জি. দাস্তগীর তৌহিদ: ওপেন সোর্স হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার কোম্পানী এবং পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ডেভলাপমেন্ট বোর্ড প্রস্তুতকারক কোম্পানী “আরডুইনো”। শনিবার বিকেলে এক অনলাইন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। অনলাইন প্লাটফর্ম জুমে অনুষ্ঠিত হওয়া এই অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি প্রধান অতিথী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, আরডুইনো নামক এই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়টি ইতিমধ্যে অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক আইটি প্রতিষ্ঠান কোড১৯, বাংলাদেশ ভিত্তিক আইটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন) এবং আইওটি ফর বাংলাদেশ এর সাথে যৌথভাবে আমাদের দেশে কাজ করা শুরু করেছে। এরই অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সাথে বেসিক আরডুইনো এবং আইওটি কার্যকারিতা নিয়ে ৬০ জন গ্র্যাজুয়েটদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে এবং এই মুহূর্তে তারা আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশন অর্জনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশকে আইওটি ডিভাইস তৈরির কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলা ভাষায় আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশনের ব্যবস্থা, মাস্টার ট্রেনারদের প্রশিক্ষণ সহায়তা, আন্তর্জাতিক মানের আইওটি ল্যাব প্রতিষ্ঠা এবং আরডুইনো স্কুল কার্যক্রম প্রতিষ্ঠা অব্যহত থাকবে।
বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে “আরডুইনো” এর কার্যক্রম উদ্বোধন ঘোষণা করে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি বলেন,” যেই মূহুর্তে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে বাংলাদেশ অনেকদূর এগিয়েছে, ঠিক সেই মুহূর্তে ডিজিটাল ইনোভেশন ইকোসিস্টেম তৈরী করতে আজকের এই পদক্ষেপ এই গতিকে আরো প্রভাবিত করবে। এই উদ্যোগ আরডুইনো এর মত বিশ্বজনপ্রিয় এই প্ল্যাটফর্মকে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের দোড়গোড়ায় এনে দেবে।“ এটি বাংলা ভাষায় অনুমোদিত দক্ষ মানব সম্পদ তৈরী করতে সহায়ক হবেও তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।
পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ডেভলপমেন্ট বোর্ড প্রস্তুতকারক কোম্পানী আরডুইনোর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সিটিও মিঃ ডেভিড কুয়ার্তিলেস বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, “ আরডুইনোর প্রতি আস্থা রেখে বাংলাদেশে আরডুইনো শিক্ষার এই আনুষ্ঠানিক যাত্রা প্রশংসনীয়। আরডুইনো যেকোন জটিল প্রযুক্তিকে সকলের জন্য সহজ বোধগোম্য করতে সাহায্য করে। আমাদের কাছে এটা পরিস্কার যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা মানুষকে প্রযুক্তিতে দক্ষ করে তুলতে সাহায্য করে। আর তাই আরডুইনো এর আজকের এই আনুষ্ঠানিক যাত্রা বাংলাদেশকে ডিজিটাল ডিভাইস প্রস্তুতকারক এবং রপ্তানীকারক দেশ হিসবে প্রতিষ্ঠিত করতে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরীতে সাহায্য করবে।“
এছাড়া মুক্ত দর্শনের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার প্রতিস্ঠানের আরডুইনোর সার্টিফিকেশন প্রোগ্রামে এখন থেকে যুক্ত হয়েছে বাংলা ভাষা। অর্থাৎ বিশ্বের আর আটটি ভাষার সঙ্গে বাংলাভাষাতেও এই কারিগরী সনদ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যাবে। বাংলা ভাষাতে আরডুইনোর সনদ প্রাপ্তি ছাড়াও বিশ্বমানের এই সংস্থা দেশে কারিগরী লোকবল তৈরি এবং ২০২৫ সালে ইন্টারনেট অব থিংসের হার্ডওয়্যার তৈরির হাব হিসেবে বাংলাদেশের সহযাত্রী হিসেবে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রধান কারিগরী কর্মকর্তা ও আরডুইনো-এর অন্যতম সহ প্রতিস্ঠাতা ডেভিড কুয়ার্তিলেস।
আরডুইনোর প্রো/আইওটি, বিজনেস ডেভলাপার মাসিমো স্যাখ্যি বলেন,” কোড-১৯ এর মাধ্যমে বাংলাদেশে আরডুইনো এর যাত্রা নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমি অনেক উতসাহী।আরডুইনো একটি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম যা পৃথিবীর বিভিন্ন মার্কেটে কাজ করে। আমি আরডুইনোকে ঘিরে বাংলাদেশের এই আগ্রহকে সাধুবাদ জানাই এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল অটোমেশন ও পেশাভিত্তিক আরডুইনো এর বাস্তবিক প্রয়োগ নিয়ে সকলের মাঝে এই আগ্রহ দেখে আনন্দিত। “
আইওটি ফর বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ড. ইমরান মো. আমিন বলেন,” আরডুইনো শুধু একটি বোর্ড না কিংবা হার্ডওয়্যার টুল না, এর শুরুর দিকে যে মূলমন্ত্র ছিলো তা দেশের আইটি স্কিল এর উন্নয়নে এবং সকলের জন্য উন্মুক্ত করতে সহায়ক হবে। শিক্ষার্থীদের মাঝে রোবটিক্স, ইন্টারনেট অব থিংস প্রভৃতি বিষয়ে ডিজিটাল দক্ষতা বৃদ্ধিতে আরডুইনো এর এই যাত্রা দেশকে আরো সম্ভাবনাময় এবং সমৃদ্ধ করে তুলবে। “
কোড১৯ এর পরিচালক (বিজনেস ডেভলাপমেন্ট) ইমতিয়াজ ফারহান বিন হাবীব বলেন,” প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো একসাথে কাজ করলে দেশের এবং সমাজের প্রযুক্তিগত বিকাশ ঘটানো সম্ভব। আমাদের আজকের এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতে বাংলাদেশের আরডুইনো শিক্ষার্থী এবং পেশাদারদের জন্য সহায়ক হবে যাতে তারা তাদের আইটি দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারে। ইন্টারনেট অব থিংস এবং আরডুইনো এর মত ডিজিটাল ডিভাইন প্রস্তুতকরণ এবং রপ্তানীতে বাংলাদেশের রয়েছে অমিত সম্ভাবনা। “
এছাড়া শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন ডাটাসফট লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং প্রম্তাবিত বাংলাদেশ ডিজিটাল ডিভাইস ম্যানুফ্যাকচারিং এসোসিয়েশেনের মাহবুব জামান।
অনুষ্ঠানের সভাপতি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, “শুধু কোড লেখার জন্য আমাদের আঙ্গুলের ব্যবহারই যথেষ্ট নয়, কাজে লাগাতে হবে হাত দুটোকেও। হার্ডওয়্যার কে কাজে লাগিয়ে খুজতে হবে নতুন সম্ভাবনা। আমি আজ অত্যন্ত আনন্দিত যে আরডুইনো এর মত আন্তর্জাতিক কার্যক্রম বাংলাদেশে বাংলা ভাষায় চালু হয়েছে এতে করে দেশের সব স্তরের শিক্ষার্থীরা আরডুইনো শিক্ষায় আরো বেশী আগ্রহী হবে”। এমআইটি ল্যাবে ভ্রমণের সময় আরডুইনোর ‘ম্যাজিক বোর্ডের’ কথা প্রথম জানতে পরে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এই ছোট্ট বোর্ডটি আমাদের শিক্ষার্থীদের নিজে নিজে কিছু করাতে অনুপ্রাণিত করে। এখন তারা আরডুইনোর অন্যান্য বোর্ড, উপকরণ ও সফটওয়্যার নিয়েও কাজ করতে পারবে।”
সৌখিন ইলেকটট্রনিক্স ব্যবহারকারীদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় আরডুইনো বোর্ডের ডিজাইনার, আরডুইনোর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিটিও ডেভিড কুয়ার্তিলেস বিশ্বের তিনহাজার শিক্ষা প্রতিস্ঠানে আরডুইনোর স্কুল কার্যক্রম এবং তাদের শিক্ষা কার্যক্রমের বাংলাদেশের যুক্ত হওয়াকে স্বাগত জানান। তিনি আশা করেন হয়তো আরডুইনোর নতুন কোন বোর্ড বা প্রোডাক্টের ডিজাইন ও উন্নয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের মেধাবী শিক্ষার্রথীরা সরকসরি সম্পৃক্ত হবে। তিনি বাংলাদেশকে ডিজিটাল ডিভাইস প্রস্তুতকারক এবং রপ্তানীকারক দেশ হিসেবে আগামীতে দেখতে চান বলে জানান।
অনুষ্ঠানটি সঞ্ঝালনা করেন বাংলাদেশে ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান।
উল্লেখ্য, এই আয়োজনের আয়োজক হিসেবে ছিলেন অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক আইটি সংস্থা কোড১৯, বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন) ও আইওটি ফর বাংলাদেশ।