Sunday, November 10, 2024
More

    সর্বশেষ

    অনলাইনে মন্ত্রীদের গরু কেনার মধ্য দিয়ে ডিজিটাল হাট চালু করলো উত্তর সিটি কর্পোরেশন

    টেকভিশন ডেক্স: ১১ জুলাই দুপুর ১২:৩০ টায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এর উদ্যোগে কুরবানি পশু বিক্রির অনলাইন প্লাটফর্ম  ‘ডিজিটাল হাট’ (www.digitalhaat.net) উদ্ভোধন করা হয়েছে। করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, আইসিটি ডিভিশন, ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ ডেইরী ফার্ম এসোসিয়েশন যৌথভাবে এই ডিজিটাল হাট বাস্তবায়ন করছে। ক্রেতারা চাইলে ডিজিটাল হাট থেকে ন্যায্যমূল্যে ক্রয়কৃত ‍কুরবানি পশু ঢাকার ৫টি এলাকা থেকে মাংস পক্রিয়াকরণ করে নিজ নিজ ঠিকানায় ডেলিভারী নিতে পারবে।

    উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন  স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন  ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এমপি। এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এর মেয়র আতিকুল ইসলাম। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ই-ক্যাবের প্রেসিডেন্ট জনাব শমী কায়সার।  

     প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, ‘‘ডিজিটাল কুরবানি হাটের এই উদ্যোগ শত সমস্যার মাঝেও আমাদের আশান্বিত করেছে। অনলাইনে কুরবানি গরু বিক্রি এবং প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাপনার মধ্য মাংস প্রক্রিয়া করে বাসায় পৌঁছে দেয়ার এই কর্মযজ্ঞ একদিকে কোভিডের ঝুঁকি থেকে আমাদের রক্ষা করবে অন্যদিকে নগরীর পরিবেশকে সুন্দর রাখবে এবং চামড়া ব্যবস্থাপনা হবে আধুনিক ও মানসম্মত। পুরো ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমাদের ব্যবহারিক জীবনে তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগের ক্ষেত্রে আমরা একধাপ এগিয়ে যাব। ’’

    বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ.ম. রেজাউল করিম এমপি, মাননীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এমপি, বিভাগীয় কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান, এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম ও বাংলাদেশ ডেইরী ফার্ম এসোসিয়েশন এর প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ইমরান হোসেন।

    টিপু মুনশি এমপি বলেন, ‘‘কোভিডের শুরু থেকে ই-ক্যাব বিভিন্ন সময়োযোগী উদ্যোগ গ্রহণ করছে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সমর্থন ও সহযোগিতা করা হয়েছে। ডিএনসিসির ডিজিটাল হাট উদ্যোগ এই সময়ের চাহিদা পূরণ করবে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের পথে দেশকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। ’’

    শ.ম. রেজাউল করিম এমপি বলেন, ‘‘কোভিডের কারণে গরু বাজারে মানুষের আসা যাওয়ায় কিছুটা ঝুঁকি থেকে যায়। আবার প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক ও খামারীদের গরু ন্যায্যমূল্যে বিক্রি হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। মুলত এই চিন্তা থেকে আমরা এই উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। অনলাইন পেমেন্ট এর মাধ্যমে ক্রেতা ও বিক্রেতার স্বার্থ রক্ষা করে একটি আস্থার জায়গা তৈরী করবে এই ডিজটাল হাট।’’ তিনি সকলকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে কোরবানীর আহবান জানন এবং তার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

    জুনায়েদ আহমেদ পলক এমপি বলেন, ‘‘আজকের তরুনরা যা পছন্দ করবে তার উপর নির্ভর করবে ভবিষ্যতে মানুষের জীবনযাত্রা। তরুনদের পছন্দের কারণেই ই-কমার্স খাতে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে। বর্তমানে আমাদের প্রয়োজনের সাথে ই-কমার্স এমনভাবে জড়িয়ে গেছে তাতে ই-কমার্স হয়ে উঠেছে ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু। কুরবানির হাটও আজ তার বাইরে নেই।’’

    মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের জন্য সময়ের চাহিদা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। অনলাইনে কুরবানির পশুবিক্রি আগে থেকে হয়ে আসলেও করোনা ঝুঁকির কারণে এর প্রাসঙ্গিকতা আরো বেড়েছে। এই ডিজিটাল হাটে পশু বিক্রি ছাড়াও মাংস কেটে ২/৩ কেজীর প্যাকেট ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার যে সুযোগ রয়েছে তা আমাদের জনজীবনকে সুন্দর ও সহজ করতে সাহায্য করবে।

    শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, ‘‘কুরবানি আমাদের ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের একটা বিষয়। ত্যাগ বিশ্বাস পবিত্রতা ও স্বচ্চতা বিধান করলে এটা সাধারণ মানুষের কাছে আরো গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে।’’ তিনি আশা প্রকাশ করেন এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। এবং শহরের পরিচ্ছন্নতা বিধানে এই ডিজটাল হাট একটা ব্যাপক ভূমিকার রাখবে।

    আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘গত কয়েক দিনের কয়েকটি টিমের নিরবিচ্ছিন্ন পরিশ্রমের ফসল আজকের এই ডিজিটাল হাট। ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত গরু হাটগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এবং শহরের পাশঘেঁষে কয়েকটা মাত্র হাটে গরু বিক্রি করা হবে।’’ তিনি নগরবাসীকে গরু হাটে যতটা সম্ভব কম যাওয়ার পরার্শ দেন। তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা ডিজিটাল হাটের আওতায় গরু বিক্রি ছাড়াও প্রায় ২ হাজার গরু জবাই করে এবং মাংস প্রক্রিয়া করে বাসায় পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা রেখেছি। মূলত ঈদের দিন ৪০০, দ্বিতীয় দিন ১০০০ এবং তৃতীয়দিন ৬০০ গরু প্রস্তুত করার সক্ষমতা রয়েছে।’’

     ই-ক্যাবের প্রেসিডেন্ট শমী কায়সার বলেন, ‘‘মাননীয় মেয়রের ডাকে সাড়া দিয়ে আমরা আইসিটি ডিভিশন ও বাংলাদেশ ডেইরী ফার্ম এসোসিয়েশনের সাথে মিলে এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ করছি। ক্রেতাদের আস্থা এবং বিক্রেতাদের নির্ভরতা তৈরী করতে বিক্রয়, মূল্যপরিশোধ, মাংস প্রক্রিয়াকরণ এবং ডেলিভারী কাজ একটি সুপরিকল্পিত পক্রিয়া ও সার্বিক তত্ববধানের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। এতে ক্রেতাদের চাহিদাকে গুরুত্ব দেয়া হবে এবং বিক্রেতাদের পশুর বিক্রয়মূল্য পাওয়া নিশ্চিত করা হবে।  

    মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, সম্পূর্ণ পরিবেশ বান্ধব উপায়ে প্রশিক্ষিত কর্মীরা গরু জবাই ও মাংস কাটার কাজ করবে। ধর্মীয় বিধান, স্বাস্থ্যগত মান  ও  হালাল গাইডলাইন অনুসরণ করে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। এবং সময়মত মাংস বাসায় পৌঁছে দিতে একটি টিম কাজ করবে গোটা প্রক্রিয়া তদারক করার জন্য থাকবে আরেকটি দল।

     অনলাইনে কুরবানির গরু কেনাকাটা করে কেউ যেন প্রতারিত না হয় এবং করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ঘরে বসে কুবানির ব্যবস্থাপনা সেবা সহজ করতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, আইসিটি বিভাগ এবং ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)। আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে স্বচ্ছতার জায়গা নিশ্চিত করে ডিজিটাল হাট (digitalhaat.net) প্লাটফর্মের মাধ্যমে পশু কেনাকাটা এবং ঢাকার পাঁচটি জায়গায় ডিজিটাল ব্যবস্থাপনায় হাজারো পশু কোরবানির ব্যবস্থা করে মাংস হোম ডেলিভারি সহ বিভিন্ন সেবা অন্তভূক্ত রয়েছে।  

    ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে আস্থা তৈরি ও ঘরে বসে অনলাইনে গরু কেনাকাটার ব্যাপারে মানুষকে আগ্রহী করে তুলতে নির্দিষ্ট নীতিমালা মেনে সার্ভিস দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো,  ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত জায়গায় স্বাস্থ্য বিধি মেনে, অনলাইনে কেনা গরু ছাগলের পরিচর্যা এবং কুরবানির ব্যবস্থা করা। অনলাইনে কেনা গরু ছাগল হালাল উপায়ে দক্ষ কর্মীর মাধ্যমে কুরবানি দেয়া।  ডিজিটাল পদ্ধতিতে কুরবানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে দ্রুত সময়ে কুরবানির মাংস হোম ডেলিভারি করা। ঘরে বসে অনলাইনে নিজের পশু কুরবানি দেখার জন্য লাইভ স্ট্রিমিংয়ের ব্যবস্থা করা। মনিটরিং অফিসারের মাধ্যমে গরুর ন্যায্যমূল্যে, ওজন এবং সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা। কুরবানির মাংস আত্মীয় স্বজন বাসায় পৌঁছে দেওয়া এবং দানের অংশ সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করা।  ডিজিটাল হাটে QR কোডের মাধ্যমে পশু চিন্তিত করা।  স্বেচ্ছাসেবীদল, মাংসকর্মীও সহকারীসহ সকলের জন্য মাস্ক, স্যানিটাইজার ব্যবস্থা করা এবং নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থান করার পরিবেশ সৃষ্টি করা। ক্রেতাকে তার  গরু কুরবানির প্রতি মুহূর্তের আপডেট দিতে ফোকাল পয়েন্ট নিয়োগ দেয়া এবং সাপোর্ট সেন্টার তৈরি করা হবে। ভাগে কোরবানি দেয়ার ব্যবস্থা করা। ক্রয়কৃত গরু সরেজমিনে দেখার ব্যবস্থা করা। পশুর নির্দিষ্ট অংশ (মাংস, কলিজা, ভুঁড়ি ইত্যাদি) স্মার্ট প্যাকেজিং করে নির্দিষ্ট সময়ে হোম ডেলিভারি করা। দেশে ও বিদেশ থেকে সহজে পেমেন্ট দেয়ার ব্যবস্থা  করা, এসব সেবা থাকবে এই ডিজিটাল হাটে যেমন- যেকোনো ব্যাংক ট্রান্সফার, যেকোনো কার্ড (visa, master, amex card), বিকাশ, নগদ অথবা পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে।

     ডিজিটাল হাট বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবে এটুআই, মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পভ উক্ত উদ্ধোধনী অনুষ্ঠান অনলাইনে লাইভ সম্প্রচারিত হয়েছে ই-ক্যাবের গ্রুপ থেকে:    https://www.facebook.com/ eCommerceAB

    ডিজিটাল হাটের প্লাটিনাম স্পন্সর হিসেবে রয়েছে দারাজ ডট কম, পাওয়ার্ড বাই নগদ, পেমেন্ট পার্টনার ভিসা ও মাস্টারকার্ড, গোল্ড স্পন্সর ফুডপান্ডা, সহযোগি হিসেবে থাকছে আইএসএসএল, সেবা এক্সওয়াইডেজ, হাংরি নাকি, চালডাল, সুন্দরবন কুরিয়ার, ই-কুরিয়ার  ও রেডক্স। এছাড়া পার্টনার হিসেবে রয়েছে একশপ, ফুড ফর নেশন, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, একটি বাড়ি একটি খামার, মানবসেবা ডট কম ও ওমেন ইন ই-কমার্স।  

    ডিজিটাল হাটের উদ্ভোধনের এক পর্যায়ে অতিথিবৃন্দ বিভিন্ন ডিজিটাল হাট প্লাটফর্ম এর মাধ্যমে বিভিন্ন অনলাইন শপ থেকে কুরবানির পশু ক্রয় করেন। প্রধান অতিথি স্থানীয় সরকার মন্ত্রী গরু ক্রয় করেন অনলাইনশপ দারাজ থেকে। মৎস্য ও প্রাণীসম্পদমন্ত্রী অনলাইনে গরু কেনেন আজকের ডিল থেকে। বাণিজ্যমন্ত্রী গরু কিনবেন সাদিক এগ্রো থেকে। বিভাগীয় কমিশনার গরু কিনবেন একটি বাড়ি একটি খামার থেকে, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী তার পছন্দের গরু অনলাইনে ক্রয় করেন একশপ থেকে, সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি এমপি তার পছন্দের গরু সব্জিবাজার ডট কম অনলাইন শপ থেকে কেনার আয়োজন সম্পন্ন করেন। তারা গরুকেনার পাশাপাশি ডিজিটাল হাটের স্লটারিং সেবার জন্যও তাদের নাম নিবন্ধন করেছেন।

    অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রওনক মাহমুদ, সচিব,  মৎস্য ও পশুসম্পদম ন্ত্রণালয় ও জনাব হেলাল উদ্দীন আহমেদ, সিনিয়র সচিব, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন  ও সমবায় মন্ত্রণালয়। এছাড়া ই-ক্যাবের সেক্রেটারী জেনারেল জনাব মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল, দারাজ এর এমডি সৈয়দ মোস্তাহিদল হক, নগদ এর সিইও তানভীর এ মিশুক উপস্থিত ছিলেন।

    সর্বশেষ

    পড়েছেন তো?

    Stay in touch

    To be updated with all the latest news, offers and special announcements.