অনলাইন শিক্ষা হলো এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা যা সাধারণ শ্রেণি শিক্ষা থেকে ব্যতিক্রম এবং এটি একটি ডিজিটাল শিক্ষা পদ্ধতি যা বাস্তবায়ন করতে প্রয়োজন হয় আধুনিক প্রযুক্তি তথা কমপিউটার বা মোবাইল কিংবা এ জাতীয় কোন ডিভাইস ও ইন্টারনেট সংযোগ তা হতে পারে নেট ডাটার মাধ্যমে বা ওয়াই-ফাই বা ব্রডব্যান্ড সংযোগের মাধ্যমে সংযোগকৃত। এ অনলাইন শিক্ষার জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু আচরণ বা শিষ্টাচার বিধি। মোটকথা, ইন্টারনেট নির্ভর এ যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে বিশেষ শিষ্টাচার ও শৃংখলা বিধি মেনে কোন ক্লাশ পরিচালনা করাই হলো অনলাইন ক্লাশ যেখানে একজন শিক্ষক ক্লাশরুমের বাইরে সুবিধাজনক যে কোন স্থান থেকে পাঠদান করতে পারে এবং শিক্ষার্থীগণ নিজ নিজ বাড়ীতে থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে লাইভ ক্লাশে অংশগ্রহন করতে ও পারস্পরিক মতবিনিময় করতে পারে।
শুধুমাত্র স্বশরীরে উপস্থিতি ছড়া একাডেমিক বাস্তব ক্লাশের সঙ্গে অনলাইন ক্লাশের তেমন কোন পার্থক্য নেই। এখানে অনুমতিপ্রাপ্ত সকল শিক্ষার্থী একই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বিশ্বের যেকোন প্রান্ত থেকেই ক্লাশে অংশগ্রহন করতে পারে। শিক্ষক সরাসরি ক্লাশ নেন আর শিক্ষার্থীর কমপিউটার বা মোবাইল স্ক্রীনই হবে তার ক্লাশ। শিক্ষার্থী বাস্তব ক্লাশের মতো এখানেও শিক্ষককে প্রশ্ন করে তাতক্ষনিক সমাধান পেতে পারে। এ যেন ফেস টু ফেস বা সরাসরি ক্লাসের মতই। করোনাকালে অনলাইন শিক্ষার সুবিধা ও সীমাবদ্বতা নিয়ে লিখেছেন ডক্টর মো. মাহমুদুল হাছান…..
অনলাইন শিক্ষার সুবিধা:
অনলাইন শিক্ষা ধারা আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার একটি উন্নত শিক্ষা প্রক্রিয়া। উন্নত বা অনুন্নত যে কোন দেশে এ শিক্ষার প্রয়োজনীয় সকল সামগ্রী যথাযথভাবে সরবরাহ করতে পারলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় এ অনলাইন শিক্ষা ধারা অতি কার্যকরি এবং এর সুবিধা জাতি ও দেশের জন্য খুবই ফলপ্রসু। বাংলাদেশে অনলাইন শিক্ষার অনেক সুবিধা রয়েছে যা সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ইতিবাচক উন্নতি সাধিত হবে।
১। সুযোগমত শিক্ষা লাভ: শিক্ষক ও শিক্ষার্থী তাদের সুবিধামত সময়ে পাঠদান ও পাঠ গ্রহন করতে পারে। অথবা শিক্ষক তার শ্রেণি কার্যক্রম শেষে ইউটিউব বা সোশ্যাল মিডিয়াসহ অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যমে রেখে দিলে শিক্ষার্থীরা তাদের সুযোগমত শ্রেণি পাঠ গ্রহন করতে পারে।
২। সময়ের অপচয় রোধ: শিক্ষার্থী ও শিক্ষককে যেহেতু প্রতিষ্ঠানে সরাসরি আসতে হয় না এবং ঘরে বসে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো যায়, সেহেতু সময়ের অপচয় অনেকাংশে রোধ হয়। তাছাড়া শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই পাঠ গ্রহন করতে পারে বলে, তারা অল্প সময়ে অনেক শ্রেণি কার্যক্রম বা বাড়ির কাজ করতে পারে, ফলে অনেক সময় বেঁচে যায় এবং বাড়তি পড়াশুনার কাজ করতে পারে।
৩। যেকোনো স্থান থেকে পড়াশুনার সুবিধা: বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে অনলাইন ক্লাসে অংশ নেওয়া যায়। ক্লাস লেকচার এক মিনিটেই কপি করে যার যার কমপিউটার, মোবাইল, প্রোফাইলে সেভ করে রাখা যায়। তাই নোট করার কোনো ঝামেলা নেই। কনভেনশনাল/ট্রাডিশনাল অ্যাকাডেমিক ক্লাসে একদিন উপস্থিত হতে না পারলে ওই দিনের লেকচার আবার বোঝার সুযোগ নেই। কিন্তু অনলাইন ক্লাসের লেকচার ছাত্রছাত্রীর নির্দিষ্ট পেজে সুরক্ষিত থাকে। তাই অনলাইন ক্লাসের সময়ে অনলাইনে না থাকলেও পরে পড়া, শিক্ষক এবং অন্য ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্নোত্তরের কমেন্টগুলো দেখে ওইদিনের বিষয়টা সহজেই বোঝা যায়।
