ক.বি.ডেস্ক: টেলিনর গ্রুপের সায়েন্টিফিক রিসার্চ ইউনিট ‘টেলিনর রিসার্চ’ এর প্রযুক্তি নিয়ে পূর্বাভাসের প্রতিবেদনের সপ্তম সংস্করণ উন্মোচন করা হয়। প্রতিবেদনে কীভাবে প্রযুক্তি ও ডিজিটালাইজেশন গ্রিন ট্রান্সফরমেশনকে (সবুজ রূপান্তর) সক্ষম করে তুলতে পারে এর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, আগামী দিনে এই বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সম্প্রতি জিপি হাউজে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে টেলিনরের গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল প্রকাশ করে গ্রামীণফোন। চলতি বছরের জন্য পাঁচটি প্রত্যাশিত প্রযুক্তি পূর্বাভাস উন্মোচন করা হয়।
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন এবং আমাদের ইকোসিস্টেমের ওপর এর প্রভাব ছিল ২০২২ সালে প্রযুক্তি পূর্বাভাসের মূলে। এই পূর্বাভাস অনুযায়ী, কীভাবে নতুন যুগের উন্নত কানেক্টিভিটি, জলবায়ুবান্ধব শক্তিসাশ্রয়ী আধুনিক হার্ডওয়্যার, এজ ক্লাউড এবং ৫জি প্রযুক্তি আরও পরিবেশবান্ধব হবে এবং এর ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রিন জব স্কিলসের চাহিদা এবং ডিজিটাল লার্নিং প্ল্যাটফর্মগুলোর ক্লাইমেট মাইক্রো ডিগ্রি দেয়ার বিষয়গুলোকে বাড়িয়ে তুলবে। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শক্তিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব ডিভাইস তৈরি করার প্রতিযোগিতা ও প্রবণতা বাড়বে। এ ছাড়াও আগামী প্রজন্মনের প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দিয়ে গ্রেট রেসিগনেশনের সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়ানো এবং বৈশ্বিক মহামারি শেষ হলে কেমন করে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো এ ঝুঁকি এড়িয়ে যেতে পারবে, তা নিয়ে প্রতিবেদনে তিনটি পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। চলমান বৈশ্বিক মহামারি ও এর ফলাফলের ওপর ভিত্তি করেই এ পূর্বাভাসগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনটি পরামর্শসহ পূর্বাভাসগুলো তুলে ধরেন টেলিনর রিসার্চ’র প্রধান বিওন তালে স্যান্ডবার্গ।
পূর্বাভাস ১: অচিরেই আসবে গ্রিন ক্লাউড
ডেটা ব্যবহারের অত্যধিক প্রবৃদ্ধির কারণে জ্বালানি চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই, ক্লাউড কমপিউটিংয়েও উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে এবং এজ কমপিউটিং সামনের বছরগুলোতে গ্রহণযোগ্য ব্যবধান তৈরি করতে পারবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
বিওন তালে স্যান্ডবার্গ বলেন, আমাদের অনুমান বিশ্বব্যাপী ৫জি নেটওয়ার্কগুলো এজ ডেটা সেন্টারে এবং সেখান থেকে ডেটা ট্রাফিক স্থানীয়ভাবে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হবে। ২০২২ সালে মোবাইল ডিভাইসের ৫জির মাধ্যমে ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি-সাশ্রয়ী এজ ডেটা সেন্টারগুলো ক্রমবর্ধমান হারে গড়ে উঠবে। ফলে, যেহেতু ডেটা ট্রাফিকের অংশ ও বিদ্যুত শুধুমাত্র স্থানীয়ভাবে স্থানান্তর করা হবে ডেটা ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্কে জ্বালানি সাশ্রয় হবে।
পূর্বাভাস ২: জলবায়ু বিষয়ক মাইক্রো-ডিগ্রির চাহিদা বৃদ্ধি
আধুনিক ক্যারিয়ারে কর্মী এবং নিয়োগকর্তাদের জলবায়ুবান্ধব হয়ে ওঠার প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়েছে এবং এর সঙ্গে জীবনের সকল ক্ষেত্রে সাস্টেইনেবিলিটির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়াও প্রয়োজনীয়তায় পরিণত হয়েছে। পরিবেশ বিষয়ক নীতি এবং বিধিমালা, ২০২২ সালে সবুজ কাজের (গ্রিন জব) দক্ষতা সংক্রান্ত চাহিদাও বৃদ্ধি করবে।
