ক.বি.ডেস্ক: বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতি (বিসিএস) সদস্যদের ব্যবসা সফলতায় নেতৃত্বের কৌশল সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রদান করতে গত রবিবার (১৮ এপ্রিল) অনলাইনে আয়োজন করে ‘‘লিডারশিপ স্ট্রেটেজিস ফর বিজনেস এক্সসিলেন্স’’ শীর্ষক একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা।
কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিসিএস সভাপতি মো. শাহিদ-উল-মুনীর। কর্মশালায় আলোচক ছিলেন বিপিসি’র কো-অর্ডিনেটর মো. আব্দুর রহিম খান। বক্তব্য রাখেন বিসিএসের উপদেষ্টা ড. মো. সবুর খান, বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির, আইএসপিএবি সভাপতি এম এ হাকিম, বাক্য সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন, উইম্যান অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম সভাপতি নাসিমা আক্তার নিশা এবং বিসিএস মহাসচিব মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম। সঞ্চালনা করেন বিসিএস যুগ্ম-মহাসচিব মো. মুজাহিদ আল বেরুনী সুজন। প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরিচালনা করেন মাইন্ড মেপার বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান প্রশিক্ষক এজাজুর রহমান।
প্রধান প্রশিক্ষক এজাজুর রহমান বলেন, নেতৃত্ব হলো এমন জিনিস যা ভিতর থেকে আসতে হয়। সেজন্য পদ, পদবী বা ক্ষমতার প্রয়োজন হয় না। সমস্যা জানা এবং তা সমাধানের চেষ্টা করা একজন নেতার অন্যতম গুণ। ব্যবসাকে সফল করতে ব্যবসার লক্ষ্য ঠিক করা জরুরী। এরপরে বিকল্প পথ নিয়ে চিন্তা করাও নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য। ব্যবস্থাপক হওয়ার চেয়ে নেতা হওয়ার ইচ্ছে বাড়াতে হবে। একজন দক্ষ নেতা প্রতিষ্ঠানের সফলতার মূলমন্ত্র পড়তে পারেন। আর এই দুরদর্শী চিন্তায় সুনেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তিনি প্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ীদের ব্যবসা সফল করতে নেতৃত্বে কী কী কৌশল অবলম্বন করতে হবে সে বিষয়ে একটি স্বচ্ছ ধারণা প্রদান করেন।
মো. আব্দুর রহিম খান বলেন, কোভিড-১৯ থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি অবসর সময়গুলোতে শিক্ষণীয় কর্মশালার মাধ্যমে নিজেদের সমৃদ্ধ করতে আমাদের প্রত্যেকের চেষ্টা করা উচিত। সুনেতৃত্ব ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ।
ড. মো. সবুর খান বলেন, নেতৃত্ব শেখার অন্যতম স্থান পরিবার। একজন মা কিভাবে পুরো সংসারটা সাজিয়ে রাখেন তা থেকেই নেতৃত্বের গুণাবলী শিক্ষণীয়। পৃথিবী এখন অটোমেশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। একজন লিডার যে সিস্টেমে তার সহকারীদের খবরাখবর এবং নজরদারী নিশ্চিত করতে পারবেন সে সিস্টেম ব্যবহারে অভ্যস্ত হতে হবে। নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করতে পারলে সফলতা ব্যবসা থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই আসবে।
সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, ভালো নেতার চেয়ে দক্ষ নেতা ব্যবসার জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তারচেয়েও বড় বিষয় হলো, নেতাকে দূরদর্শী হতে হবে। সামনের পথ দেখিয়ে এগিয়ে যাওয়ার দুঃসাহস থাকতে হবে। সিদ্ধান্ত নেয়ার পাশাপাশি তা বাস্তবায়নের পথ দেখানোও সুনেতৃত্বের অংশ।
এম এ হাকিম বলেন, নেতৃত্ব বা লিডারশিপ জীবনের সবক্ষেত্রে প্রয়োজন। প্রতিটি মানুষ নিজেকে পরিচালনার জন্যও তিনি তার নেতা। সুনেতৃত্বর বিষয়টি পরিবার, ব্যবসা থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ। আইসিটি খাতের জন্য সততা এবং নিজ স্বার্থের চেয়ে সংশ্লিষ্ট খাতের সমৃদ্ধিকে গুরুত্ব দিয়ে সুনেতৃত্ব আমাদের সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিবে। এমন নেতৃত্ব যুবসমাজে সৃষ্টি করতে আমাদের চেষ্টা করে যেতে হবে।
মো. শাহিদ-উল-মুনীর বলেন, গত বছর লকডাউনের সময় থেকে আমরা অনলাইনে প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর আয়োজন শুরু করি। বিসিএস সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে কর্মশালাগুলো সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। ব্যবসায় সফলতার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত এবং তা বাস্তবায়ন করার পথ দেখানোর জন্য সুনেতৃত্বের বিকল্প নেই। ব্যবসা সফলতায় কি ধরণের নেতৃত্ব থাকা উচিত এ সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিতে এই কর্মশালা।
তৌহিদ হোসেন বলেন, দেশে যে কয়েকটি আইসিটি সংগঠন রয়েছে তারা সবাই এক হাতের পাঁচ আঙ্গুলের মতো। বিসিএস, বেসিস, আইএসপিএবি, বাক্য এবং ই-ক্যাব করোনাকালীন সময়কে মানুষের জন্য আশীর্বাদরুপে পৌঁছে দিতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন সবার জন্য উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম। সবার সহযোগিতায় আমরা কঠিন সময় সহজে পাড়ি দিতে সক্ষম হবো।
নাসিমা আক্তার নিশা বলেন, সম্মিলিত শক্তি আমাদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে নারীদের শক্তিকে প্রকাশ করতে হবে। নারী সাবলম্বী হওয়া মানে পুরুষের প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়া নয়। নারীর এগিয়ে যাওয়া তার সন্তানদের জন্যও গর্বের বিষয়। আমার মা এর জন্য আমি গর্ববোধ করি, এমন কথা সব সন্তানই বলতে চায়। মা মানেই নেতৃত্ব শেখার ক্ষেত্র। ভালো মায়ের পাশাপাশি দক্ষ মা সন্তানকে নতুন স্বপ্ন দেখাতে পারেন।
আইসিটি বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল এবং বিসিএসের যৌথ উদ্যোগে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। অনলাইনে প্রায় দুই শতাধিক বিসিএস সদস্য এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালায় অংশগ্রহনকারীদের ডিজিটাল সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে।