ক.বি.ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশের সফল বাস্তবায়ন হয়েছে। এক্ষেত্রে বেসিস তথা বেসরকারি খাতের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এখন সময় এসেছে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের। সেই লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে বেসিসের প্রায় দুই হাজার সদস্য প্রতিষ্ঠান। সেক্ষেত্রে সরকারের প্রয়োজনীয় পলিসি সহায়তাসহ করণীয় বিষয়গুলো নির্ধারণে ‘‘স্মার্ট বাংলাদেশে: আইসিটি শিল্পের ভূমিকা’’ বিষয়ক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)।
গত রবিবার (১২ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে বেসিস আয়োজিত ‘‘স্মার্ট বাংলাদেশে: আইসিটি শিল্পের ভূমিকা’’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এবং আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। সম্মানিত অতিথি ছিলেন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের ভাইস চ্যান্সেলর ড. রুবানা হক। আলোচক ছিলেন ফ্লোরা টেলিকম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফা রফিকুল ইসলাম ডিউক। অনলাইনেযুক্ত থেকে আলোচনায় অংশ নেন বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ। সঞ্চালনা করেন বেসিস সহ-সভাপতি (প্রশাসন) আবু দাউদ খান।
অনুষ্ঠানে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে বেসিসসহ সংগঠনটির সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো যে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে সেইসব সাফল্যের গল্পগুলো তুলে ধরা হয়। ই-গভর্নেন্স খাত নিয়ে বেসিসের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি সামিরা জুবেরী হিমিকা, স্টার্টআপ খাত নিয়ে বেসিসের সহ-সভাপতি (অর্থ) ফাহিম আহমেদ, আন্তর্জাতিক বাজার নিয়ে বেসিসের উপদেষ্টা নাজিম ফারহান চৌধুরী, ই-কমার্স খাত বিষয়ে চালডাল ডটকমের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ওয়াসিম আলিম, ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজিস নিয়ে বেসিসের ফোর আইআর স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান নাহিদ হাসান এবং কনট্যাক্ট সেন্টার ও বিপিও খাত নিয়ে বাক্কোর সভাপতি ওয়াহিদুর রহমান শরীফ এসব গল্প তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বেসিস কনট্যাক্ট সেন্টার’ এর উদ্বোধন করা হয়। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠনটির সদস্যরা যাতে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ও দ্রুততার সঙ্গে বেসিসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন ও সদস্যসেবা উন্নত ও কার্যকরী হয়, সেই লক্ষে বেসিস কনট্যাক্ট সেন্টারের জন্য বিটিআরসি অনুমোদিত শর্ট কোড ১৬৪৮৮ চালু করা হয়।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ২০২১ সালে শুধু ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন নয়, আমরা অনুকরণীয় হতে পেরেছি। এখন আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের যে সক্ষমতা রয়েছে, তাতে আমরা ইতিমধ্যে যা অর্জন করেছি তার থেকে কয়েক লক্ষগুন সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদেরকে রোবট ব্যবস্থাপনা করতে হবে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স তৈরি করতে হবে, হার্ডওয়্যার ব্যবস্থাপনা করতে হবে আর এজন্য নিজেদেরকে নতুন প্রযুক্তিতে দক্ষ করতে হবে। শুধু সফটওয়্যার রফতানিই আমাদের বাজার নয়, সকল ধরণের ডিজিটাল কার্যক্রমই আমাদের বাজার। তাই আমাদের সবগুলো তথ্যপ্রযুক্তি সংগঠনগুলোতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে সহায়ক সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
নসরুল হামিদ বিপু বলেন, বাংলাদেশই বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে সংবিধানে সবার জন্য বিদ্যুত নিশ্চিত করার নির্দেশনা রয়েছে। আমরা সেটি নিশ্চিত করতে পেরেছি। আমাদের মন্ত্রণালয়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে শুধু পাঁচ বিলিয়ন ডলার নয়, ২০০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করতে হবে। আর লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের সুযোগ আমাদের দেশেই আছে। একটি ফোকাস গ্রুপের মাধ্যমে সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে, এক্ষেত্রে বিদ্যুত ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সম্ভব সকল সুবিধা প্রদান করা হবে।
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, সরকার ব্যবসা না করে ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দেয়। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে আমাদের শ্রম নির্ভর অর্থনীতিকে আজ শিল্প, সেবা ও প্রযুক্তি নির্ভরতায় রূপান্তরিত হয়েছে। বেসিসসহ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সংগঠনের নীতিগত দাবিকে আমলে নিয়ে, এই খাতের কর্পোরেট ট্যাক্স অবকাশ সুবিধা আগামী ২০২৪ সাল থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর বিষয়ে অর্থমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আইসিটি বিভাগ এবং সংগঠনগুলো একই ভাষায় কথা বলছি। দাবির পরিপ্রেক্ষিতে একটি রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্ট উইং প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।
ড. রুবানা হক বলেন, আমাদের গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে মাত্র ৭ শতাংশ অটোমেশন হয়েছে। ২০৩০ নাগাদ সেটি ৩০ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। আমাদেরকে সাবধানতার সঙ্গে কর্মসংস্থান ঠিক প্রবৃদ্ধিতে রেখে এই অটোমেশন করতে হবে। আমাদের প্রয়োজন স্মার্ট উতপাদন, এক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি খাত নতুন নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে এই স্মার্ট উতপাদনকে বাস্তবায়ন করতে পারে। আগামী ১০ বছরে গার্মেন্টস খাত ভিন্ন মাত্রায় পৌঁছাবে, এক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
রাসেল টি আহমেদ বলেন, বেসিস সাতটি বিষয়কে সামনে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরী মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন, ইন্ডাস্ট্রি প্রমোশন এবং পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ। দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে আমরা বিআইটিএমকে ইউনিভার্সিটিতে রূপান্তরে করার উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা যদি সেটি করতে পারি তাহলে তাহলে গার্মেন্টস খাতের মতো তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও যোগ্য জনবল তৈরি সম্ভব হবে। এ ছাড়া ইন্ডাস্ট্রি প্রমোশনে সরকারের সহায়তায় একটি সমন্বিত রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট উইং করতে চায় বেসিস। আর পাবলিক প্রাইভেট পার্টশীপের ক্ষেত্রে একটি রোডম্যাপ জরুরী।