বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতি (বিসিএস) সদস্যদের ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কিত সম্যক ধারণা প্রদান করতে ‘ডিজিটাল মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি ফর বিজনেস’ শীর্ষক একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে। গতকাল শনিবার (৭ নভেম্বর) অনলাইনে এই প্রশিক্ষন কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন আইসিটি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এন এম জিয়াউল হক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডিজিটাল মার্কেটিং অ্যান্ড ওয়েব পোর্টাল ডেভেলপমেন্ট সাব কমিটির সদস্য সচিব ও বিসিএস পরিচালক মো. রাশেদ আলী ভূঁইয়া। বক্তব্য রাখেন বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলের (বিপিসি) কো-অর্ডিনেটর এ এইচ এম শফিকুজ্জামান, বিসিএসের উপদেষ্টা মোজাম্মেল বাবু, বিসিএস মহাসচিব মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম এবং যুগ্ম মহাসচিব মো. মুজাহিদ আল বেরুনী সুজন। সভাপতিত্ব করেন বিসিএস সভাপতি মো. শাহিদ-উল-মুনীর। সঞ্চালনা করেন ডিজিটাল মার্কেটিং অ্যান্ড ওয়েব পোর্টাল ডেভেলপমেন্ট সাব কমিটির চেয়ারম্যান আরিফুল হাসান অপু এবং পরিচালনা করেন বিজকোপের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান কার্যনির্বাহী নাহিদ হাসান।
এন এম জিয়াউল হক বলেন, ডিজিটাল মার্কেটিং শব্দটি যত সহজে বলা যায়, এর ক্ষেত্র কিন্তু মোটেও অত ছোট নয়। আমরা ফোরজি অতিক্রম করে ফাইভজি এর যুগে প্রবেশ করছি। ফিজিক্যাল যোগাযোগরে চেয়ে এখন অনলাইনে যোগাযোগ আরও বেশি কার্যকর। সময়কে কাজে লাগিয়ে সহজ কথা কিভাবে বেশি গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো যায় তার অন্যতম মাধ্যম ডিজিটাল মার্কেটিং। আমাদের ব্যবসায়ীরা ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের সঠিক ব্যবহার শিখে নিজেদের ব্যবসাকে সমৃদ্ধ করবে তা কর্মশালাগুলোর মাধ্যমে শিখে নিতে পারবে। এতে শুধু ক্রেতারাই লাভবান হবেন এমন নয়। দুপক্ষই এখানে বেচাকেনা এবং কেনাকাটা করে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন। নিজেকে যোগ্য করে তোলার সময় এখন। ডিজিটাল মার্কেটিংকে ভালোভাবে রপ্ত করে গ্রাহকদের উন্নত সেবা প্রদান করতে পারলেই ব্যবসায়ী হিসেবে আপনার সফলতা নিশ্চিত। তবে এর সঙ্গে সততাও গুরুত্বপূর্ণ।
এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সবকিছুতেই ডিজিটাল ছোঁয়া লেগেছে। সোশ্যাল কমিউনিকেশনসহ সবক্ষেত্রেই এখন ব্যবসার প্রসার বৃদ্ধি পেয়েছে। লকডাউন পরিস্থিতির কারণে এই বিষয়গুলো আরও বেশি দৃশ্যমান। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আইসিটি ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসাকে লাভজনক খাতে পরিণত করতে পারবে।
মোজাম্মেল বাবু বলেন, ২০০৮ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দেন। তখন থেকেই মূলত দিন বদলের যাত্রা। ইনফোর সরকার এক এবং দুই এর কল্যাণে ইউনিয়ন পর্যায়েও পৌঁছে গেছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ। বাংলাদেশের সব জায়গায় এখন ইন্টারনেটের সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে। ২০০৯ সালে সরকার ইলেকট্রনিক পেমেন্ট সিস্টেম প্রণয়ন করে। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে মানুষ এখন গ্রামে বা প্রত্যন্থ অঞ্চলে বসেও তার প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সম্পন্ন করছে। তাই ব্যবসা এখন আর অঞ্চল বা জেলা বা শহর ভিত্তিক নেই। ব্যবসা এখন পুরো দেশে। ব্যবসাকে প্রান্তিক গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেয়ার অন্যতম হাতিয়ার ডিজিটাল মার্কেটিং।
মো. রাশেদ আলী ভূঁইয়া বলেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কোন বিকল্প নেই। যেকোন ব্যবসায় গ্রাহকদের কাছে সহজে পণ্যের বার্তা পৌঁছে দেয়ার কার্যকর মাধ্যম হলো ডিজিটাল মার্কেটিং। সাধারণ বিপণন নীতির সঙ্গে ডিজিটাল মার্কেটিংকে যুক্ত করে প্রচারণা অব্যাহত থাকলে সাফল্য আসবেই। ডিজিটাল মার্কেটিং একটি বৃহৎ বিষয়। আজ আমরা শুরু করেছি। ভবিষ্যতেও এই বিষয়ের ওপর আমাদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে।
মো. শাহিদ-উল-মুনীর বলেন, ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দেয়, তখন আমি বিসিএস এর মহাসচিব হিসেবে দায়িত্বরত ছিলাম। ২০০৯ সালে আমরা ডিজিটাল সামিট করেছিলাম। অনেকেই ডিজিটাল বাংলাদেশ শব্দটিকে অকল্পনীয় বলে প্রকাশ করেছিল। আমরা ভরসা রেখেছিলাম। বিশ্বাস করেছিলাম। সেই সময় আমরা তিন দিনব্যাপী সাধারণ মানুষকে ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্পর্কে বুঝাতে সেমিনারের আয়োজন করেছিলাম। আর আজ ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল আমাদের চোখে প্রত্যক্ষভাবেই দৃশ্যমান। ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়ে আমাদের প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি আইসিটি ব্যবসায়ীদের জন্য যুগোপযোগী।
নাহিদ হাসান বলেন, ডিজিটাল মার্কেটিং বড় ব্যবসায়ীদের চেয়ে ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনি হয়তো খরচের দিক থেকে বড় প্রতিষ্ঠানের সমান হতে পারবেন না কিন্তু ডিজিটাল মার্কেটিং এ আপনার এবং বড় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। ডিজিটাল মার্কেটিংকে পরিপূর্ণভাবে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিতে তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হয়। কার্যকর ওয়েবসাইট, রাইট ইনবাউন্ড এবং আউটবাউন্ড মার্কেটিং প্ল্যানকে যদি ঠিকমতো ব্যবহার করা যায় তাহলে আপনার প্রদর্শিত বা বিক্রির জন্য পণ্য সহজেই ডিজিটাল প্লাটফর্মে ক্রেতার কাছে পৌঁছে যাবে। এ ছাড়া এসইও, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, আকর্ষণীয় কনটেন্ট, পণ্যের ব্যবহারের নিয়ম, সমস্যা এবং সমাধানের উপর ভিডিও বা অডিও গ্রাহকদের দৃষ্টি সহজেই আকর্ষণ করতে পারে। ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করে সেই অনুযায়ী বিপণন নীতি করা গেলে এই প্লাটফর্মে সফলতা সহজেই অর্জন করা যায়।
অনলাইনে প্রায় দুই শতাধিক বিসিএস সদস্য এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন। ডিজিটাল মার্কেটিং প্রশিক্ষণ কর্মশালা শেষে র্যাফেল ড্র এবং ডিজিটাল সার্টিফিকেট বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়। আইসিটি বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (আইবিপিসি) এবং বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতির (বিসিএস) যৌথ উদ্যোগে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।