ক.বি.ডেস্ক: ১৯৭২ সালের সংবিধান এবং দ্বিতীয় বিপ্লবের যে কর্মসূচী বঙ্গবন্ধু হাতে নিয়েছিলেন তার বাস্তবায়ন করাই বঙ্গবন্ধুর প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা নিবেদন এবং সম্মান প্রদর্শন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা এখন কৃষিভিত্তিক দেশ থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রুপান্তর হয়েছি। বঙ্গবন্ধু এমন একটি বীজ বপণ করে গিয়েছেন যা কখনো হারিয়ে যাবে না। এখন এটি বৃক্ষে পরিণত হয়েছে। ভবিষ্যতে মহাবৃক্ষ হবে।
গত সোমবার (১৬ আগস্ট) স্বাধীনতার স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের ৪৬তম শাহাদাত বার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতির (বিসিএস) উদ্যোগে ‘‘প্রযুক্তির উত্থান: শেকড়ে বঙ্গবন্ধু’’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
আলোচনা সভায় মূখ্য প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা অজয় দাশগুপ্ত।আলোচক ছিলেন ডাটাসফট সিস্টেমস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব জামান। সভাপতিত্ব করেন বিসিএস সভাপতি মো. শাহিদ-উল-মুনীর এবং সঞ্চালনায় ছিলেন আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি স্কিলস কাউন্সিলের প্রধান কার্যনির্বাহী কর্মকর্তা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা বীরেন্দ্র নাথ অধিকারী। এ সময় বিসিএস সহসভাপতি মো. জাবেদুর রহমান শাহীন, মহাসচিব মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, যুগ্ম মহাসচিব মো. মুজাহিদ আল বেরুনী সুজন, কোষাধ্যক্ষ মো.কামরুজ্জামান ভূঁইয়া, পরিচালকদ্বয় মোশারফ হোসেন সুমন এবং মো. রাশেদ আলী ভূঁঞাসহ বিসিএস সদস্য, গণমাধ্যম কর্মী এবং অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ২০০৮ সালে ২১শে বইমেলায় আমরা বিসিএসের নামে একটি স্টল নিয়েছিলাম। আমাদের ব্যানারে লেখা ছিল ২১ এর স্বপ্ন ডিজিটাল বাংলাদেশ। বিসিএস ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সূচনালগ্ন থেকেই ভূমিকা রেখে আসছে। প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন, ফাইভজির সুফল যেন কৃষকের হাতেও পৌঁছায়। প্রযুক্তিকে ছড়িয়ে দিতে হবে প্রত্যন্ত গ্রামেও। ইকোনমিক জোনেও থাকবে ৫জি কভারেজ। অধিকাংশ স্মার্টফোন, মোবাইল ফোন, টিভি, রেফ্রিজারেটর আমরা দেশে উতপাদন করছি। ভবিষ্যতে এই উতপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে।
অজয় দাশগুপ্ত বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে ধানমন্ডি ৩২ এর ৬৭৭ নাম্বার বাড়িতে আমরা শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পেরেছিলাম। নিজের জীবনের কঠিন সময়ে আমরা নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে পেরেছিলাম সেজন্য আমরা নিজেদের ভাগ্যবান মনে করি। সম্প্রতি আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের প্রায় ২ লাখ গেজেটে প্রকাশিত হয়েছে। তাদের মধ্যে কতজন আছেন তার একটি তালিকা তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ করি। কিন্তু দুর্ভাগ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের তালিকায় বঙ্গবন্ধুর নাম নেই। ক্যাপ্টেন শেখ কামালের নাম কি আছে? ৬৭ জনের তালিকায় উনাদের নাম নেই শুনে আমি বিস্মিত হয়েছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশের জন্য নজর দিয়েছিলেন শেকড়ে। কিন্তু লক্ষ্য ছিল শেকড়ে উঠা। বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের সারিতে নিয়ে যেতে হলে শুধু বিজ্ঞানের চর্চা হলেই চলবে না বরং তা বাস্তবে প্রয়োগ করতে হবে।
মাহবুব জামান বলেন, ১৯৭২ সালের মে মাসে ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল। সে নির্বাচনে আমরা জয়লাভ করেছিলাম। তখন আমি ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলাম। সে কারণেই বঙ্গবন্ধুর কাছাকাছি থাকার, তাঁর থেকে শোনার এবং তাঁর সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য আমাদের হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু আমাদের জন্য গণভবন উন্মুক্ত রেখেছিলেন। অবাধ যাতায়াতের সুযোগ ছিল আমাদের। ১৪ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করার শেষ দর্শনার্থী দুর্ভাগ্যক্রমে আমরাই ছিলাম। এই সময়কালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে দেখা করতে পারিনি আমার এমনটা মনে হয় না। বরং মাঝে মাঝে তিনি আমাদের ডেকে পাঠাতেন। বঙ্গবন্ধু আমাদের বলেছিলেন, ফিডেল কাস্ট্রো উনাকে সতর্ক করে বলেছিলেন, দেখো, অ্যালানদেরকে শেষ করা হয়েছিল। তোমাকেই শেষ করবে। বঙ্গবন্ধু দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিলেন, ফিডেল কাস্ট্রো জানে না, বাঙালি কেউ আমার ওপর হাত তুলবে না।
মো. শাহিদ-উল-মুনীর বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবনে আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা রয়েছে। প্রযুক্তি আন্দোলনে প্রথম থেকেই আমি বিসিএসের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। বিসিএস তথ্যপ্রযুক্তিতে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে এসেছে এবং এই ধারা চলমান থাকবে। জব্বার ভাই, অজয় দাশগুপ্ত এবং মাহবুব জামান ভাইকে আলোচক হিসেবে পেয়েছি। উনারা সেসময় বঙ্গবন্ধুকে কাছ থেকে দেখেছেন। তাঁদের অভিজ্ঞতাগুলো আমাদের সমৃদ্ধ করবে। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচী ছিল। বিসিএস জাতীয় শোক দিবসকে গুরুত্বের সঙ্গে প্রতিবছর জাতীর পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে।