টেকভিশন ডেক্স: বাংলাদেশের স্টার্টআপ খাতে বিশেষ অবদানের মাধ্যমে ফাহিম সালেহ তরুণ উদ্যোক্তাদের মধ্যে যে প্রেরণা যুগিয়েছেন তার আনুষ্ঠানিক স্মৃতিচারণ করেছে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যান্ড প্রাইভেট ইক্যুইটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ভিসিপিয়াব)। ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে তার হটাৎ চলে যাওয়ায় শোক প্রকাশ করা হয় এবং মাত্র ৩৩ বছর বয়সেই কীভাবে পাঠাও, গোকাডা, জোবাইকসহ অনেক উদ্ভাবনী স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠা ও বিনিয়োগ করেছে সে বিষয় তুলে ধরা হয়।
স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে যোগদান করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যান্ড প্রাইভেট ইক্যুইটি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শামীম আহসান।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ফাহিম সালেহের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন এবং তাকে ব্যতিক্রমী উদ্ভাবনী মনের একজন মানুষ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, তার হটাৎ করে চলে যাওয়া আমাদের শোকবিহ্বল করে তুলেছে। আমরা আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের একজন খুবই মেধাবী তরুণ উদ্যোক্তাকে হারিয়েছি।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, তার সফলতার কারণে অনেক তরুণ উদ্যোক্তা চাকরি খোঁজার পরিবর্তে নতুন উদ্ভাবনী ব্যবসায় ধারণা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ তরুণ প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের একজন আইকনকে হারালাম।
বাংলাদেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমে ফাহিম সালেহ একজন পথপ্রদর্শক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি সে বিশ্বব্যাপী স্টার্টআপ ব্যবসায়কে ছড়িয়ে দিতে তার একাগ্র চেষ্টাকে মেলে ধরতে পেরেছিলো, বলেন ভিসিপিয়াবের চেয়ারম্যান শামীম আহসান।
শামীম আহসান আরও বলেন, উন্নয়নশীল দেশে ব্যতিক্রমী দর্শনের উদ্ভানী চিন্তার মাধ্যমে প্রযুক্তিবিশ্বে একজন উজ্জ্বল দৃষ্টান্তের উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ফাহিম। ফাহিম এবং আমি জোবাইক বোর্ডে এবং অন্যান্য প্রকল্পে কাজ করার সময় আমি আবিষ্কার করেছি যে তিনি একজন স্বপ্নদ্রষ্টা, ও উদ্ভাবনী মানুষ এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে ছিলেন তৎপর। তার হটাৎ চলে যাওয়া আমাদেরকে শোকাহত করেছে এবং আমরা সত্যিকারের এমন একজন উদ্ভাবনী মানুষকে হারিয়েছি যে আমাদের দেশে স্টার্টআপগুলোকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিয়েছিলো।
ভিসিপিয়াবে সাধারণ সম্পাদক শওকত হোসেন তার বক্তব্যে ফাহিম সালেহের অবদান এবং তার হটাৎ চলে যাওয়ায় কতোটা শূণ্যস্থান তৈরি হয়েছে সেটি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ফাহিমের মতো তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠিত পাঠাওয়ের মতো স্টার্টআপ আমাদের স্টার্টআপ অর্থনীতিতে প্রবর্তক হিসেবে কাজ করছে। তার চলে যাওয়ায় যে শূণ্যতা তৈরি হয়েছে তা সহজে পূরণ হবার নয়।
অ্যাঙ্করলেস বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা অংশীদার এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাহাত আহমেদ বলেন, সালেহ শুধুমাত্র একজন উদ্যোক্তা নয়, একজন প্রেরণারও নাম; যে বাংলাদেশের টেক স্টার্টআপে অনেক উদ্যোক্তাকে কমিউনিটি তৈরিতে প্রেরণা দিয়েছে।
এএসএল সিস্টেম লিমিটেডের পরিচালক এবং যেতেচাও ডট কমের সহ-প্রতিষ্টাতা মেহনাজ তাবাসসুম বলেন, তার মতো অনেক উদ্যোক্তার প্রয়োজন রয়েছে যারা দেশকে বিশ্বমানের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। যেতেচাও ডট কমের জন্য তাঁর সাথে কাজ করে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে তিনি আমাদের দেশে একটি আন্তর্জাতিক ক্যালিবার নিয়ে এসেছেন। তাকে হারানো স্মার্টআপ কমিউনিটির জন্য বড় দুঃখ ও বেদনার।
একটি ভৌগলিক অঞ্চলে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের উন্নয়নে আপনার একটি অঞ্চলে প্রাথমিকভাবে সফলতার দরকার। পাঠাও, জো-বাইক এবং অনন্যা স্টার্টআপ এর মাধ্যমে আমাদের ইকোসিস্টেমের জন্য ফাহিম সেটি করে দেখিয়েছিল, বলেন ইনফ্লেকশন ভেঞ্চারস লিমিটেডের অংশীদার তানভীর আলী। তিনি ফাহিম সালেহের প্রতি শোক জ্ঞাপন করে বাংলাদেশের স্টার্টআপ অর্থনীতিতে তার অবদান তুলে ধরেন।
ওয়াল-উল-মারুফ মতিন, মাসলিন ক্যাপিটাল লিঃ এর প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ফাহিম তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য দুর্দান্ত অনুপ্রেরণা ও রোল মডেল ছিলেন। তার হঠাৎ বিদায় আমাদের সবার জন্য একটি বিশাল ক্ষতি।
পাঠাওয়ের সিইও হুসেন এম ইলিয়াস ফাহিমের অকাল মৃত্যুকে “বিধ্বংসী” ও “অবাক করা” বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি আরও যোগ করেছিলেন, “ফাহিম আমাদের মধ্যে সম্ভাবনা দেখেছিল, যখন পাঠাও ছিল এক ধারণা মাত্র। আমি তাঁর মতো খুব কম স্বপ্নদর্শী মানুষের সাথে দেখা করেছি – তিনি ছিলেন সত্যিকারের নির্মাতা।
জোবাইক প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী রেজা ফাহিমকে নিজের এবং প্রযুক্তি সম্প্রদায়ের জন্য একটি সত্যিকারের অনুপ্রেরণা হিসাবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেছিলেন, “ফাহিম সালেহই সেই ব্যক্তি যিনি জোবাইক, আমাদের স্বপ্ন, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রথম বিশ্বাস করেছিলেন এবং জোবাইককে গড়ে তোলার জন্য আমাদের সমর্থন করার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন। তিনি আমাদের প্রথম এঞ্জেল এবং একই থাকবেন!