ক.কি.ডেস্ক: আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২১ উপলক্ষ্যে এটুআই প্রোগ্রামের উদ্যোগে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে নারীর কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা তৈরি’ শীর্ষক একটি অনলাইন আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আলোচনা সভায় আলোচকগণ বাংলাদেশে ফাইনান্সিয়াল ইনক্লুয়েশনে জেন্ডার গ্যাপ কমাতে অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিকরণের বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশনে জেন্ডার গ্যাপ কমানোর ক্ষেত্রে নেয়া প্রযুক্তিগত উদ্যোগ ও কর্মজীবী নারীদের জন্য বিদ্যমান পরিবেশ, সুযোগ ও সামাজিক বাস্তবতায় ৪র্থ শিল্প বিপ্লব-বান্ধবকতা নিয়ে তথ্যবহুল আলোচনা করেছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম এবং বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম।। সঞ্চালনা করেন ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন এটুআইর যুগ্ম প্রকল্প পরিচালক সেলিনা পারভেজ এবং এটুআইর প্রকল্প পরিচালক ড. মো. আব্দুল মান্নান।
জুনাইদ আহ্মেদ পলক বলেন, ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে আমাদের প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে নারী-পুরুষের বৈষম্য না করা। আমাদের সন্তানদের মধ্যে উদার মানসিকতা তৈরির শিক্ষাটা পারিবারিকভাবে দিতে হবে। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে দুই হাজার নারী উদ্যোক্তাকে এককালীন ৫০ হাজার টাকা সিড-মানি হিসেবে নন-রিফান্ডেবল ফান্ড আইসিটি ডিভিশনের ইনোভেশন ডিজাইন অনটারপ্রেনিউরশিপ একাডেমি থেকে প্রদান করা হবে। শুধুমাত্র বড় বড় বক্তব্য ও বাণী দিয়ে আমরা ব্যক্তি ও পরিবার জীবনে যদি নারীকে সম্মান না দেই, নারীর স্বাধীনতার সুযোগ না দেই, তাহলে কখনোই সমাজে পরিবর্তন আসবে না। ব্যক্তি, পরিবার ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে শিশু-কিশোর ও আমাদের সন্তানদের মধ্যে নারী-পুরুষের বিভেদ তৈরির সুযোগ না দেওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন তিনি।
হোসনে আরা বেগম বলেন, সারাদেশে স্থাপিত হাইটেক পার্কগুলোতে যে সব প্রশিক্ষণের সুবিধা রয়েছে তাতে বাধ্যতামূলকভাবে ৩০ ভাগ নারীদের অন্তর্ভুক্ত করার বিধান রাখা হয়েছে। কাজের ক্ষেত্রে নারীরা স্বাভাবিকভাবেই বেশি মাত্রায় আন্তরিক হয়ে থাকে। দেশের আইসিটি খাতে জড়িত জনশক্তির মধ্যে নারী রয়েছেন প্রায় ১৬ ভাগ এবং সংখ্যাটি ক্রমান্বয়েই বাড়ছে। নারীদেরকে আইসিটি খাতে আরও বেশি অনু্প্রাণিত করতে তাদের ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে অধিক নারী কর্মীবাহিনী তৈরির আহ্বানও জানান তিনি।
বেনজীর আহমেদ বিপিএম বলেন, করোনার সময়ে অনলাইনে ডিজিটাল মাধ্যমে নতুন নতুন উদ্যোক্তার সংখ্যা ঈর্ষণীয় হারে বেড়েছে এবং ভবিষ্যতে এটি আরও বাড়বে। অনলাইনে নারী উদ্যোক্তাদের উপস্থিতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা বিভিন্নভাবে হয়রানিরও শিকার হচ্ছেন। এসব অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে বাংলাদেশ পুলিশ এআই টেকনোলজি ব্যবহারের চিন্তা করছে। ভুক্তভোগীদের অনেকেই সমাজ ও পরিবারের চিন্তা করে বেশিরভাগ নারী অভিযোগ করতে আসেন না। সেসব নারীদের সহায়তা করার জন্য আমরা প্রথম শ্রেণির নারী কর্মকর্তাদের নিয়ে আলাদা নারী ইউনিট চালু করেছি। মুজিববর্ষে প্রতিটি থানায় নারী ও শিশুদের জন্য আলাদা ডেস্ক স্থাপন করা হচ্ছে। এ ছাড়া সাইবার স্পেসে নারীদের নিরাপত্তা সাইবার টহলের জন্য এআই প্রযুক্তির ব্যবহারে চেষ্টা করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে সাইবার পুলিশ ব্যুরো এবং সাইবার থানা স্থাপনেও পুলিশ চেষ্টা করে যাচ্ছে।
এন এম জিয়াউল আলম বলেন, সারাদেশে স্থাপিত ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী উদ্যোক্তা কাজ করছেন। এ ছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশের এগিয়ে চলার সঙ্গে আইসিটি বিভাগ কর্তৃক ‘শী পাওয়ার’সহ এমন অনেকগুলো উদ্যোগ গ্রহণের ফলে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে নারীদের অসামান্য অবদান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আইসিটি খাত নারীদের উতসাহ দিতে অনেক ইনক্লোসিভ ওয়েতে এগিয়েছে। আমরা যদি নারীদের দক্ষতা উন্নয়নে আরও বেশি কাজ করতে পারি তবে দেশের নারীরা অনেক এগিয়ে যেতে পারবে।
অনলাইন প্যানেল আলোচনায় আলোচক ছিলেন ইউএন উইমেনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি শোকো ইশিকাওয়া, এমসিসিআই সভাপতি নিহাদ কবির, এটুআই পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী, বেসিস সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারহানা এ রহমান, এসবিকে টেক ভেঞ্চার অ্যান্ড এসবিকে ফাউন্ডেশনের ফাউন্ডার সোনিয়া বশীর কবির, ঢাকা কাস্ট (ঢাকা হেলথকেয়ার) প্রতিষ্ঠাতা ডা. ফাহরিন হান্নান এবং উদ্যোক্তা বড়াইগ্রাম নাটোরের নীলা চৌধুরী।