পৃথিবীজুড়ে মোটরসাইকেল শিল্প খাতে মন্দা ভাব চলছে। সময়ের সঙ্গে কমছে ক্রেতার সংখ্যা। পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানির বিষয়ে সৃষ্টি হওয়া চাপ। মোটরবাইক নির্মাণ খাতের ব্রিটিশ স্টার্টআপ মেভিং মনে করে, এ সমস্যার একমাত্র সমাধান হতে পারে ব্যাটারি। প্রতিষ্ঠানটি আরএমওয়ান মোটরবাইকের উচ্চ শব্দযুক্ত পেট্রল ইঞ্জিনের বদলে প্রায় শব্দহীন বিদ্যুচ্চালিত মোটর স্থাপন করেছে। কেন্দ্রীয় ইংল্যান্ডের কোভেন্ট্রিতে প্রতিষ্ঠানটির কারখানার কাছাকাছি বাইকটি পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হয়। জানা গিয়েছে, গিয়ারবিহীন এ মোটরবাইক চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল খুবই মসৃণ ও প্রায় শব্দহীন। খবর বণিকবার্তা।
মেভিংয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা উইল স্টিরাপ বলেন, মোটরসাইকেলে নতুন ক্রেতার সংখ্যা কমে গিয়েছে। বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে এ শিল্পের উদ্যোক্তাদের নতুন গ্রাহক সংখ্যা বাড়াতে হবে।
এরই মধ্যে গাড়ি নির্মাণ শিল্প পুরোদমে বিদ্যুচ্চালিত উৎপাদনে মনোযোগ দিয়েছে। ছোট থেকে বড় সব প্রতিষ্ঠান জীবাশ্ম জ্বালানি গাড়ি উৎপাদন বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। তবে মোটরবাইকের জন্য এটি কিছুটা কঠিন। কারণ মোটরসাইকেল ইঞ্জিনের আকার বেশ ছোট। এ ইঞ্জিনে পর্যাপ্ত জ্বালানি সরবরাহ করা কিছুটা কঠিন। তবে এরই মধ্যে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান বিদ্যুচ্চালিত মোটরসাইকেল বাজারে এনেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় মোটরবাইক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হারলে-ডেভিডসন তার বিদ্যুচ্চালিত লাইভওয়্যার মডেলের বাইকের দাম ২৯ হাজার পাউন্ড। এক চার্জে মোটরসাইকেলটি ১৪৬ মাইল পর্যন্ত চলতে সক্ষম। এছাড়া ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক জিরো মোটরসাইকেল বিদ্যুচ্চালিত বাইক নিয়ে এসেছে। ২০ হাজার ১০০ পাউন্ড থেকে দাম শুরু হওয়া এ মোটরসাইকেল এক চার্জে ১৬১ মাইল চলতে পারে। ব্রিটিশ স্টার্টআপ আর্ক আগামী নভেম্বরে বিদ্যুচ্চালিত ভেক্টর স্পোর্টস বাইক বাজারে আনতে যাচ্ছে। এটির মূল্য ধরা হয়েছে ৯০ হাজার পাউন্ড। এছাড়া সুপার সোকোর মতো চীনা নির্মাতারাও বিদ্যুচ্চালিত মোটরসাইকেল তৈরিতে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটির ৪০ মাইল রেঞ্জের টিএসএস বাইকের দাম ২ হাজার ৯০০ পাউন্ড।
ভারতীয় ধনী আনন্দ মাহিন্দ্রার প্রতিষ্ঠানও বিদ্যুচ্চালিত মোটরবাইক নিয়ে কাজ করছে। তবে বিদ্যুচ্চালিত মোটরবাইকের কিছু বিকল্প বাজারে থাকার কারণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। যেমন বিদ্যুচ্চালিত সাইকেল এবং পুশ স্কুটার এরই মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। আবার বিদ্যুচ্চালিত মোপেড বাইকও বেশ জনপ্রিয়।
মেভিংয়ের ছোট কারখানায় ২৫ জনের একটি দল মিলে বাইকগুলোকে হাতে সংযোজন করে। এরই মধ্যে শতাধিক যন্ত্র সরবরাহও করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বছরে আড়াই হাজার বাইক উৎপাদনের প্রত্যাশা কোম্পানিটির। অবশ্য বিনিয়োগ পাওয়া গেলে এ সংখ্যা বাড়ানো হবে বলেও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। আরএমওয়ান মোটরসাইকেলে স্যামসাংয়ের তৈরি ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়। ৪০ মাইল রেঞ্জের এ ব্যাটারি বাড়িতেই চার্জ দেয়া সম্ভব। এক ব্যাটারির আরএমওয়ানের দাম ৪ হাজার ৪৯৫ পাউন্ড দিয়ে শুরু। মেভিং বলছে, নগরের মানুষের জন্য সহজ পরিবহনের ব্যবস্থা করতেই এ মোটরসাইকেলের নকশা করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির তুলনায় মোটরসাইকেলে কিছু সুবিধা পাওয়া যাবে। যেমন মোটরসাইকেল দ্রুত চার্জ দেয়া যাবে। বিদ্যুচ্চালিত মোটরসাইকেলের ব্যবহার শব্দ ও বায়ুদূষণও কমিয়ে আনবে।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ম্যাকেঞ্জির লন্ডন অফিসের প্যাট্রিক হার্টজকের মতে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় চাকার যানের বাজার চীন। বিশ্বজুড়ে দুই চাকার যানের অর্ধেকই বিক্রি হয় পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশই বিদ্যুচ্চালিত। শূন্য কার্বন নীতিমালার কারণে দেশটিতে বিদ্যুচ্চালিত বাইকের বিক্রি বেড়েছে। এছাড়া টু হুইলারের বড় বাজার রয়েছে থাইল্যান্ড, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও কোরিয়ায়। অবশ্য এসব দেশে বিদ্যুচ্চালিত অটোরিকশা বা টুকটুকের আধিক্যও রয়েছে।