প্রচারণা ডটকম: আবহাওয়া হলো কোনো স্থানের নির্দিষ্ট সময়ের বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থা, যেমন তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, আর্দ্রতা, বায়ুচাপ ইত্যাদি। সাধারণত একদিনের আবহাওয়াকে সূচিত করা হয়। অন্যদিকে, জলবায়ু হলো দীর্ঘকালীন, প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ বছরের গড় তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত ইত্যাদির মিশ্রণ, যা কোন একটি বড় অঞ্চলের বিশেষ অবস্থা প্রতিফলিত করে।
আবহাওয়ার বৈশিষ্ট্য:
আবহাওয়া মূলত সূর্যের তাপের জন্য পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে যে পরিবর্তন হয় তার ফলস্বরূপ সৃষ্টি হয়। এটি এমন বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচিত, যা প্রতিদিনের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত এবং অন্যান্য পরিবেশগত পরিবর্তন নির্দেশ করে। আবহাওয়া এবং জলবায়ু বিজ্ঞান সম্বন্ধিত যে শাখাটি কাজ করে তাকে আবহাওয়া বিজ্ঞান বলা হয়।
আবহাওয়া সাধারণত বায়ুচাপ, তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার পার্থক্যের উপর নির্ভর করে। যে কোন স্থান এবং সময় আবহাওয়ার উপাদানগুলির মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি হয় সূর্যের কোণ এবং পৃথিবীর অক্ষাংশের কারণে। এছাড়া, পৃথিবীর অক্ষের কাত হয়ে থাকার কারণে বছরের বিভিন্ন সময়ে সূর্যের আলো ভিন্নভাবে ছড়িয়ে পড়ে, যা আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটায়।
আবহাওয়া সম্পর্কিত বৈশিষ্ট্য:
১. তাপমাত্রা
২. বৃষ্টিপাত
৩. বায়ুচাপ
৪. আর্দ্রতা
৫. মেঘ
৬. বায়ুপ্রবাহ
৭. আলো
এই উপাদানগুলির বিভিন্নতা আবহাওয়ার অবস্থা প্রভাবিত করে।
আবহাওয়ার বিপর্যয়:
আবহাওয়া বিপর্যয়ের মধ্যে সাধারণত ঝড়, টর্নেডো, হারিকেন, বরফ ঝড়, বৃষ্টি, তুষারপাত ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকে। এগুলি আঞ্চলিক বা বৈশ্বিকভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। পৃথিবীর আবহাওয়া বেশিরভাগ সময় ট্রপোস্ফিয়ারে ঘটে, যেখানে বিভিন্ন আবহাওয়ার ঘটনা যেমন বৃষ্টিপাত, বজ্রপাত, কুয়াশা ইত্যাদি সংগঠিত হয়।
আবহাওয়া পরিবর্তন প্রধানত বায়ুচাপ, তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার বৈষম্যের কারণে হয়ে থাকে। সূর্যের আলো পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে একে অপরের থেকে ভিন্নভাবে পৌঁছায়, যার ফলে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল গরম হয়ে ওঠে, আর মেরু অঞ্চলে ঠাণ্ডা থাকে। এই তাপমাত্রার পার্থক্য বড় আকারের বায়ুপ্রবাহ সৃষ্টি করে, যা আমাদের আবহাওয়ার নানান প্রভাব সৃষ্টি করে।
আবহাওয়া এবং জলবায়ু সম্পর্কিত প্রক্রিয়া:
আমরা যদি পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করি, তাহলে দেখতে পাবো যে শীতল বা গরম বাতাসের পার্থক্যের কারণে নানা আবহাওয়ার ঘটনা ঘটছে। উষ্ণ বাতাস মেরু অঞ্চলে গিয়ে ঠাণ্ডা বাতাস সৃষ্টি করে, আবার ঠাণ্ডা বাতাস গ্রীষ্মমণ্ডলে গিয়ে গরম পরিবেশ সৃষ্টি করে।
আবহাওয়া পরিবর্তন:
আমাদের আবহাওয়া এবং জলবায়ু দীর্ঘকাল ধরে মানুষের ক্রিয়াকলাপ দ্বারা পরিবর্তিত হয়েছে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে মানবজাতির সৃষ্ট গ্যাস এবং দূষণ বেড়ে যাওয়ার কারণে আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ, গ্রিনহাউস গ্যাস, সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড গ্যাসের নিঃসরণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অতীতের বরফ যুগ থেকে শুরু করে আধুনিক সময় পর্যন্ত আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তন মানুষ এবং প্রকৃতির উপর অনেক প্রভাব ফেলেছে। পরিবর্তিত আবহাওয়ার ফলে কিছু অঞ্চলে খরা, বন্যা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটছে।
আবহাওয়া পূর্বাভাস:
আবহাওয়া পূর্বাভাসের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর বর্তমান বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থা নিয়ে ভবিষ্যৎ অনুমান করেন। এই পূর্বাভাসের জন্য বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি এবং প্রযুক্তির ব্যবহার হয়, যার মাধ্যমে তাদের প্রাপ্ত তথ্য নির্ভর করে ভবিষ্যতে আবহাওয়ার অবস্থা কেমন হবে তা বলা হয়। আবহাওয়া পূর্বাভাসের জন্য পূর্বে ব্যারোমেট্রিক চাপ ব্যবহার করা হতো, বর্তমানে আবহাওয়া মডেল ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ করা হয় এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী দিনে আবহাওয়ার পরিবর্তন বিষয়ে অনুমান করা হয়।
আবহাওয়া এবং জলবায়ু মানুষের জীবনে বড় প্রভাব ফেলে। আজকের যুগে, আবহাওয়া পূর্বাভাস উন্নত হয়েছে, তবে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল এখনও বিশৃঙ্খল হওয়ায় তা শতভাগ নির্ভুল পূর্বাভাস দেয়া কঠিন।