশন ফান্ডে বিটিআরসির পাওনাও তারা পরিশোধ করেনি।
সম্প্রতি বিটিআরসির তদন্তে কোম্পানিটির এসব অনিয়ম বের হয়ে আসে। নিয়ন্ত্রণ সংস্থা রেভিনিউ শেয়ারিং এবং সোশ্যাল অবলিগেশন ফান্ড বাবদ ৬৮ লাখ ৪৪০৫ টাকা পরিশোধে নির্দেশনা দিয়েছে।
সেইসেঙ্গ গ্রাহককে অটো রিনিউয়াল বিমা প্যাকেজ বিক্রি এবং অনলাইন মনিটরিং টার্মিনাল স্থাপন করায় কোম্পানিটিকে ২ লাখ টাকা প্রশাসনিক জরিমানা করেছে।
এসব বিষয়ে মিলভিক বাংলাদেশের কোনো অংশীদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। বাংলাদেশে কোম্পানিটির ৩ জন অংশীদার রয়েছেন। সুইডিশ জাতীয়তার মাথিলদা স্ট্রম, ব্রিটিশ হারিশ কারাকটি এবং বাংলাদেশী আবু নূর মো: পারভেজ।
আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কর্মকর্তাও তাদের পরিচয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
মিলভিক ও রবি :
২০১৮ সালের মে মাসে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে রবি ও মিলভিক যৌথভাবে ‘মাই হেলথ’ নামে হেলথকেয়ার অফার চালু করার কথা জানায়। রাজধানীর মিরপুরের ময়ূরী কমিউনিটি সেন্টারে ওই অনুষ্ঠানে তারা জানায়, অসুস্থতার ক্ষেত্রে আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করাই এসব প্যাকেজের উদ্দেশ্য। মিলভিকের মোবাইল-ভিত্তিক ডিজিটাল সেবার কল্যাণে রবি ও এয়ারটেলের গ্রাহকরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সেবা নিতে পারবেন।
ওই অনুষ্ঠানে তখনকার মিলভিক বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার আকিরা মরিটা এবং রবির হেড অব এন্টারপ্রাইজ বিজনেস মো. আদিল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
অথচ মিলভিক বিটিআরসি হতে রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট পায় ২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর।
রবির ও মিলভিকের এই স্বাস্থ্যবিমা সেবার বিস্তারিত মিলভিকের ছাড়াও রবির এই ওয়েবসাইটে রয়েছে।
হিসাবে গরমিল, রবিকে কারণ দর্শানো নোটিশ :
বিটিআরসির যাচাই-বাছাইয়ে দেখা যায়, পার্টনার রেভিনিউ শেয়ারিং হিসেবে রবি হতে ১১ কোটি ৮৭ লাখ ৯০৫৭৮ টাকা নিয়েছে মিলভিক। অন্যদিকে বিটিআরসিকে দেয়া রবির হিসাবে বলা হয়েছে, তারা ১০ কোটি ৫৫ লাখ ৯৯৭২৭ টাকা দিয়েছে। যেখানে গরমিল ১ কোটি ৩১ লাখ ৯০৮৫১ টাকা।
আর এই হিসাব মিলভিকের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট পাওয়ার সময় হতে।
রবি বিটিআরসিকে এই রেভিনিউ শেয়ারিংয়ের টাকা কেন কম দেখালো তার জন্য অপারেটরটিকে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছে বিটিআরসি।
বিটিআরসি যা বলছে :
বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার টেকশহর ডটকমকে জানান, এসব অনিয়ম ধরা, গ্রাহকস্বার্থ এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় বিটিআরসি তাদের সবরকম লাইসেন্সিদের এমন মনিটরিং করে যাবে এবং দিনেদিনে এর আওতা আরও বাড়বে।
‘এছাড়া সম্প্রতি আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমাদের যেখানে যত পাওনা আছে সে পাওনা সময়মতো আদায়ে একটি সফটওয়্যারভিত্তিক মনিটরিং ব্যবস্থা করা হবে’ বলছিলেন তিনি।
সূত্র : টেকশহর ডটকম