ক.বি.ডেস্ক: আইসিটি খাতের জন্য ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব বাজেটের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে দেশের সফটওয়্যার খাতের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)। গতকাল শনিবার (৫ জুন) অনলাইনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর, জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ফারহানা এ রহমান, সহ-সভাপতি (প্রশাসন) শোয়েব আহমেদ মাসুদ, সহ-সভাপতি (অর্থ) মুশফিকুর রহমান, পরিচালক তামজিদ সিদ্দিক স্পন্দন ও রাশাদ কবির।
সংবাদ সম্মেলনে বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বেসিসের বাজেট প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন। তিনি স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির সময়ে এবং বর্তমান কোভিড পরিস্থিতিতেও ৬ লক্ষাধিক কোটি টাকার যে বাজেট ঘোষণা করেছে তার জন্য সরকারকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান। বিশেষ করে ৪র্থ শিল্প বিপ্লবকে আলিঙ্গন করতে তথ্যপ্রযুক্তি উদোক্তা ও বিদেশে বাংলাদেশীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিএনডিএ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সরকারি অফিসগুলোর মধ্যে ইন্টার-অপারেবিলিটির প্রতি বাজেটে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। একইসঙ্গে ক্লাউড সার্ভিস, সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন, ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম ই-বুক পাবলিকেশন, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস এবং আইটি ফ্রিল্যান্সারকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতির সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। সরকারের এ উদ্যোগ প্রশংসনীয় বলে উল্লেখ করা হয়।
এসময় তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক টেন্ডারের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে শর্তাদির প্রয়োজনীয় সংশোধনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। বাজেটের দিকনির্দেশনা বাস্তবায়নে বেসিস এবং আইসিটি ডিভিশনের সংশোধনী প্রস্তাবনাসহ সফটওয়্যার ক্রয়ে বিশেষায়িত ‘আরএফপি’ দলিলটি দ্রুত চূড়ান্ত করা হবে। বাজেটে আইসিটি সংশ্লিষ্ট যেসব প্রস্তাব দাখিল করা হয়েছিল তার যথাযথ প্রতিফলন ঘটেনি বলে উল্লেখ করেন বেসিস নেতৃবৃন্দ। বিশেষ করে আইটি ট্রেনিং সার্ভিসের সংজ্ঞাভুক্ত করা হয়নি। আমরা সাইবার সিকিউরিটি সঢটওয়্যারের শুল্ক হার কমানোর প্রস্তাব করেছিলাম। তা ছাড়া কোভিড পরিস্থিতিতে দীর্ঘমেয়াদের বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি নীতির অ্যাকশন আইটেম হিসেবে কর অব্যাহতির সময়সীমা ২০৩০ পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছিল তাও বিবেচনা করা হয়নি।
স্বাধীনতার ৫০তম বছরে বাংলাদেশকে একটি ‘টেকনিক্যাল অ্যাসিস্টেন্স’ প্রদানকারী দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক মহলে ব্র্যান্ডিং এবং বাংলাদেশের বেসরকারি আইটি ইন্ডাস্ট্রির বাজার সম্প্রসারণে উন্নয়নশীর দেশগুলোতে টেকনিক্যাল অ্যাসিস্টেন্স প্রজেক্টের জন্য ৫০০ কোটি টাকা এবং নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ৩০০ কোটি টাকার একটি তহবিল রাখার প্রস্তাব করেছিলাম যাতে নারী উদ্যোক্তাগণ ২% সুদে ঋণ গ্রহণ করতে পারেন। বাজেটে টেকনিক্যাল অ্যাসিস্টেন্স প্রকল্প সম্পর্কে বা আইটি উদ্যোক্তা সৃষ্টির কথা থাকলেও এটি স্পষ্টভাবে উল্লেখিত নেই।
শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে প্রায় ৯৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যদিও এর মধ্যে কতখানি তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বরাদ্দ তা স্পষ্ট নয়। কোভিড পরিস্থিতিতে বেসরকারি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি বাজার সৃষ্টি এবং সরকারের ডিজিটাইজেশনে বাজেটে কোনো সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই।
মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস তথা ডিজিটাল লেনদেন উতসাহিত করতে যেখানে এ খাতকে ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা দরকার ছিল, সেখানে এর ওপর সেখানে এ খাতে কর বৃদ্ধি করা হয়েছে। ই-কমার্স ব্যবসাকে উতস কর বা অগ্রিম আয়কর ও অগ্রিম মূসকের আওতামুক্ত রাখার জন্য জোর দাবি জানানো হয়। আইটি/আইটিইএস এর কর্পোরেট ট্যাক্স ২০২৪ সাল পর্যন্ত মওকুফ থাকলেও এ খাতে রপ্তানি আয়ের ওপর সরকার প্রদত্ত নগদ প্রণোদণার ওপর ১০% উতস কর কর্তন করা হচ্ছে।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নেও বাজেট বেড়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় সফটওয়্যার বা আইটি পরিষেবার জন্য তেমন কোনো বাজেট বরাদ্দ রাখা হচ্ছে না। অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি তাতে যদি তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা না যায় এবং স্থানীয় সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো যদি এসব অবকাঠামোর সফটওয়্যার বা আইটি পরিষেবা প্রদানের সুযোগ না পায় তাহলে প্রকৃত অর্থে এদেশের সফটওয়্যার ও আইটি পরিষেবা শিল্প যেমন সম্প্রসারিত হবে না তেমনি বিপুল জনগোষ্ঠির সম্পৃক্ততা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বিনষ্ট হবে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কোনো উদ্যোগ বা পরিকল্পনাও বাজেটে দেখা যায়নি।
সরকার সত্যিকার অর্থে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে এবং আইসিটি খাতের প্রত্যাশিত উন্নয়নের লক্ষ্যে আমাদের প্রস্তাবসমূহ বাজেট অধিবেশনে আলোচনার মাধ্যমে বিবেচনা করবে এবং সত্যিকার অর্থে অন্যান্য খাতের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্যও একটি ব্যবসা ও বিনিয়োগ বান্ধব বাজেট জাতিকে উপহার দেবে বলে প্রত্যাশা বেসিস নেতৃবৃন্দের।