৪। অনলাইন শিক্ষা সরাসরি শিক্ষার চেয়েও ফলপ্রসু: একাডেমিক ক্লাসে স্বশরীরে ছাত্র-শিক্ষক উপস্থিত হয়ে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে পাঠদান করা হয়। অনলাইন ক্লাসেও নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে অনলাইনে উপস্থিত হয়ে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে পাঠদান করা হয়। ট্রাডিশনাল অ্যাকাডেমিক ক্লাসে ব্ল্যাকবোর্ডে বোঝানো হয়। অনলাইন ক্লাসে ইমেইজ লাইব্রেরি দিয়ে অথবা চিত্র আর্ট করে গ্রাফিকসের মাধ্যমে বোঝানো হয়। তা ছাড়া অনলাইন ক্লাসে নির্ধারিত পাঠের টিউটোরিয়াল ভিডিও আপলোড করেও বোঝানো যায়। অতএব ট্রাডিশনাল অ্যাকাডেমিক বাস্তব ক্লাসের চেয়ে অনলাইন ক্লাসই বেশি সুবিধাজনক এবং বেশি ফলপ্রসূ।
৫। অর্থের অপচয় রোধ: অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে অর্থের অপচয়ও অনেকে কমে যায়। অল্প জনবল দিয়ে বেশি কাজ সম্পন্ন করা যায় এবং প্রাতিষ্ঠানিক মেইনটেন্যান্স খরচ, বাড়ি ভাড়ার খরচ ও শিক্ষা সামগ্রীর খরচসহ অন্যান্য খরচ কমানো সম্ভব হয়। ইন্টারনেট সংযোগ বাবদ একটু খরচ বাড়লেও তা অন্যান্য দিক থেকে খরচ বাঁচানোর তুলনায় অনেক কম।
৬। তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন ও সফল প্রয়োগ: আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় তথ্য প্রযুক্তির তেমন কোন ব্যবহার ব্যাপকভাবে ছিলো না, কিন্তু করোনার প্রভাবে শিক্ষা ব্যবস্থা এখন সম্পূর্ণ তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর। অনলাইন শিক্ষাই এখন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও প্রতিষ্ঠানের একমাত্র প্রধান অবলম্বন। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে অনলাইনের মাধ্যমে। সুতরাং করোনার কারনেই আজ আমাদের দেশে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন ও তার সফল ব্যবহার নিশ্চিত হয়েছে।
৭। জীবনমূখী দক্ষতা অর্জন: অনলাইন শিক্ষার ফলে শিক্ষার্থীদের বহুবিদ দক্ষতা অর্জিত হয়েছে। জীবনমুখী বা কর্মমুখী শিক্ষার ক্ষেত্রে অনলাইন শিক্ষার যে দিকটি বেশি প্রয়োগসিদ্ধ হয়েছে তা হলো যোগাযোগ দক্ষতা, প্রযুক্তি ব্যবহারের দক্ষতা ও অন্যান্য বাস্তব ভিত্তিক অনেক দক্ষতা অর্জিত হয়েছে যা কর্মজীবনে ভালো ফলাফল অর্জন করতে সহায়ক হবে।
৮। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল চিন্তার বিকাশ: অনলাইন শিক্ষার কারনে ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে সৃজনশীল চিন্তা চেতনা বৃদ্ধি পায়, ফলে তারা আবিষ্কারের মানসিকতা তৈরি করতে পারে এবং গঠনমূলক কাজে অনুপ্রাণিত হতে পারে। এদিক থেকে বাংলাদেশে উদ্যোক্তা তৈরির ব্যাপারে অনলাইন শিক্ষার অনেক ভূমিকা রয়েছে।
সুতরাং করোনাকালীন মহামারিতে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধার ব্যাপারে আমরা সকলেই প্রায় একমত হতে পারি বলে আমার বিশ্বাস। অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও স্কুল হতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম শুরু ও অনলাইন ক্লাস গ্রহণের বিষয়টি আশাব্যঞ্জক। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম, শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা এবং সেশনযট কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। তাই আতংকিত হওয়ার চেয়ে শিক্ষার্থীরা আশাবাদী হয়ে উঠছে।
সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা বোর্ড ও ইউজিসি অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম ও অনলাইন ক্লাস পরিচালনার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছে। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম ও অনলাইন ক্লাস শুরু করায় শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ বিরতির পর পড়াশোনায় সম্পৃক্ত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ সময় ধরে ক্যাম্পাস শিক্ষা কার্যক্রম থেকে দূরে আছে। তাই অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম মেধা রক্ষা ও মেধার লালনে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
অনলাইন শিক্ষার সীমাবদ্ধতা:
