তারিন তাসমী, দৈনিক ইনকিলাব : বর্তমান বিশ্বে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার কারণে ট্যুরিস্টদের সংখ্যা দিন দিন ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে আমাদের দেশের প্রাকৃতির সৌন্দর্য ট্যুরিস্টদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। তাই আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত আসছে অসংখ্য ট্যুরিস্ট। এসব ট্যুরিস্টকে ঘুরে বেড়ানোর জন্য প্রয়োজন হয় একজন গাইডের। যিনি ট্যুরিস্টদের ভ্রমণ সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন। যারা ভ্রমণ পিপাসু কিংবা ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন, তারা এই পেশায় আসতে পারেন। আমাদের দেশে ট্যুরিস্ট গাইডদের প্রশিক্ষণ দেয়ার অসংখ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আপনিও সেসব প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ নিয়ে ট্যুরিস্ট গাইড পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে পারেন এবং ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি ভালো আয় করতে পারেন।
সাহসী ও ধৈর্যশীল
এই পেশায় আপনাকে সাহসী হতে হবে। কারণ, আপনি যদি পর্যটন কেন্দ্রে গিয়ে আকস্মিক কোনো কিছু দেখে দুর্বল হয়ে পড়েন তাহলে পর্যটকরা আপনার প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলবে। সেক্ষেত্রে আপনাকে যথেষ্ট পরিমাণ সাহসী হতে হবে। আপনাকে ধৈর্যশীলও হতে হবে। ট্যুরিস্ট গাইডদের অবশ্যই বিনয়ী এবং স্মার্ট হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, বিভিন্ন দেশ, বিভিন্ন সংস্কৃতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষার ভিন্ন লোক বা পর্যটকরা আমাদের দেশে আসেন। তাদের পছন্দ ও চাহিদা অনুযায়ী কাজ করতে হবে। তাদের সাথে হাসিমুখে ও আন্তরিকতার সাথে এবং উপস্থিত জ্ঞানের ভিত্তিতে কাজ করতে হবে।
পার্টটাইম কাজের সুযোগ
ট্যুরিস্ট গাইডদের পার্টটাইম কাজের সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন ভাষাভাষী পর্যটকদের জন্য অনেক প্রতিষ্ঠান পার্টটাইম বা চুক্তিভিত্তিক গাইড নিয়োগ দেয়। আবার ফুলটাইমও নিয়োগ দেয়া হয়। তবে এই পেশায় মেয়েরা কম আসে। মেয়েদের নিরাপত্তার বিষয় নিশ্চিত না হওয়ায় আমাদের দেশে মেয়েরা এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
যোগ্যতা
এই পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে সর্বনি¤œ এইচএসসি পাস হতে হবে। পাশাপাশি ভিনদেশীদের ভাষা বোঝার মতো ক্ষমতা থাকতে হবে। আবার কোন কোন ট্যুরিস্ট প্রতিষ্ঠান সম্মান বা মাস্টার্স ডিগ্রি চেয়ে থাকে। যাদের বাংলা এবং ইংরেজি ভাষা ছাড়াও ফ্রেঞ্চ, ইতালিয়ান, জাপানিজ, চাইনিজ ইত্যাদি ভাষা জানা থাকে তাদের ক্ষেত্রে এই পেশায় কাজ পেতে বেশি সুবিধা হয়। আর যারা নতুন তাদের ক্ষেত্রে অন্য রকম একটি অভিজ্ঞতাও হয়ে থাকে। তবে এই পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে গাইডকে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্থান এবং পর্যটন কেন্দ্র সম্পর্কে এবং কোথায়, কিভাবে যাতায়াত করবে, নানা বিষয়ে জ্ঞান থাকতে হবে।
বেতন ও নিয়োগ প্রক্রিয়া
ট্যুরিস্ট গাইডের পেশায় প্রতিষ্ঠান ভেদে এবং কর্মের ওপর বেতন কম-বেশি হয়ে থাকে। আপনি যদি ফুলটাইম কাজ করতে চান তাহলে প্রতি মাসে ১০ থেকে ২৫ হাজার বা তার বেশি বেতনও পেতে পারেন। আবার পার্টটাইম বা চুক্তিভিত্তিক গাইডদের বেতন দৈনিক ৫০০ থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। আবার ট্যুরিস্ট গাইডদের আয়ের আরেকটি মাধ্যম হলো টিপস-বখশিশ। পর্যটকরা গাইডদের কাজে খুশি হয়ে তাদের বখশিশ দিয়ে থাকে। এর ফলে কোনো কোনো সময় গাইডদের মাসিক আয়ের তুলনায় দুই থেকে চারগুণ বেশি হয়ে থাকে।
ট্যুরিস্ট গাইড নিয়োগের জন্য বাংলাদশের প্রায় সব সংবাদপত্র এবং ইন্টারনেটে চাকরির ওয়েবসাইটে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। আবার আপনার পরিচত কোনো মাধ্যম থেকে নিয়োগ পেতে পারেন। তবে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান নিয়োগের আগে লিখিত পরীক্ষা, সাক্ষাৎকার নিয়ে থাকে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, ভাষাগত দক্ষতা, কথা বলার ধরন, ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞান এবং উপস্থিত বুদ্ধি যাচাই করে থাকে।
ট্রেনিং ও যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করবেন
ট্যুরিস্ট গাইড নিয়োগের পর প্রায় সব ট্যুরিজম কোম্পানি এক থেকে তিন মাসের ট্রেনিং দিয়ে থাকে বা ট্রেনিং পিরিয়ডে রাখেন। বাংলাদেশ-পর্যটন কর্পোরেশনসহ বেশ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন, বাংলাদেশ হোটেল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ইনস্টিটিউট অব ট্যুরিজম অ্যান্ড হোটেল ম্যানেজমেন্ট প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে ট্যুরিজমের ওপর কোর্স করানো হয়। বাংলাদেশে বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা আসেন। বর্তমানে প্রায় ২০০টি ট্যুরিস্ট কোম্পানি আছে এবং পর্যটন শিল্প আধুনিকায়নের ফলে কোম্পানির সংখ্যাও বেড়ে চলছে। আপনিও এসব কোম্পানিতে কাজ করতে পারেন।
কোম্পানিগুলো হলো হ্যাভেন ট্যুরস, জার্নি প্লাস, সিলভার ওয়েভট্যুরস, স্পিড হলিডেইস, বেঙ্গল ট্যুরস, অ্যানজেল ট্যুরিজম, গোল্ডেন হলিডেইস ইত্যাদি কোম্পানিতে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
সূত্র : দৈনিক ইনকিলাব