গতকাল (২ জুন) সন্ধ্যায় আইসিটি বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল এবং বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতির (বিসিএস) যৌথ আয়োজনে অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয় ‘করোনা বিরোধী যুদ্ধ জয়ের কৌশল’ শীর্ষক আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় সম্মানিত অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলের (বিপিসি) কো-অর্ডিনেটর এ এইচ এম শফিকুজ্জামান। অতিথি আলোচক ছিলেন বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম জিনরহস্য উন্মোচনকারী অনুজীব বিজ্ঞানী ড. সমীর কুমার সাহা।
অনলাইন আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিসিএস সভাপতি মো. শাহিদ-উল-মুনীর। মুখ্য আলোচক হিসেবে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এক্সেল টেকনোলজিসের পরিচালক বীরেন্দ্র নাথ অধিকারী। কানাডার টরেন্টো থেকে এই আলোচনা সভায় অংশ নেন ড. সমীর কুমার সাহার স্ত্রী অনুজীববিজ্ঞানী ড. সেতারুন নাহার। অনলাইন আলোচনা সভায় করোনা প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে নিজেদের মতামত প্রদান করেন বিসিএসের জ্যেষ্ঠ সদস্য শাফকাত হায়দার, এস এম কামাল, এস এম ইকবাল, এ এস এম আব্দুল ফাত্তাহ, কামরুল ইসলাম, গৌতম সাহা প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বিসিএস যুগ্ম মহাসচিব মো. মুজাহিদ আল বেরুনী সুজন।
করোনা বিরোধী যুদ্ধ জয়ের কৌশল শীর্ষক অনলাইন আলোচনা সভায় মোস্তাফা জব্বার বলেন, পৃথিবী এখন সংকটময় সময় অতিক্রম করছে। দেশে আমরা দুইটি লড়াই একসঙ্গে করছি। একদিকে করোনা অন্যদিকে বেঁচে থাকার লড়াই। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যদেশের মানুষের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশের মানুষ মেধাবী। সারা পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দেয়ার ক্ষমতা বাংলাদেশীদের রয়েছে। রেডিও আবিষ্কার থেকে শুরু করে পৃথিবীর তাক লাগানো আবিষ্কারে বাংলাদেশীদের অবদান রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমার জীবনে আমি কলেরার মতো মহামারি রোগ দেখেছি। তখন আমাদের অঞ্চলে এমবিবিএস চিকিৎসকের দেখা পেতে ১৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হতো। এলাকার ফার্মেসি থেকে সাধারণ ঔষধ খেয়ে রোগ প্রতিরোধ করতাম। তাই আমি বিশ্বাস করি আমাদের রোগ প্রতিরোধে যে পরিমাণ সক্ষমতা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই রয়েছে তাতে করোনা আমাদের পরাজিত করতে পারবে না। স্বাস্থ্য প্রযুক্তির উন্নয়নে আমাদের গড় আয়ু বেড়েছে। আমাদের স্বাস্থ্য গবেষকরা নিশ্চয় আমাদের ভালো থাকার পথ বাতলে দিবেন।
ড. সমীর কুমার সাহা বলেন, করোনা প্রতিরোধে প্রচুর ঔষধ নিয়ে গবেষণা চলছে। ঔষধ আবিষ্কার হলেও সহজলভ্যতা অপ্রতুল। ড্রাগসতো বললেই আবিষ্কার হয়ে যায় না। কোন কোন এন্টিবায়েটিক আবিষ্কার হতে ৭ বছরেরও বেশি সময় লেগেছে। ৫০টির বেশি ঔষধ নিয়ে গবেষণা চলছে। শতভাগ সফলতা পাওয়া গেছে এমন কোন ঔষধ এখনো আবিষ্কার হয়নি। তুলনামূলকভাবে প্লাজমা ট্রান্সফারে বেশি সফলতা মিলছে। তবে সময়টা এখানে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে গেলে তখন আসলে শরীরে এন্টিবডি তৈরি করা কঠিন।
এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রভাব এখনো জনজীবনে স্পষ্ট। কতদিন পর্যন্ত এই অবস্থা চলমান থাকবে তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। কোভিড-১৯ রোগকে আতঙ্ক হিসেবে না নিয়ে বরঞ্চ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করেই আমাদের জীবন পরিচালিত করতে হবে। কারণ জীবনকে থামিয়ে রাখার কোন সুযোগ নেই। বাঁচতে হলে কাজ করে যেতে হবে। এই আলোচনা থেকে করোনাকালীন সময়ে নিজেদের করণীয় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাবেন।
মো. শাহিদ-উল-মুনীর বলেন, সারা পৃথিবী জুড়ে এখন করোনা ভাইরাসের ভীতি। আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। এই সংকটময় সময়ে আমাদের কীভাবে চলা উচিৎ তা নিয়েই আজকের আলোচনা সভা। একসময় কলেরাও মহামারী রোগ ছিল। আমরা এই রোগের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। করোনাকেও এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। কোভিড-১৯ কে মেনে নিয়েই আমাদের জীবনকে গুছিয়ে নিতে হবে।
বীরেন্দ্র নাথ অধিকারী, বলেন, আমাদের যেন আরেকটা স্প্যানিশ ফ্লুর মুখোমুখি না হতে হয়। স্প্যানিশ ফ্লুর শুরুর দিকে মানুষ যখন কোয়েরেন্টেইন পালন করেছিল তখনও রোগটি ততটা গ্রাস করতে পারেনি। পরবর্তীতে যখন লকডাউন তুলে দেয়া হলো, তখন কোটি কোটি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়। ১৯১৮ থেকে ১৯১৯ পর্যন্ত ৫০ কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল। ৫ কোটি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছিল। তাই আমাদের সতর্ক হতে হবে। প্রতিষ্ঠান ও প্রযুক্তি সরঞ্জামাদি’র বস্তুগত, বিমূর্তগত ও যৌক্তিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ভালো অভ্যাস গড়ে তোলার পাশাপাশি বাসায় বসে কাজ করার অনুশীলন বাড়াতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে কোন ছাড় দেয়া যাবে না। পাশাপাশি গরম পানি, চা ও ভিটামিন সি যুক্ত খাবার গ্রহণের অভ্যাস করতে হবে।