কোটি মানুষের স্বপ্নের নাম এখন পদ্মা সেতু। এটি কেবল সেতু নয়, বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা আর আত্মমর্যাদার প্রতীক। বাংলাদেশের বুকে সবচেয়ে বড় অবকাঠামোর নাম পদ্মা সেতু। ছয় দশমিক পাঁচ কিলোমিটারের সেতুটি ঢাকা বিভাগের দুই জেলা মুন্সীগঞ্জ আর শরিয়তপুরকে সংযুক্ত করেছে। সেতুর ভাঙ্গার অংশ যোগ করলে মোট দৈর্ঘ্য ৯ কিলোমিটার। স্টিল আর কংক্রিটের তৈরি দ্বিতল সেতুর ওপরের স্তরে রয়েছে চার লেনের সড়ক আর নিচে একক রেল পথ।
দেশের মানুষের বহু প্রতীক্ষিত এ সেতু আগামী ২৫ জুন যানবাহন চলাচলের জন্য সেতুর দ্বার উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে। ২৫ জুন সকাল দশটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা বহুমুখী সেতুর উদ্বোধন করবেন।
পদ্মা সেতুতে রয়েছে অত্যাধুনিক সিসি ক্যামেরা। সাধারণ আলোক সুবিধার পাশাপাশি সেতুতে রয়েছে আলোকসজ্জা ও সৌন্দর্য বর্ধনে রয়েছে আর্কিটেকচার লাইটিং। পদ্মা সেতুতে সব ধরনের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, বিশেষ করে টোল আদায়ের ক্ষেত্রে।
পদ্মা সেতু পারাপারে টোল আদায়ে থাকছে আধুনিক ডিজিটাল পদ্ধতি। পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে মোট ১৪টি টোলপ্লাজা রয়েছে। ২৫ জুন উদ্বোধনের দিন ১০টি চালু করা হবে। ১০টির মধ্যে দুটি ইটিসি বুথ হবে। প্রতিটি যানবাহনের সামনে থাকবে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (আরএফআইডি) কার্ড। ডিজিটাল এ কার্ডে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টোল কেটে নেয়া হবে। কার্ডে যদি টাকা না থাকে তবে গাড়িটি আটকে যাবে। কার্ডের সঙ্গে ব্যাংক অ্যাকাউন্ড যুক্ত থাকবে। সেতুর দুই প্রান্তে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে হওয়ায় পুরো সড়কের মতো সেতুতেও যানবাহনের গতি নিরবচ্ছিন্ন রাখতে টোলপ্লাজায় এ আধুনিক স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে।
স্বয়ংক্রিয়ভাবে টোল দিতে চাইলে পরিবহন মালিকদের রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (আরএফআইডি) সিস্টেম চালু করে নিতে হবে। এর ফলে ফাস্ট ট্র্যাকের মাধ্যমে মাত্র দুই থেকে তিন সেকেন্ডের মধ্যে টোল আদায় হবে। আরএফআইডির জন্য যত নিবন্ধন বাড়বে তত বুথ ইটিসির আওতায় আসবে। কারণ ইটিসি বুথ চালু করলেই হবে না, পরিবহনগুলোকে আরএফআইডির জন্য নিবন্ধনও বাড়াতে হবে।
আরএফআইডির জন্য নিবন্ধন: ডিজিটাল পেমেন্টের জন্য পরিবহনে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) অনুমোদিত সচল আরএফআইডি ট্যাগ থাকতে হবে। গাড়ির মালিক ব্যাংকে বা টোলপ্লাজায় গিয়ে আরএফআইডির জন্য সরাসরি নিবন্ধন করতে পারবেন। মহাসড়কে চলাচলকারী পরিবহন মালিকদের অবশ্যই ডাচ-বাংলা ব্যাংক অথবা রকেট মোবাইল অ্যাকাউন্টে হিসাব থাকতে হবে। রকেট অ্যাকাউন্টটি নেক্সাস-পে অ্যাপ্লিকেশনটিতে আগে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনের পর তারা ইলেকট্রনিক টোল দেয়ার এ সুবিধা পাবেন।
টোল আদায়: আরএফআইডি কার্ড মূলত কাজ করে বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে। এটি অনেকটা পণ্যের বারকোড দেখার প্রযুক্তির মতো। আরএফআইডি ব্যবহার করে কিছুটা দূরের ট্যাগ বা কোডও পড়া যায়। এতে টোলপ্লাজায় যানবাহনকে অপেক্ষা করতে হবে না।
আরএফআইডি সাদা রঙের একটি কার্ড, গাড়ির সামনের অংশের ড্যাশবোর্ডে থাকবে। আরএফআইডি নম্বরটি সংযুক্ত থাকবে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে। অথবা এ আইডিতে অগ্রিম টাকা রিচার্জ করতে হবে। এটি সম্পূর্ণ প্রি-পেইড কার্ড। টোলপ্লাজায় থাকবে একটি যন্ত্র। এতে থাকবে কার্ড রিডার। যানবাহন যতবার পদ্মা সেতুতে উঠে ইটিসি বুথ দিয়ে যাবে ততবার বেঁধে দেয়া টোলের টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেয়া হবে। পাশাপাশি গাড়ির মালিকের মোবাইলে এসএমএস করে জানিয়ে দেয়া হবে কত টাকা কাটা হলো।
পাঁচ বছরের জন্য পদ্মা বহুমুখী সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের দায়িত্ব পেয়েছে কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন (কেইসি) এবং চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড (এমবিইসি)।
বিশ্বের খড়স্রোতা নদীর তালিকায় আমাজনের পরেই পদ্মার অবস্থান। এমন খরস্রোতা নদীর ওপর বিশ্বে সেতু হয়েছে মাত্র একটি। তাই সেতুকে টেকসই করতে নির্মাণের সময় বিশেষ প্রযুক্তির পাশাপাশি উচ্চমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়। ৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচে নির্মিত পদ্মা সেতু রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সংযোগ স্থাপন করেছে। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সেতুটি হতে যাচ্ছে বিশ্বের বুকে এক রোল মডেল।