কোভিড-১৯ এর ক্ষতিকর প্রভাব সকল ক্ষেত্রে যতটুকু পড়ুক না কেন তার থেকে ঢের বেশি পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থার ওপরে। জাতিসংঘের বিশেষ অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনেসস্কোর ভাষ্যমতে, করোনা মহামারীর প্রভাবে বাংলাদেশের প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থী ক্ষতির সম্মুখিন হবে। যার মধ্যে রয়েছে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় হতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ। বাংলাদেশে ৪ কোটি শিক্ষার্থীর মধ্যে অর্ধেকের বেশি নারী শিক্ষার্থী। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস শঙ্কা প্রকাশ করেন যে, বিশ্বে শিক্ষা বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। কেননা, মহামারীর অভিঘাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার আক্রান্ত ২১৩ টি দেশে প্রায় ১৬০ কোটি শিক্ষার্থীর বা বিশ্বের শিক্ষার্থীদের সংখ্যার ৯৯ শতাংশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ফলে বিশ্ব শিক্ষাব্যবস্থার মত বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাও চলছে মহাসংকট ও ঝুকির মধ্য দিয়ে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপক তথা শিক্ষার সঙ্গে জড়িত সকল মানুষই চরম সীমাবদ্ধতা ও অসুবিধার মধ্যে সময় পার করছে।
দীর্ঘদিন ধরে স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের মাঝে মানসিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে প্রবলতর। চঞ্চলমতি সদা সরল ছাত্র ছাত্রীরা লকডাউনের কবলে পড়ে স্কুলে আসতে না পারায় তাদের মনের উপর ভীষণ প্রভাব পড়েছে। সি এন এন এর তথ্যমতে, বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী লকডাউনের স্বিকার এবং সেটি খুবই স্ট্রেসফুল। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মানসিক রোগসহ অন্যান্য অসংক্রামক ব্যাধির (নন-কমিউনিকেবল ডিজিজেস) প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাদুর্ভাব, নগরায়ন, আর্থসামাজিক অবস্থা, মানসিক চাপ এবং অন্যান্য শারীরবৃত্তিক ও মনোসামাজিক কারণ মানসিক রোগের প্রকোপ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। আমাদের দেশও এর ব্যতিক্রম নয়। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর শতকরা ১৬ ভাগ ও শিশু-কিশোরদের শতকরা প্রায় ২০ ভাগ এমনিতেই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগে থাকে। করোনার কারনে এর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বহু গুনে।
দ্য ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা কোয়ারেন্টিনে ছিলেন তারা নানাবিধ মানসিক অসুস্থতাযুক্ত লক্ষণগুলোর কথা জানিয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে হতাশা, মানসিক চাপ, অল্পতে রেগে যাওয়া, অনিদ্রা, বিরক্তিভাব, মানসিক অশান্তি ও পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস সিমটম।
এছাড়া, বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধমিকে পড়ুয়াদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ব্যাপক অবনতি হতে পারে, যেটা হয়তো করোনার মতো খালি চোখে দৃশ্যমান নয়। শিশুদের দীর্ঘদিনের বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতি তাদের একটানা মোবাইল বা ট্যাব অথবা টেলিভিশনের সঙ্গ ও অতিরিক্ত ঘুমিয়ে থাকার অভ্যাস বাড়িয়ে দিতে পারে, যেটাকে স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষকেরা ‘Sedentary Behaviour’ বলে থাকেন এবং এই আচরণ ৩০–এর অধিক রোগের কারণ হতে পারে, এমনকি টাইপ-২ ডায়াবেটিসও।
অনলাইন শিক্ষা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থের ওপর মারাত্বক প্রভাব ফেলার পাশাপাশি আরও কিছু অসুবিধা রয়েছে যার ফলে বাংলাদেশের আপামর শিক্ষার্থীদের শিক্ষার যথাযথ ফল ভোগ করা থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। এমন কিছু অসুবিধা ও সীমাবদ্ধতার ব্যাপারে নিম্নে দৃষ্টিপাত করা হলোঃ
