শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার, কেন্দ্রীয়ভাবে শিক্ষা কাঠামোর সমন্বয় এবং শিক্ষকদের যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে অর্জিত হতে পারে জাতিসংঘ কর্তৃক নির্ধারিত এসডিজি-৪ লক্ষ্যমাত্রা। বিশ্বের ১০টি দেশের শিক্ষাবিদ, পলিসি মেকার এবং উন্নয়নকর্মীদের সমন্বয়ে ‘এসডিজি-৪: মানসম্মত শিক্ষার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের উপায়’ শীর্ষক অনলাইনে আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে উঠে এসেছে এমন পরামর্শ।
বিশ্ব শিক্ষক দিবস এবং মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এটুআই’র যৌথ উদ্যোগে ৬ মাসব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হয় এ সেমিনার। সেমিনারে গেস্ট-অব অনার ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক এবং পর্যবেক্ষক ছিলেন চট্রগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস অ্যান্ড হিউম্যানিটিস ফ্যাকাল্টি ডিন ড. মুহাম্মদ রিয়াজ মাহমুদ ও ভারতের দ্য মিলেনিয়াম স্কুলের অধ্যক্ষ ড. গুরুদ্বীপ সিং। বক্তব্য প্রদান করেন এটুআই’র এডুকেশন টেকনোলজি এক্সপার্ট রফিকুল ইসলাম, স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন চট্রগ্রামের সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মো. আখতার হোসেন কুতুবী এবং সমাপনী বক্তব্য রাখেন সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ কবির হোসেন।
সেমিনারে বিভিন্ন দেশের শিক্ষকমণ্ডলী তাঁদের স্ব-স্ব দেশের শিক্ষা কাঠামো, ব্যবস্থাপনা, সংকট এবং সম্ভাবনার প্রেক্ষিতে এসডিজি-৪ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের উপায়গুলো তুলে ধরেন। এ সময় তাঁরা শিক্ষকদের আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষার জন্য প্রয়োজনে অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে আন্তঃদেশীয় প্রশিক্ষণ আয়োজনের পরামর্শ প্রদান করেন। এ ছাড়া কারিগরি এবং দক্ষতা ভিত্তিক ই-লার্নিং-এর পাশাপাশি সমৃদ্ধ জাতি গঠনে শিশুদের পরিপূর্ণ মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেন। এক্ষেত্রে সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বয়ে শিক্ষা কাঠামো গঠনের পরামর্শও উঠে আসে।
প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, এসডিজি-৪ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে আমাদের সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মাঝে জেন্ডারভিত্তিক সমতার ভিত্তিতে সকলের অংশগ্রহণ এবং দক্ষতা ভিত্তিক মানসম্মত শিক্ষার বিষয়গুলো প্রাধান্য পেয়েছে। তিনি সাধারণ শিক্ষায় বাংলা, ইংরেজি, ম্যাথম্যাটিকস এবং বিজ্ঞানের সমন্বয়ের পাশাপশি মানসম্মত শিক্ষার জন্য দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার প্রতিও গুরুত্বারোপ করেন।
ড. মুহাম্মদ রিয়াজ মাহমুদ বলেন, এসডিজি-৪ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমাদের উচিত সামাজিক ও মানবিক জাতি গঠন এবং জব মার্কেটের বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
ড. গুরুদ্বীপ সিং বলেন, উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজন শিশুদের জন্য নিরাপদ এবং গঠনমূলক একটি শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যেখানে সে আগামী পৃথিবী গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখবে। এ সময় তিনি যে কোন সংকটেও যাতে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা যায়, এমন শিক্ষা ব্যবস্থাপনার পরামর্শ প্রদান করেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্রগ্রামের জামালখান কুসুম কুমারী সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক লুতফুন্নেসা খানম। চট্রগ্রাম কলেজ অব সাইন্সের ইংরেজি প্রভাষক মো, শিহাবুল আনোয়ারের তত্বাবধানে মূল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ) চৌধুরী সামিয়া ইয়াসমীন, ভারতের সরকারি স্কুল শিক্ষক মনীষা পাভি, মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. রইসউদ্দীন খান, ভারতের বিল্লাবং আন্তর্জাতিক উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অদিতি কালকারনি, আমেরিকার কলেজ অব এডুকেশনের অধ্যাপক ড. শ্যারন সুবরিনাথ, পেরুর পাবলিক ইন্সটিটিউটের ইংরেজি বিভাগের প্রধান এলিজাবেথ এম. চুরাতা চামবি, ইংল্যান্ডের এডুকেশন অ্যান্ড সোশ্যাল রিসার্চ ইন্সটিটিউটের গবেষক ড. স্টিফেন এল কারলি, নাইজেরিয়ার ক্যালিব ব্রিটিশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষক প্রিন্স অলিসিগুন মাইকেল আদিনিই, অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডের পিএইচডি প্রার্থী মো. মাকসুদ আলী, নাইজেরিয়ার ন্যাশনাল টিচার্স ইন্সটিটিউটের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা ড. জয়নব মুহাম্মদ শুয়াইবু, ঢাকার সরকারি বাংলা কলেজের ভাইস প্রিন্সিপ্যাল অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম খান এবং চট্রগ্রামের বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী কলেজের অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেইন মো. জাহাঙ্গীর আলম খান।
উল্লেখ্য, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এটুআই প্রোগ্রামের যৌথ উদ্যোগে বিশ্বের ১০০টি দেশের শিক্ষক, শিক্ষা অফিসার, গবেষক এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে ‘শিক্ষক: সংকটে নেতৃত্ব, নতুন করে ভবিষ্যতের ভাবনা’ শীর্ষক ৬ মাসব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানের এটি ছিলো প্রথম সেমিনার। প্রায় ২১টি সেমিনার, ৫টি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ৬টি সাইড ইভেন্টস-এর সমন্বয়ে আয়োজিত এ অনুষ্ঠান আগামী ১৭ মার্চ ২০২১ সালে শেষ হবে।