নাগরিকদের ইন্টারনেট ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং দায়িত্বশীল নাগরিক তৈরিতে বাংলাদেশে চালু হয়েছে `উই থ্যিংক ডিজিটাল’ প্রোগ্রাম। ফেসবুকের উদ্যোগে উই থ্যিংক ডিজিটাল প্রোগ্রামটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়, আইসিটি বিভাগ এবং এটুআই’র সহযোগিতায় বাংলাদেশে চালু করা হয়েছে। অনলাইনে এর উদ্বোধন করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
অনলাইনে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, এটুআই’র প্রকল্প পরিচালক ড. মো. আব্দুল মান্নান, বিজিএমইএ’র সভাপতি রুবানা হক, ফেসবুকের দক্ষিণ এশিয়া পাবলিক পলিসি ডিরেক্টর আশ্বানি রানা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফেসবুক বাংলাদেশের পাবলিক পলিসি অ্যান্ড প্রোগ্রাম ম্যানেজার সাবনাজ রশিদ দিয়া। সঞ্চালনা করেন এটুআই’র পলিসি অ্যাডভাইজর আনির চোধুরী।
এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে নাগরিকদের ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতনতা বৃদ্ধি, দক্ষতা উন্নয়ন এবং সরকারি কর্মকাণ্ডে ডিজিটাল অ্যাম্বাসেডরশিপ সম্পৃক্তকরণ ছাড়াও শিক্ষক, পেশাজীবি এবং তরুণদের ডিজিটাল পরিচিতি সংরক্ষণ, গঠনমূলক চিন্তা, শ্রদ্ধা ও সহমর্মিতাপূর্ণ আচরণ এবং গুজব সম্পর্কে সচেতন থাকার বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। এ ছাড়া এই প্রোগ্রামে বিভিন্ন ট্রেনিং কোর্স, অনলাইন নিরাপত্তার দক্ষতা বিষয়ক শিক্ষা উপকরণ প্রদান, ডিজিটাল আইডেন্টিটি সংরক্ষণ, গঠনমূলক চিন্তাশক্তি তৈরি, সহমর্মিতা এবং সম্মানজনক অনলাইন আচরণ এবং গুজব থেকে দূরে থাকার বিষয় সংযুক্ত করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ফেসবুকের উই থ্যিংক ডিজিটাল প্রোগ্রাম এবং ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম মুক্তপাঠ যৌথভাবে ৫০ জন অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী শিক্ষক, ৩০ জন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পুলিশ এবং নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং ২০ জন তরুণ পেশাজীবীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করবে। উই থ্যিংক ডিজিটাল (লিংক-https://wethinkdigital.fb.com/bd/bd-bd/) ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, উই থ্যিংক ডিজিটাল এর মাধ্যমে নাগরিকদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সচেতনতা এবং অনলাইন মাধ্যমে ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন করে গড়ে তুলবে। প্রযুক্তি আজ নাগরিকদের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিচ্ছে এবং এর মাধ্যমে আমাদের জিডিপি বৃদ্ধি পাচ্ছে। শীঘ্রই বাংলাদেশ সকল ক্ষেত্রে ডিজিটাল হওয়ার মাধ্যমে আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে। আমাদের প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি, সাইবার নিরাপত্তা ও নৈতিকতা বিষয়ে সচেতনতা তৈরি এবং আমাদের শিক্ষা কার্যক্রমে আইসিটিকে যুক্ত করার আহ্বান জানান।
মহিবুল হাসান চৌধুরী বাংলা ভাষায় উই থ্যিংক ডিজিটাল প্রোগ্রাম উদ্যোগের জন্য আইসিটি বিভাগ, এটুআই এবং ফেসবুককে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ডিজিটাল পরিবর্তনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং জাতীয় শিক্ষা কাঠামোয় তথ্যপ্রযুক্তির অন্তর্ভুক্তির ওপরও জোর দেন। আমাদের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মিশে গেছে। একই সঙ্গে নাগরিকদেরও এর সঠিক ও নিরাপদ ব্যবহার জানতে হবে।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ৪র্থ শিল্প বিপ্লব এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষত ফেসবুক বিশেষ ভূমিকা রাখছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের কর্মযজ্ঞের প্রচারণায় ফেসবুক একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। বাংলাদেশের গ্রামের মানুষও এখন ডিজিটাল নাগরিক হওয়ার সুবিধা পাচ্ছেন। ফেসবুকের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে এই সফলতার গল্পগুলো ছড়িয়ে পড়ায় ফেসবুককে ধন্যবাদ প্রদান করেন।
এন এম জিয়াউল আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে এবং প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব আহমেদ জয়-এর দিকনির্দেশনায় ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন হচ্ছে অদম্য গতিতে। সেবার ক্ষেত্রে নাগরিকদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার লক্ষ্যে আমরা ডিজিটাল ডাটা সেন্টার তৈরি করেছি। তিনি এ সময় নাগরিকদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং নিরাপদ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় ‘উই থ্যিং ডিজিটাল’ প্রোগ্রামের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
ড. মো: আব্দুল মান্নান বলেন, একটি উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ এর স্বপ্ন দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যেখানে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে ই-কমার্স, ই-ব্যাংকিং, ই-গভর্নেন্স, সফটওয়্যারের ব্যবহারের মাধ্যমে নাগরিকদের জীবনমান উন্নত করবে।
রুবানা হক বলেন, ডিজিটাল পরিবর্তনের ফলে পেমেন্ট সিস্টেম নিরাপদ এবং সহজ হয়েছে। ডিজিটাল পেমেন্ট-এর আরও বৃহত পরিসর সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি উদ্যোক্তাদের জন্য সরকারকে পদক্ষেপ নিতে আহবান জানান। তিনি এ সময় ফেসবুকের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপের জন্য উতসাহ প্রদান করে সাংস্কৃতিক উন্নয়নের জন্য আরো কার্যকরি ভূমিকা রাখার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
আশ্বানি রানা বলেন, নাগরিকদের অনলাইন নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা সচেতন। আমরা বাংলাদেশে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, আইসিটি বিভাগ এবং এটুআইর সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। সমমনা ডিজিটাল ডিসকোর্স তৈরি এবং গঠনমূলক চিন্তার উতসাহ দেয়ার মাধ্যমে নাগরিকদের ইন্টারনেট ব্যবহারের অভিজ্ঞতা আমাদের কাম্য।