ক.বি.ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের তৃতীয় দিনে গত বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) এফবিসিসিআই এবং দুবাই ইন্টারন্যাশনাল চেম্বারের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়। এই সফরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতি বাংলাদেশের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে, বিশেষ করে তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, খাদ্যপণ্য এবং আইসিটি ও আইটিইএস খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিজনেস কাউন্সিলের সঙ্গে এফবিসিসিআই’র সমঝোতা চুক্তি সম্পাদন উপলক্ষে ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দের উদ্দ্যেশ্যে প্রেজেন্টেশনে বাংলাদেশে আইসিটি খাতের সম্ভাবনা ও সক্ষমতার কথা তুলে ধরেন এফবিসিসিআই’র পরিচালক ও বেসিস’র প্রাক্তন সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর।
সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত অবশ্যই বাংলাদেশের আইসিটির পাশাপাশি অন্যান্য শিল্প বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য একটি দুর্দান্ত কেন্দ্র হতে পারে। বাংলাদেশের জন্য স্থানীয় স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের অবদান রাখার মতো অনেক সুযোগও রয়েছে। বাংলাদেশের আইসিটি খাত গত কয়েক বছরে বিশেষ করে পরবর্তী সময়ে তাতপর্যপূর্ণ প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে। গত অর্থবছরে আইটি/আইটিইএস রপ্তানি ছিল প্রায় ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। দেশীয় আইসিটি বাজার ১.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে যা প্রায় ১০ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে এবং জাতীয় জিডিপিতে ০.৭৬% অবদান রেখেছে। বাংলাদেশের আইসিটি খাত সরকারের নীতি সহায়ক যেমন- কর ছাড়, আইসিটি রপ্তানিতে নগদ প্রণোদনা, হাই-টেক পার্কগুলির দ্রুত বিকাশ, যা নির্দেশ করে যে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা খুব সহজেই এখানে বিনিয়োগ করতে পারে এবং স্থানীয় কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ গঠন করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ এবং দেশের আইসিটি খাত ইতিমধ্যেই বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি অত্যন্ত প্রতিশ্রুতিশীল গন্তব্য হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। স্থানীয় আইসিটি শিল্প মেট্রোরেল, পদ্মা বহুমুখী সেতুর মতো মেগা প্রকল্পগুলির আইসিটি অবকাঠামো এবং পরিষেবাগুলিতেও সহায়তা করছে। ইতিমধ্যে, সমগ্র বিশ্ব চতুর্থ শিল্প বিপ্লব গ্রহণ করছে, যেখানে বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে এগিয়ে যাওয়ার কথা বিবেচনা করছে। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট ৪০০টি বাংলাদেশি কোম্পানি ৮০টি আন্তর্জাতিক মার্কেটে তাদের সেবা ও পণ্য রপ্তানি করছে যার মধ্যে রয়েছে জাপান, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ এবং মধ্যেপ্রাচ্যের মার্কেট। এ ছাড়া ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স শিল্পগুলোই এক ধাপ এগিয়ে যাবে এই সফরকে কেন্দ্র করে। যেখানে খুবই সহজেই দুই দেশের মধ্যে পণ্য রপ্তানি ও আমদানি অনেকই সহজ হবে বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুন্সী এমপি, পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্প উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান এবং এফবিসিসিআই’র সভাপতি মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনসহ দুই দেশের ব্যবসায়ী নেতারা।
শক্তিশালী দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্কের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গত ৯ মার্চ ‘ইনভেস্টমেন্ট ফ্ল্যাশমব ২০২২’ এর আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সৈয়দ আলমাস কবীর আইসিটি, ডিজিটাল কমার্স এবং স্টার্টআপে বিপুল বিনিয়োগের সুযোগ নিয়ে কথা বলেন। বাংলাদেশের স্থানীয় স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম উন্নয়ন প্রচেষ্টা নতুন নতুন উদ্ভাবনের মূল ভিত্তি বলে মন্তব্য করেন আলমাস কবীর। মধ্যপ্রাচ্য বাংলাদেশের ক্রমবিকাশমান স্টার্টআপে বিনিয়োগের মাধ্যমে নিজেরাই লাভবান হবে। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্প উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন এবং বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।