চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ভালোভাবেই তৈরি হচ্ছে নতুন প্রজন্ম। কোভিড-১৯-এর বর্তমান পরিস্থিতিও থামিয়ে রাখতে পারেনি এই খুদে প্রোগ্রামারদের আগ্রহকে। ‘জানুক সবাই দেখাও তুমি’-এই স্লোগানে শিক্ষার্থীদের আইসিটি ও প্রোগ্রামিংয়ের প্রতি আগ্রহী করে তোলা ও তাদের প্রোগ্রামিং দক্ষতা যাচাই করার জন্য অনলাইনে অনুষ্ঠিত হলো জাতীয় হাইস্কুল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা ২০২০ (এনএইচএসপিসি২০২০)।
সারা দেশের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনলাইন প্রস্তুতি প্রতিযোগিতা, মহড়া প্রতিযোগিতা, বাছাই প্রতিযোগিতা ও অনলাইন জাতীয় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় প্রতিযোগিতা শেষে গতকাল (২৭ জুন) অনলাইনের মাধ্যমে এ প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণা এবং সমাপনী পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
এনএইচএসপিসি২০২০ এর ফলাফল ঘোষণা এবং সমাপনী পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।তিনি বলেন, স্বয়ংক্রিয় ডিজিটাল যুগের দিকে এগোতে হলে প্রয়োজন আমাদের প্রোগ্রামারদের যোগ্য করে গড়ে তোলা। আগামী দিনের চাহিদা মেটানোর জন্য, আগামী প্রজন্মের সদস্যদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার জন্য এবং মেধা ও জ্ঞান ভিত্তিক প্রজন্ম গড়ে তুলতে প্রোগ্রামিং শিক্ষায় ছেলেমেয়েদের উৎসাহ দেয়া। সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে এখন অনলাইনে ক্লাস করার সুযোগ পাচ্ছেন, অনলাইন প্রোগ্রামিং কন্টেস্টে অংশ নিচ্ছেন- এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিশ্ব পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে প্রোগ্রামিংকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়ার কথাও বলেন তিনি । আমাদের চারপাশে যত সমস্যা আছে তার প্রযুক্তি নির্ভর সমাধানের মানসিকতা নিয়ে গড়ে উঠবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি’র বক্তব্যে বলেন, সারা দেশ থেকে এই প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় সাড়ে পাঁচ হাজার ছেলেমেয়েদের অংশগ্রহণ প্রমাণ করেছে যে তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের যে মূলমন্ত্র তা বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে এবং আমরা তার ফলাফলও পেতে শুরু করেছি। ঢাকার বাইরের ছেলেমেয়েরা প্রমাণ করেছে সুযোগ পেলে যে কোন জায়গা থেকেই তারা ভালো করতে পারে। এই সুযোগটা আমদেরকেই তৈরী করে দিতে হবে।
এ ছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন এসিএম-আইসিপিসি ঢাকা সাইটের প্রাক্তন পরিচালক ড. আবুল এল হক , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স বিভাগের অধ্যাপক লাফিফা জামাল। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক পার্থপ্রতিম দেব। সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান।
অনলাইনে এনএইচএসপিসি২০২০ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আবেদন করে ৫ হাজার ৪৭৭ শিক্ষার্থী। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, দেশের সব জেলা এবং ৩৪৪ উপজেলা থেকেই শিক্ষার্থীরা এই আয়োজনের কুইজ ও প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এ আয়োজনে শিক্ষার্থীরা জুনিয়র ক্যাটাগরি (ষষ্ঠ-নবম শ্রেণি) এবং সিনিয়র ক্যাটাগরি (দশম-এসএসসি-দ্বাদশ শ্রেণি ও পলিটেকনিক প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী), এই দুইটি ক্যাটাগরিতে কুইজ অথবা প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এ ছাড়া একই সময়ে আইসিটিতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজন করা হয় আইসিটি কুইজ প্রতিযোগিতা।
শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করার জন্য অনলাইনে লাইভে বাগেরহাটের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসাদুজ্জামান সোহেল, (সফটওয়্যার প্রকৌশলী) শুনিয়েছেন তার সাফল্যের কথা। এর পাশাপাশিও রাইহাত জামান নিলয় ( সফটওয়্যার প্রকৌশলী, গুগল) এবং হাসিব আল মুহাইমিন (সফটওয়্যার প্রকৌশলী, গুগল) ও শুনিয়েছেয়েন কিভাবে প্রোগ্রামিং করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদেরকে নিয়ে যাওয়া যায়।
আবার প্রোগ্রামিংয়ের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিয়াড ইন ইনফরমেটিক্স এ ব্রোঞ্জ প্রদক প্রাপ্ত এবং বর্তমানে ইএসএ রুব্রিক প্রতিষ্ঠানে সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত বাংলাদেশী মেয়ে বৃষ্টি শিকদারও শুনিয়েছেন কিভাবে জাতীয় হাইস্কুল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনের মাধ্যমে প্রোগ্রামিংয়ের জগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা যেন সহজে প্রোগ্রামিং শিক্ষা অর্জন করতে পারে তার জন্যে কেন বাংলা ভাষায় প্রোগ্রামিং বিষয়ক বই লিখে যাচ্ছেন, এ নিয়েও কথা বলেছেন তামিম শাহরিয়ার সুবিন (সফটওয়্যার প্রকৌশলী)। সাফায়েত আশরাফ (ঊর্ধ্বতন সফটওয়্যার প্রকৌশলী, সঁপি) এর মতো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার বিচারকও শুনিয়েছেন নিজের অভিজ্ঞতার কথা।
প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার জুনিয়র ক্যাটাগরীতে বিজয়ী হয়েছে নুফিক চৌধুরী (হবিগঞ্জ সরকারী হাই স্কুল, সিলেট),দেবজ্যোতি দাস সৌম্য (জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সিলেট), যারিফ রহমান (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল, রাজশাহী), আরিয়ান আহমেদ ( ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড স্কুল,ঢাকা), ওয়াসিফ জামিল সিদ্দিকী ( হবিগঞ্জ সরকারী হাই স্কুল, সিলেট), আহসান হারিছ আহমেদ (পাবনা জিলা স্কুল, রাজশাহী), জিতেন্দ্র বড়ুয়া ( ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, চট্টগ্রাম), আসনাফ মুহতাদী ( দিনাজপুর জিলা স্কুল,রংপুর), মোহাম্মাদ আবু সাদিক (বরিশাল জিলা স্কুল, বরিশাল), মহতাসিম মনোয়ার (কুমিল্লা জিলা স্কুল চট্টগ্রাম)। এবং মেয়েদের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তাজরিয়ান তাহলিল (ডঃ খাস্তগীর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম)।
প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার সিনিয়র ক্যাটাগরীতে বিজয়ী হয়েছে রেজওয়ান আরেফিন ( ঢাকা কলেজ, ঢাকা), আরমান ফেরদৌস ( নটরডেম কলেজ, ঢাকা), তাসমীম রেজা ( নটরডেম কলেজ, ঢাকা), মামনুন সিয়াম ( চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম), দাইয়ান নুরী দাহী ( এম সি কলেজ, সিলেট), সাফিন আলম ( ঢাকা সিটি কলেজ, ঢাকা), সাফিন আহমেদ ( রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, ঢাকা), আহমেদ নাসের তাহসিন চৌধুরী ( স্কলারসশম , সিলেট), আল আমিন তুষার ( একাডেমিয়া, ঢাকা ), আরশাদ আয়মান ( রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, ঢাকা)। এবং মেয়েদের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নাজিয়া জান্নাতী (খুলনা সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, খুলনা )।
কুইজ প্রতিযোগিতার জুনিয়র ক্যাটাগরীতে বিজয়ী হয়েছে তাসনিম তমাল (ব্রাহ্মণগাঁ হাই স্কুল), মোঃ মেহেরাব হোসেন (সেরোয়েল সরকার উচ্চ বিদ্যালয়), মোসাম্মৎ আমেনা আকতার (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ), আরিফ উদ্দিন আহমেদ (ঢাকা সিটি কলেজ), সামিয়া রহমান (পটিয়া সরকারি কলেজ), সাজিদ মোশাররফ (কাফকো স্কুল অ্যান্ড কলেজ), রাতুল পাল (সরকারি সুন্দরবন আদর্শ কলেজ), দুর্গা প্রশাদ সরকার সুদিপ (সরকারি বিএম কলেজ, বরিশাল), প্রিতম দাস (নটরডেম কলেজ), মোঃ আবির হোসেন (নটরডেম কলেজ)।
কুইজ প্রতিযোগিতার সিনিয়র ক্যাটাগরীতে বিজয়ী হয়েছে মোঃ গাজিউর রহমান নূর (বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সিলেট, জান্নাত জামিমা (হাউসিং সেটেলমেন্ট পাবলিক স্কুল, নাজিফা বিনতে হাসান (বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটোরিয়াল), অর্ণব সুর (নোয়াখালি জিলা স্কুল), মাজেদুল কবির বাইতুল (অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়), মোঃ মোজতাবির মাহফুজ রাহাত (হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, তানভির ইয়াসির (রংপুর জিলা স্কুল), আনাস ইসবাত হাসান (খুলনা পাবলিক কলেজ), মোঃ সাফায়াত হোসেন সাফি (ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়),মাসরুর উল আলম (হালিশহর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ)।
বিজয়ীদের মধ্য থেকে প্রোগ্রামিংয়ের দুই ক্যাটাগরির সেরা তিনজনকে ল্যাপটপ এবং কুইজে দুই ক্যাটাগরির সেরা তিনজনকে স্মার্ট ফোন উপহার দেয়া হবে।
জাতীয় হাইস্কুল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজক আইসিটি বিভাগ এবং বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিল। বাস্তবায়ন সহযোগী বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন)। জাজিং প্লাটফর্ম টাফ.কো এবং একাডেমিক সহযোগিতায় আরডেন্ট প্রোগ্রামার্স।