করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে সব হাসপাতালেই বেড়ে চলছে অক্সিজেন চাহিদা। একইসঙ্গে বেড়ে চলেছে আইসিইউ বেডের সংকট। করোনা আক্রান্ত রোগীর শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে প্রয়োজন হয় নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (আইসিইউ)। কিন্তু রোগীর তুলনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক আইসিইউ না থাকায় ঝরে পড়ছে অনেক প্রাণ। আর এমন পরিস্থিতিতে রোগীদের পাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে অক্সিজেট সিপ্যাপ।
সম্প্রতি করোনা আক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেনের চাহিদা পূরণ করতে ও উচ্চগতির ভেন্টিলেশনের জন্য অক্সিজেট নামের স্বল্প মূল্যের একটি সিপ্যাপ যন্ত্র আবিষ্কার করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চৌকশ একটি দল। এদের মধ্যে অন্যতম একজন মীমনুর রশিদ। বুয়েটের মোট পাঁচটি গবেষণা প্রকল্পে কাজ করছেন তিনি। এ ছাড়া বাংলাদেশে আইসিডিডিআরবি একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালেও কাজ করছেন তিনি। যুক্ত আছেন রবি টেন মিনিট স্কুলের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবেও।
অক্সিজেট সিপ্যাপ যন্ত্রটির কার্যকারিতা সম্পর্কে মীমনুর জানান, অক্সিজেট সিপ্যাপ ভেন্টিলেটর মূলত স্বল্প মূল্যে রোগীদের সাধারণ ওয়ার্ডেই উচ্চগতির অক্সিজেন দিবে ও একইসঙ্গে আইসিইউতে ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনা কমাবে। মেডিকেল অক্সিজেন সাপ্লাই ও দৈত্ব-ফ্লো মিটারের সাহায্যে এটি প্রয়োজনে ১০০% পর্যন্ত অক্সিজেন সরবারহ দিতে পারে। করোনা রোগীদের দেহে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিলে স্বল্প মাত্রায় অক্সিজেন প্রদান করা হয় (low-flow oxygen therapy, 0-15 L/min)। এ মাত্রায় রোগীর অবস্থার উন্নতি না হলে উচ্চগতির অক্সিজেন প্রবাহ (high-flow) প্রয়োজন হয়। এরকম যন্ত্রের মধ্যে দেশে মূলত হাই-ফ্লো নেজাল ক্যানোলা রয়েছে যা আইসিইউ এর বাইরে ব্যবহার করা বেশ ব্যয়বহুল। এ ছাড়া যন্ত্রগুলোর ব্যবহার কৌশল জটিল হওয়ায় দক্ষ কর্মীর অভাবে এ ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করা সম্ভব নয়। অক্সিজেট সিপ্যাপের মাধ্যমে কোনো প্রকার বৈদ্যুতিক সংযোগ ছাড়াই ওয়ার্ডের 15L/Mint অক্সিজেন প্রবাহকে কাজে লাগিয়ে বাতাসে মিশ্রিত উচ্চগতির অক্সিজেন প্রবাহ পাওয়া যাবে।
অক্সিজেট যন্ত্রটি নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা কিভাবে শুরু হলো এর উত্তরে মীমনুর বলেন, দেশে করোনাভাইরাসের রোগী সনাক্ত হওয়ার পর থেকেই বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মিলে আলোচনা শুরু হলো যে এই পরিস্থিতিতে আমরা কী করতে পারি। প্রথমে আমরা দেশীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সময় স্বল্প প্রযুক্তির একটি ভেন্টিলেটর বানাই। সেই ভাবনা থেকে চিকিতসা ক্ষেত্রে করোনা রোগীদের ব্যবহারের জন্য উপযোগী প্রযুক্তি স্বল্প খরচে কিভাবে নির্মাণ করা যায় সেটি নিয়ে আমরা ভাবতে শুরু করি। পরবর্তীতে আমরা দেশের শীর্ষস্থানীয় হাসপাতালের চিকিতসকদের সঙ্গে কথা বলে ওয়ার্ড পর্যায়ে স্বল্প খরচে উচ্চগতির অক্সিজেন সুবিধা কিভাবে নিশ্চিত করা যায় তা নিয়ে কাজ শুরু করলাম। সেখান থেকেই অক্সিজেট সিপ্যাপ যন্ত্রটির কাজ শুরু হয়। ২০২০ সালের জুলাই নাগাদ অক্সিজেট সিপ্যাপের প্রথম ভার্শন নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছিলাম।
ইতিমধ্যে অক্সিজেট সিপ্যাপ বিএমআরসির অনুমোদনক্রমে ২ দফা কিনিক্লাল ট্রায়াল সম্পন্ন করেছে। ২য় ধাপের সফলতার পর ৩য় ধাপের কিনিক্লাল ট্রায়াল শুরু হয়েছে। ৩য় ধাপে সফলতা লাভ করলেই যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ও পরামর্শ অনুযায়ী যন্ত্রটি ব্যবহার করা যাবে। অক্সিজেট সিপ্যাপ যন্ত্রটি নিয়ে প্রায় ১ বছরেরও বেশি সময় ধরে করছেন তারা।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে মীমনুর রশিদ বলেন, নিজেকে আরও বিস্তর গবেষণার কাজে নিয়োজিত করতে চাই। এ ছাড়াও Frugal Science অর্থাত প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে স্বল্পমূল্যের উদ্ভাবিত যন্ত্র সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছে দিতে চাই।
কৃতজ্ঞতায়: দৈনিক ইত্তেফাক