গত বছর থেকে শুরু হওয়া করোনা মহামারির প্রকোপ থেকে এখনো বের হতে পারেনি পৃথিবী। প্রায় এক বছরের এই দুর্বিষহ জীবন যাপনের প্রভাব পড়েছে বিশ্বের অর্থনীতিতে। বদলাচ্ছে মানুষের জীবন যাপনের ধরনও। সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখতে গিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভরতা অনেক বেশি বেড়েছে। তাই এই সংকটকালে মানুষকে স্মার্টফোন, ল্যাপটপসহ বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হয়েছে। এই সংকটেও বিশ্বব্যাপি সুনাম কুড়িয়েছে বহুজাতিক স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভিভো।
করোনার এই সংকটে মানুষের চাহিদাকে বুঝে বাজারে স্মার্টফোন এনেছে ভিভো। শুধু তাই না স্মার্টফোনের মূল্যের ক্ষেত্রেও সংকটকে মনে রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। কম খরচে ভালো মানের ডিভাইস নিশ্চিত করার জন্য বিশ্বব্যাপি কাজ করেছে ভিভো। ইংরেজিতে ভিভোর স্লোগান ‘‘মোরলোকাল, মোর গ্লোবাল’’। অর্থাত্ স্থানীয় বাজারকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েই আন্তর্জাতিক বাজারে সুনাম অর্জন করেছে ভিভো। চলতি বছর মার্চে চীনের স্মার্টফোন বাজারে শীর্ষে উঠে এসেছে ভিভো। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ভিভোর ফাইভজি স্মার্টফোন বিক্রির হার ৭৬ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
কঠিন ছিল পথ: করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার পর ব্যবসা ও যোগাযোগের পরিস্থিতি কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু মানুষের চাহিদা বন্ধ হয়নি। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সফল হয়েছে ভিভো। গত বছরের সংকট সত্ত্বেও এখন বিশ্বজুড়ে ৪০ কোটি গ্রাহকের পরিবারে পরিণত হয়েছে ভিভো। এ ছাড়াও গ্রাহকদের আকাঙ্খা পূরণে জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এ ব্যাপারে ভিভোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডিউক বলেন, গত বছরের অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির জন্য সমস্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া কঠিন ছিল। একইসঙ্গে ফ্রন্টলাইন স্টাফ ও কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনায় নিয়ে দুরত্ব বজায় রেখে কাজ চালিয়ে যেতে হয়েছে। গ্রাহকদের সঙ্গে ধারাবাহিক যোগাযোগ নিশ্চিত করার জন্য আমরা আমাদের ইকো-সিস্টেমের এবং ই-কমার্স অংশীদারদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করেছি। এজন্য, ভিভোর প্রতি আস্থা রাখায় আমি সকল কর্মী ও গ্রাহকদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। ভিভো সবসময় গ্রাহকদের চাহিদা পূরণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে এবং সর্বাধুনিক প্রযুক্তির স্মার্টফোন সরবারহ করে।
ডিউক আরও বলেন, ভিভো গতবছর ইন্ডাস্ট্রির সেরা ক্যামেরা স্মার্টফোন নিয়ে আসে। পাওয়ারফুল পারফরমেন্স, ইনোভেটিভ সলিউশন্স, চমতকার মোবাইল টেকনোলজির সমন্বয়ে তরুণ গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী অনন্য ফিচারের ওয়াই সিরিজ এবং ভি সিরিজ সফলভাবে বাজারে ছাড়ে ব্র্যান্ডটি। উদ্ভাবন এবং কর্মীদের কঠোর প্রয়াসের প্রশংসা করে তিনি বলেন বলেন, বিশ্বমানের ডিজাইনারদের সমন্বয়ে গঠিত টিমটি বিশাল কৃতিত্বের দাবিদার। কারণ তারা তরুণ এবং ফটোগ্রাফি প্রেমীদের জন্য বিভিন্ন ধরণের ফিচারের পরিকল্পনা করেন।
হাতের নাগালে নতুন প্রযুক্তি
বহুজাতিক স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হলেও ভিভো স্থানীয় বাজার ও চাহিদাকে গুরুত্ব দেয় বলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়। এই করোনার মধ্যেও দেশের বাজারে নতুন প্রযুক্তির স্মার্টফোন এনেছে যাদের মূল্যও রাখা হয়েছে হাতের নাগালে। চলতি মাসে (এপ্রিলে) ভিভো ভি২০, ওয়াই২০ ও ওয়াই১২এস স্মার্টফোনে ছাড়ের ঘোষণা দেয়া হয়। প্রথমে ভিভো ভি২০ এর মূল্যহ্রাস করে ভিভো। পরে সাম্প্রতিক সময়ে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাবার পর ভিভো ওয়াই২০ এবং ওয়াই১২এস এর মূল্যহ্রাসের ঘোষণা দেয় ভিভো। আগে ভিভো ভি২০, ওয়াই২০ ও ওয়াই১২এস এর মূল্য ছিলো যথাক্রমে- ৩২,৯৯০ টাকা, ১৪,৯৯০ টাকা এবং ১২,৯৯০ টাকা। মূল্যহ্রাসের পর স্মার্টফোনগুলো যথাক্রমে ২৯,৯৯০ টাকা, ১৩,৯৯০ টাকা এবং ১১,৯৯০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে ডিউক বলেন, গত বছর করোনা প্রকোপের শুরুতে আমরা দেখেছি মানুষের জন্য স্মার্টফোন কত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিলো। তাই এবার আবারো প্রকোপ বেড়ে যাবার পর; স্মার্টফোন সবার কাছে সহজলভ্য করে তুলে, গ্রাহকদের পাশে থাকতে চায় ভিভো।
ক্যামেরায় নতুন দিগন্ত
ফোনের ক্যামেরাকে আরও শক্তিশালী করতে জার্মানির অপটিক্যাল এক্সপার্ট কার্ল জেইসের সঙ্গে চুক্তি করেছে ভিভো। পেশাদার চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য ব্যবহৃত ক্যামেরায় কার্ল জেইসের তৈরি লেন্স ব্যবহার করা হয়। সম্প্রতি ভিভো বাজারে এনেছে ভিভো এক্স৬০প্রো। কার্ল জেইসের তৈরি লেন্স এতে যোগ করা হয়েছে। স্মার্টফোনটির পেছনে তিনটি ও সামনে একটি ক্যামেরা আছ। গত মার্চ মাসে বাংলাদেশের বাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা করে ভিভো এক্স ৬০প্রো। ক্যামেরা প্রযুক্তি ব্যবহারে রীতিমত বিপ্লব এনেছে স্মার্টফোনটি। ভিভো এক্স৬০প্রোতে ব্যাবহার করা হয়েছে গিম্বল স্ট্যাবিলাইজার ২.০ প্রযুক্তি। বিশ্বে আর কোনো ব্রান্ডের ফোনে গিম্বল আর স্ট্যাবিলাইজার নেই। ছবি নিখুঁত, উজ্জ্বল আর স্পষ্ট করে তুলতে পেশাদার ফটো ও ভিডিওগ্রাফাররা ব্যবহার করেন গিম্বল স্ট্যাবিলাইজার। বাংলাদেশে ভিভো এক্স ৬০ প্রো ভিভোর প্রথম এক্স সিরিজের ফোন। দেশে ভিভোর প্রথম ৫জি স্মার্টফোনও এটি।
এ প্রসঙ্গে ডিউক বলেন, মোবাইল ইমেজিংয়ের ক্ষেত্রে আমরা সম্প্রতি জেইসের সঙ্গে অংশীদারিত্ব স্থাপন করেছি। এ যৌথ অংশীদারিত্ব মোবাইল ইমেজিংয়ের আরও নতুন নতুন উদ্ভাবনের সুযোগ তৈরি করবে; যা বৃহত পরিসরে এই ইন্ডাস্ট্রির দীর্ঘমেয়াদের উন্নয়ন এবং সৃজনশীলতাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
আছে সার্ভিস ডে
গত বছরের নভেম্বর থেকে প্রতি মাসের তৃতীয় বৃহস্পতিবার বিনা মূল্যে বিক্রয়োত্তর সেবা দিচ্ছে ভিভো। যার কারণে ১৮.৯ শতাংশ অ্যাক্সেসরিজ বিক্রি বেড়েছে প্রতিষ্ঠানটির। প্রত্যেক মাসের তৃতীয় বৃহস্পতিবার বিনা মূল্যে সেবা দেওয়ার বিশেষ এ দিনটি নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটায় ভিভোর কর্মীরা। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘‘সার্ভিস ডে’’। ওইদিন সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা ভিভো অনুমোদিত ১৮টি সার্ভিস সেন্টারে বিনা মূল্যে বিক্রয়োত্তর সেবা নিতে পারেন গ্রাহকরা।
সার্ভিস ডে প্রসঙ্গে ডিউক বলেন, গ্রাহকদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ভিভো সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে। সব ধরণের সুরক্ষাবিধি মেনে গ্রাহকদের উত্কৃষ্ট মানের সেবা দিতে আমরা প্রতিনিয়ত নিবেদিত হয়ে কাজ করছি। আমাদের বিশেষ এ উদ্যোগের পর গ্রাহকদের কাছ থেকে যে উত্সাহমূলক সাড়া পেয়েছি তাতে আমরা অভিভূত। অন্যান্য দিনের তুলনায় বিনা মূল্যে বিক্রয়োত্তর সেবা প্রাপ্তির দিনে অ্যাক্সেসরিজ বিক্রি বেড়েছে ১৮.৯ শতাংশ।
সার্ভিস ডে তে গ্রাহকদের বিনা মূল্যে কিছু সুবিধা দেয় ভিভো। যার মধ্যে রয়েছে- সফটওয়্যার আপগ্রেড ও প্রটেকটিভ ফিল্ম ইন্সটলেশন। এ ছাড়াও অরিজিনাল চার্জার, ইয়ারফোন, ডেটা ক্যাবলের মতো অ্যাক্সেসরিজ কেনার ক্ষেত্রে এ দিন ১০ শতাংশ ছাড় পান গ্রাহকরা।
২০১৯ সালে বাংলাদেশে একটি মোবাইল সংযোজন প্ল্যান্ট চালু করে ভিভো। নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত ওই কারখানা পরিদর্শন করে প্রশংসা করেছেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রন কমিশনের (বিটিআরসি) কর্মকর্তারা। গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদুল আলম কারখানা পরিদর্শন করে বলেন, বাংলাদেশে অবস্থিত ভিভো কারখানাটিতে বিশ্বের অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া তারা পরিবেশ রক্ষার দিকেও নজর দিয়েছে যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। কারখানাটিতে বিশ্বের অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এখানে ভিভোর গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র বা আরঅ্যান্ডডিও স্থাপন করা যেতে পারে।