প্রভাবশালী মার্কিন সাময়িকী ‘ফোর্বস’ ২০২১ সালে ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরিতে সমাজে অবদান রাখায় অনূর্ধ্ব ৩০ বছর বয়সী এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৩০০ তরুণের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। এ তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন ৯ বাংলাদেশি তরুণ উদ্যোক্তা। এশিয়ার ২২ দেশের সেরা ৩০০ তরুণ উদ্যোক্তার তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন বাংলাদেশের নয় জন। এই প্রথম মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের বাছাইয়ে একসঙ্গে বাংলাদেশের এতজন জায়গা পেলেন। গত সোমবার (১৯ এপ্রিল) এ তালিকা প্রকাশ করেছে ফোর্বস। ২০১১ সাল থেকে এই তালিকা করছে ফোর্বস। ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মোট ৯ জন বাংলাদেশি তাদের অসামান্য কাজের জন্য এই তালিকায় যুক্ত হয়েছেন। গত বছর ফোর্বসের তালিকায় ছিলেন বাংলাদেশের রাবা খান ও ইশরাত করিম। প্রযুক্তি উদ্যোক্তা, সামাজিক প্রভাব, খুচরা ও ই-বাণিজ্যে অবদান রাখায় এবার তালিকাভুক্ত হয়েছেন বাংলাদেশিরা।
তালিকায় থাকা বাংলাদেশের ৯ তরুণ উদ্যোক্তারা হলেন- গেজ টেকনোলজিসের প্রতিষ্ঠাতা শেহজাদ নূর তাওস (২৪) ও মোতাসিম বীর রহমান (২৬); স্টার্টআপ ক্র্যামস্ট্যাকের প্রতিষ্ঠাতা মীর সাকিব (২৮); কুয়ালালামপুরভিত্তিক এনজিও অ্যাওয়ারনেস ৩৬০-এর প্রতিষ্ঠাতা শোমী হাসান চৌধুরী (২৬) এবং রিজভি আরেফিন (২৬); অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ ইমতিয়াজ জামি (২৭); হাইড্রোকো প্লাসের প্রতিষ্ঠাতা রিজভানা হৃদিতা (২৮) ও মো. জাহিন রোহান রাজীন (২২) এবং পিকাবোর সহপ্রতিষ্ঠাতা মোরিন তালুকদার (২৭)।
এ বছরের তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন রিটেইল অ্যান্ড ই-কমার্স ক্যাটাগরিতে স্থান করে নেওয়া মোরিন তালুকদার ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম পিকাবোর সহ-প্রতিষ্ঠাতা। ২০১৬ সালের ১৫ মে কোম্পানির যাত্রা।
প্রযুক্তি ক্যাটাগরিতে সেরাদের তালিকায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের তিনটি উদ্যোগ। এর একটি হলো গেজ। এটি বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরভিত্তিক একটি এআইভিত্তিক স্টার্টআপ। এ উদ্যোগের জন্য স্বীকৃতি পেয়েছেন শেহজাদ নূর তাওস প্রিয় ও মোতাসিম বীর রহমান। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এ উদ্যোগ অনলাইন লেনদেনের জন্য ভিজ্যুয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি সরবরাহ করে। গেজ ২০২০ সালে স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ড কাপ বাংলাদেশ এবং ২০১৯ সালে সেরা স্টার্টআপের জন্য বাংলাদেশ বিজনেস ইনোভেশন পুরস্কার পায়।
প্রযুক্তি ক্যাটাগরিতে সেরার তালিকায় থাকা আরেকটি বাংলাদেশি কোম্পানি ক্র্যামস্ট্যাক। এর প্রতিষ্ঠাতা মীর সাকিব। এই স্টার্টআপ একটি ব্যবসাভিত্তিক ইন্টেলিজেন্স প্ল্যাটফর্ম, যেটি তথ্যউপাত্ত নিয়ে কাজ করে।
প্রযুক্তি ক্যাটাগরিতে এইআই নিয়ে কাজ করা আরেক কোম্পানি হাইড্রোকুয়োপ্লাস সামাজিক প্রভাব ক্যাটাগরিতে ফোবর্সের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। এ স্টার্টআপ নিয়ে কাজ করছেন রিজওয়ানা হৃদিতা ও জাহিন রোহান রাজিন। ঢাকাভিত্তিক এই উদ্যোগ ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত। তারা নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে কাজ করছেন। এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে পানির গুনগত মান যাচাই বাছাই করে বিভিন্ন সরকারি ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে তারা সেবা দিচ্ছেন। ২০২০ সালে জাতিসংঘের ১৭ ইয়াং লিডার্সের সম্মাননাও পেয়েছেন রিজওয়ানা হৃদিতা ও জাহিন রোহান রাজিন।
সামাজিক প্রভাব ক্যাটাগরিতে সেরার তালিকায় স্থান পেয়েছে অ্যাওয়ারনেস থ্রিসিক্সটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা শমী চৌধুরী ও রিজভী আরেফিন। কুয়ালালামপুরভিত্তিক সেবামূলক এনজিওটি তরুণদের সংগঠিত করে তাদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে। ২৩টি দেশে তাদের দেড় হাজার ভলান্টিয়ার রয়েছে, যারা বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালায়। শমী ও রিজভী এর আগে ইউএনডিপির স্বীকৃতি পেয়েছেন।
সামাজিক প্রভাব ক্যাটাগরিতে সেরার তালিকায় স্থান পাওয়া আরেক বাংলাদেশি উদ্যোগ অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশন। আহমেদ ইমতিয়াজ জামি ২০১০ সালে এটি গড়ে তোলেন। সেই থেকে তিনি দারিদ্র্য দূরীকরণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, মানবাধিকার ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করছেন। ফাউন্ডেশনটি ১০ লাখের বেশি মানুষকে সহায়তা দিয়েছে এবং ৫০০ সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে বিনা মূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে। নিজস্ব স্কুল ও অনুদান কর্মসূচিও রয়েছে। প্রায় ১০ হাজার রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পাশাপাশি করোনাভাইরাস মহামারীতেও কাজ করছে অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশন।