ক.বি.ডেস্ক: দেশের প্রচলিত লেনদেনের ক্ষেত্রে ডিজিটাল পেমেন্ট নিশ্চিত করা সম্ভব হলে বাংলাদেশের জিডিপি ১.৭ শতাংশ বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে, যা মোট ডিজিপিতে প্রায় ৫০,০৫৮ কোটি টাকা যোগ করতে পারে। জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন জোট বেটার দ্যান ক্যাশ অ্যালায়েন্স এবং এর সদস্য এটুআই পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উল্লেখিত জিডিপির ৫৩ শতাংশ আসবে ক্ষুদ্র পর্যায়ে মাইক্রো-মার্চেন্ট লেনদেন থেকে, ৪৫ শতাংশ কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ ডিজিটাইজের মাধ্যমে এবং অবশিষ্টাংশ আসবে তৈরি পোশাকের অনানুষ্ঠানিক খাতে ডিজিটাল মজুরি প্রদানের মাধ্যমে। নারীদেরকে অগ্রাধিকার দিয়ে এই খাতগুলোতে জড়িত অর্থ লেনদেন ডিজিটাইজ করতে পারলে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথকেও ত্বরান্বিত করবে।
আজ বুধবার (২০ এপ্রিল) অনলাইনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ‘‘মেজারিং প্রোগ্রেস টু স্কেল রেসপনসিভ ডিজিটাল পেমেন্টস ইন বাংলাদেশ’’ এবং ‘‘ন্যাশনাল ডিজিটাল পেমেন্টস রোডম্যাপ ২০২২’’ শীর্ষক দু’টি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন প্রধান অতিথি পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান।
অনুষ্ঠানে এম এ মান্নান বলেন, গত ১৩ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী ২০৩৫ সালের মধ্যে বিশ্বের সেরা ২৫ অর্থনীতির দেশ হিসেবে স্বীকৃতির পথে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে চাই এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে সঙ্গে নিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্র পরিণত হতে চাই। ডিজিটাল বাংলাদেশে আমরা একটি ক্যাশ-লেস সোসাইটি গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি। সেইসঙ্গে দারিদ্রতা দূর করে সমাজের নিম্নআয়ের মানুষদের অর্থের যোগান বাড়ানোর মাধ্যমে তাদেরও ক্যাশ-লেস সোসাইটির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
এটুআই’র পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী বলেন, এমন অনেক খাত রয়েছে যেখানে ডিজিটাল পেমেন্টের ক্ষেত্রে ইতোমধ্যেই অসাধারণ উন্নতি করেছি। ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেম উন্নয়ন এবং এর সম্ভাবনাময় সুবিধা পেতে এর ওপর নির্ভর অবকাঠামোগত উন্নয়নও সমানভাবে বৃদ্ধি করতে হবে। একটি নির্ভরযোগ্য এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। যার ওপর ভিত্তি করে ডিজিটাল পেমেন্ট এবং সংশ্লিষ্ট সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে।
বেটার দ্যান ক্যাশ অ্যালায়েন্সের ডিএমডি ক্যামেলিও তেলেজ বলেন, বাংলাদেশ সাত বছর আগে বেটার দ্যান ক্যাশ অ্যালায়েন্সের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প অর্জনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির সঙ্গে ডিজিটাল লেনদেন গত ৫ বছরে প্রায় চারগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। যার ফলে ডিজিটালভাবে সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা, মজুরি এবং প্রণোদনা প্যাকেজ নাগরিক ও শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে। নারীদেরকে ডিজিটাল পেমেন্ট বিষয়ে আগ্রহী করে তোলতে বাংলাদেশের সঙ্গে ভবিষ্যতেও কাজ করে যেতে চাই।
ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রযাত্রায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে বাংলাদেশ। এই গবেষণার ওপর ভিত্তি করে, বেটার দ্যান ক্যাশ অ্যালায়েন্স ও বাংলাদেশ সরকার সম্মিলিতভাবে ডিজিটাল পেমেন্ট রোডম্যাপ ২০২২-২০২৫ তৈরি করেছে। নতুন এই রোডম্যাপটি তৈরি পোশাক খাত, ক্ষুদ্র, কৃষি, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার অগ্রাধিকার খাতে আগামী তিন বছরে একটি নিরাপদ, ইন্টারঅপারেবল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার জন্য ২২টি সমাধানের পথ চিহ্নিত করেছে।
অনুষ্ঠানে জার্নি টুওয়ারর্ড এ ক্যাশ-লাইট সোসাইটি সম্পর্কে আলোচনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. খুরশীদ আলম,ন্যাশনাল ডিজিটাল পেমেন্ট ডায়গনস্টিক অ্যান্ড রোডম্যাপ ২০২২ এর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেটার দ্যান ক্যাশ অ্যালায়েন্সের এশিয়া প্যাসিফিক প্রধান কীযোম নাগোদুপ মাসালি এবং বাংলাদেশ-লিড নাবিলা খোরশীদ।