অনলাইন শিক্ষাদান পদ্ধতি সম্পর্কে শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ না থাকায় শিক্ষার্থীরা ভার্চুয়াল শ্রেণিকক্ষে সঠিকভাবে শিক্ষা গ্রহন করতে পারে না। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে যে সকল ডিভাইস থাকা প্রয়োজন তা না থাকে শিক্ষার্থীদের কাছে না থাকে শিক্ষকদের হাতে, ফলে মানসম্মত উপায়ে শিক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব হয় না। অভিভাবক ও শিক্ষকদের অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও সংকট থাকায় উন্নত প্রযুক্তিতে নিজেদেরকে অভ্যস্ত করা বা স্বাভাবিকভাবে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করা উভয়ের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। ফলে ছেলে মেয়েরা সঠিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। কমপিউটার, মোবাইল ফোন বা ট্যাব, উপযুক্ত সাউন্ড সিস্টেম, ওয়েব ক্যাম ইত্যাদির যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় মানসম্মত ক্লাস সম্পাদন করা সম্ভব হয় না। রিমোট এরিয়াতে বা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুত ব্যবস্থার অপ্রতুলতা ও ইন্টারনেট সংযোগের নানাবিধ সমস্যা থাকায় অনলাইন শিক্ষায় সবাইকে একই সঙ্গে একই উপায়ে উপস্থিত করানো সম্ভব হয় না, ফলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাগ্রহন থেকে চরমভাবে বঞ্চিত হয়। অনলাইন শিক্ষার ব্যাপারে অভিভাবকদের ভুল ধারণা অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে অসুবিধা হয়ে থাকে। ছাত্র ছাত্রীদের সৃজনশীল চিন্তা চেতনা থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের হাতের লেখার অনুশীলনের সুযোগ কম থাকে, ফলে তারা প্রায়োগিক ক্ষেত্রে নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে সমস্যার সম্মূখীন হয়। অনলাইন শিক্ষা ধারায় শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবক-অভিভাবিকাদের সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক গঠনে বেশ সমস্যা হয়ে থাকে। শিক্ষার্থী বান্ধব পরিবেশে শিক্ষকদের প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে কোন প্রশিক্ষন না থাকায় এবং গার্ডিয়ানদের সচেতনতার অভাবে অনলাইন শিক্ষা সম্পর্কে নেতিবাচক ধারনা সৃষ্টি হয়ে থাকে।
মোটকথা কোভিড-১৯ তথা করোনার আক্রমণ ও প্রকোপ সমগ্র বিশ্বের জীবন ব্যবস্থা ও সামাজিক চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়েছে। মানব সভ্যতার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিপর্যয় চলছে করোনাভাইরাসের তান্ডবে। ভৌগোলিক সীমারেখা অক্ষুন্ন রেখে ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলের মানুষ আজ এক পরিবারে রূপান্তরিত হয়েছে। জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি উতপাদন ও বিপণন, সমাজ সংস্কৃতিসহ-জীবন ঘনিষ্ঠ প্রত্যেকটি বিষয়েই বিশ্ব পরিবার আজ পর্যুদস্ত। জীবন ও জীবিকার প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। ফলে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ ও মরণব্যাধির আক্রমণকে মোকাবিলা করে জীবন ও জীবিকা রক্ষার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধির আলোকে রাষ্ট্রযন্ত্র ও মানুষের জীবনকে সচল রাখার সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে। শিক্ষার ক্ষেত্রে যে মানবিক বিপর্যয় ও সংকট তৈরি হয়েছে তা শিক্ষার মুল ধারাকে টিকিয়ে রাখতে অনেক অসুবিধা ও সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে যার মোকাবেলায় আমাদের সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে ইতিবাচকভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
সর্বোপরি, একথা আমাদের সামনে স্পষ্ট যে সুবিধা ও সীমাব্ধতা যাই থাক না কেন করোনা কালে অনলাইন শিক্ষা পদ্ধতি আমাদের শিক্ষাধারাকে অব্যাহত রাখার একমাত্র উপায়। আমাদের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদেরকে এ ব্যাপারে সচেতন থেকে সর্বক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করতে হবে। তাহলে অনলাইন শিক্ষার সুফল আমরা সকলে উপভোগ করতে পারবো এবং জাতিও উন্নতির অনেক ধাপ এগিয়ে যাবে।
লেখক: ডক্টর মো. মাহমুদুল হাছান- শিক্ষাবিদ, লেখক এবং প্রিন্সিপাল ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ঢাকা।