স্যান্ডবার্গের ধারণা, কর্মীদের পরিবেশ সংক্রান্ত জ্ঞানের (গ্রিন নলেজ) চাহিদা মেটাতে ক্রমশ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের পাঠ্যক্রমের অংশ হিসেবে সবুজ মাইক্রো-ডিগ্রি এবং কোর্স চালু করবে। যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চাকরির সময় অনলাইনে সবুজ বিষয়ক শিক্ষা অর্জনের সুযোগ প্রদান করতে ব্যর্থ হবে, সেসব প্রতিষ্ঠান নতুন প্রতিভাবান তরুণদের কাছে কম আকর্ষণীয় বলে গণ্য হবে।
পূর্বাভাস ৩: সবকিছুর অপটিমাইজেশন
সারা বিশ্বে এনার্জি এফিশিয়েন্সি বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়ার ফলে ইলেকট্রনিক পণ্য প্রস্তুতকারকদের মধ্যে সবকিছুর অপ্টিমাইজেশন নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরির সুযোগ রয়েছে। স্যান্ডবার্গ সতর্ক করে বলেন, বর্তমানে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সংখ্যা মানুষের চেয়ে চারগুণ এবং ভবিষ্যতে এগুলো আরও বেশি প্রভাব বিস্তার করবে। যেহেতু আমাদের শক্তি সরবরাহ রূপান্তরে সময় প্রয়োজন হবে, তাই আমাদের সবকিছু অপ্টিমাইজ করতে হবে। আগামীতে, আরও অনেক প্রতিষ্ঠান এই অপ্টিমাইজেশন যুদ্ধে জয়ী হতে প্রয়োজনীয় জ্ঞান এবং রিসোর্স অর্জনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করবে।
পূর্বাভাস ৪: গ্রিনফ্লুয়েন্সারদের আবির্ভাব
তরুণদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সক্রিয় থাকার ওপর গুরুত্ব প্রদান বর্তমানে ইনফ্লুয়েন্সারদের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে (কপ২৬) হতাশার ইঙ্গিত এবং ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জের (আইপিসিসি) ষষ্ঠ মূল্যায়ন প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতার স্মৃতি, এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভার্চুয়াল জগতে গ্রিনফ্লুয়েন্সিং নামের নতুন আন্দোলন সৃষ্টি করবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
স্যান্ডবার্গ বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জুড়ে এখন বেশ কিছু জলবায়ু-সচেতন ইনফ্লুয়েন্সার ও অ্যাক্টিভিস্ট দেখা যাচ্ছে। ইনফ্লুয়েন্সার জগতে যারা অধিক প্রভাব বিস্তারে সক্ষম, তাদের কাছ থেকে তাদের ক্রমবর্ধমান ফলোয়ার বেস যথাযথভাবে এই বিষয়গুলো জানতে পারবে। যেসব ইনফ্লুয়েন্সাররা জলবায়ু চ্যালেঞ্জের ব্যাপারে গুরুত্ব প্রদান করবে না বা উদাসীনতা দেখাবে, তারা পুরাতন হিসেবে বিবেচিত হবে। এর পরিবর্তে, ফলোয়াররা সেসব ইনফ্লুয়েন্সারদের কাছে ভীড় করবে যারা নিজেদের ক্যাটাগরি নির্বিশেষে জলবায়ু সচেতনতা প্রদর্শন করে। বিপণনকারীরাও এই একই দিকে মনোনিবেশ করবে।
পূর্বাভাস ৫: লস্ট জেনারেশন এর কাছে হেরে যাবেন না
বাড়ি থেকে কাজ করা এবং এই ধরনের ট্রেন্ডগুলো প্রাতিষ্ঠানিক বিচার ও সংস্কৃতিকে নতুন রূপ দিচ্ছে। আর এরই সঙ্গে, গ্রেট রেজিগনেশনের সম্মুখীন না হতে চাইলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবশ্যই পরবর্তী প্রজন্মের প্রত্যাশাসমূহকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। বৈশ্বিক মহামারি চলাকালীন, তরুণদের জন্য ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক স্থাপন ও বৃদ্ধি এবং কর্পোরেট ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে সাধারণ ধারণা অর্জন বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। কারণ, শুধুমাত্র ডিজিটালভাবে যোগাযোগের মাধ্যমে নতুন সামাজিক সম্পর্ক গঠন অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং।
স্যান্ডবার্গ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশগত অবক্ষয় নিয়ে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি অনুধাবন করে সর্বত্রই মানুষ এখন সচেতন হচ্ছে। প্রযুক্তি কীভাবে সমস্যার অংশ না হয়ে পরিবর্তনে সহায়তা করতে পারে টেলিনরে তা অনুধাবন করাটাই আমাদের জন্য জরুরি।