সাইবার অপরাধ একটি সীমানাহীন অপরাধ। সাধারণত দেশে ১৬ থেকে ২৪ বছরের নারীরা এ অপরাধে সবচেয়ে বেশি শিকার। এ পর্যন্ত সাইবার অপরাধে ছয় হাজারেরও বেশি মামলা হয়েছে। যার মধ্যে সাইবার জগতের ৬৮ শতাংশ নারী সাইবার অপরাধের শিকার। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, সাইবার স্পেস নিরাপদ রাখতে এবং ভুক্তভেগীদের আইনি সহায়তা দিতে পুলিশ সদর দফতরের এলআইসি শাখার অধীনে চালু করা হয়েছে ‘পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন’ (Police Cyber Support for Women) ইউনিট। নতুন এই ইউনিটের বিশেষত্ব হলো এখানে যারা সেবা দেবেন, তদন্ত করবেন, তারা সবাই পুলিশের নারী সদস্য। যার ফলে ভিকটিমরা নির্দ্বিধায় তাদের সমস্যাগুলো বলতে পারবেন।
আজ সোমবর (১৬ নভেম্বর) রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ সেবা কার্যক্রমের উদ্ধোধন করেন বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ। অনুষ্ঠানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত আইজিপি (এঅ্যান্ডও) ড. মো. মইনুর রহমান চৌধুরী,পুলিশের বিশেষ শাখার প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মীর শহীদুল ইসলামসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
যে সব অপরাধের ক্ষেত্রে এখানে অভিযোগ করা যাবে তা হল, ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া, সোশ্যাল মিডিয়ার আইডি হ্যাক করা বা হ্যাক করার মাধ্যমে প্রতারণা, ছবি বা ভিডিও এডিট করে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি, কারও ছবি ব্যবহার করে আপত্তিকর কন্টেট দিয়ে ফেইক আইডি তৈরী করা, ফোন নম্বর বিভিন্ন খারাপ পোস্টে/সাইটে ছড়িয়ে দেয়া, সাইবার বুলিং ও হ্যারেসমেন্ট, অনলাইনে আপত্তিকর ছবি/ভিডিও/তথ্য ফাঁস করার হুমকি দিয়ে অর্থ দাবী করা এবং যৌন হয়রানিমূলক মেসেজ/মেইল/লিংক পাঠানো।
সাইবার স্পেসে ভার্চ্যুয়াল জগতে নারীরা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিকসহ নানাভাবে সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন। এ ধরনের অপরাধ দমনে নারী ভুক্তভোগীদের আইনি সহায়তা দিতে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন ইউনিটের যাত্রা হয়েছে। নতুন এই কার্যক্রমের সেবা দেয়ার জন্য একটি হটলাইন নাম্বার (০১৩২০-০০০৮৮৮) চালু করা হয়েছে পাশাপাশি জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ নম্বরের মাধ্যমে নারী ভুক্তভোগীরা তাদের অভিযোগ জানাতে পারবেন। এ ছাড়াও ই-মেইল (cybersupport.women@police.gov.bd) ও ফেসবুক পেজে (URL: https://m.facebook.com/PCSW.PHQ/)মেসেজ করে ভুক্তভোগী নারীরা তাদের অভিযোগ জানাতে পারবেন।
ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, নারীদের সাইবার সহায়তা দিবে নারী পুলিশরাই। নারী পুলিশ সদস্যরাই পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন ইউনিট চালাবেন। তাদের পরিচয় গোপন রেখে আইনি সহায়তা দিতে এ ইউনিটে কাজ করবেন নারী পুলিশ সদস্যরা। আপনারা যারা সাইবার জগতে প্রবেশ করছেন, সাইবার জগতের ঝুঁকির বিষয়ে সচেতন হয়েই এটি ব্যবহার করা উচিত। তারপরও যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা তৈরি হয়। সে বিষয়ে আমরা কাজ করব। আমরা সাইবার ওয়ার্ল্ডকে নিরাপদ করতে চাই। পাশাপাশি নিরাপদ সাইবার স্পেস তৈরি করায় প্রয়োজনীয় তথ্য ও সচেতনামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
সাইবার ক্রাইম একটি বৈশ্বিক সমস্যা। সাধারণত দেশে নারীরা এই অপরাধে সবচেয়ে বেশি শিকার হয়। জাতিসংঘের একটি পরিসংখ্যানের তখ্য মতে সাইবার অপরাধের শিকার ভিকটিমের চার ভাগের তিন ভাগ হল নারী। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও সাইবার স্পেস নিরাপদ রাখতে এই উদ্যোগ।