Thursday, November 21, 2024
More

    সর্বশেষ

    চলুন পূজোটা দেখে আসি

    আমরা উৎসব প্রিয় জাতি। বার মাসে তের পার্বণ বাঙালি সংষ্কৃতিতে মিশে আছে যুগ যুগ ধরে। যে কোন ধর্মীয় উৎসবকে জাতি বর্ণ নির্বিশেষে সকলের উৎসেব পরিনত করবার অদ্ভুত ক্ষমতা রয়েছে বাঙ্গালির। বাঙািল হিন্দু ধর্মালম্বীদের অন্যতম উৎসব শারদীয় দূর্গা পূজা। এটি মূলত সনাতন ধর্মানুসারীদের উৎসব হলেও এই উৎসব এখন সকল বাঙালির। ধুপধুনোর গন্ধমাখা পূজা মণ্ডপ, সন্ধ্যায় ঢাকঢোলের গুড়গুড় বাদ্যি শুনলেই এখন বলে দেয়া যায় দুর্গা পূজার আয়োজন চলছে।

    সনাতন ধর্ম মতে, আশ্বিন মাসের শুরুতে যে দূর্গা পূজা করা হয় তাকেই শারদীয় দূর্গা পূজা বলে। এটি ছাড়াও চৈত্র মাসেও দূর্গা পূজা হয়। সেই পূজা কে বাসন্তি দূর্গা পূজা বলে। তবে এই অঞ্চল অর্থ্যাৎ ভারতের পশ্চিম বঙ্গ এবং বাংলাদেশে শারদীয় দূর্গা পূজাই বেশি জনপ্রিয়। পূজার এই উৎসবটি মূলত দেবী দূর্গার আরাধনা। সনাতন ধর্মের ব্যাখ্যা অনুযায়ী দেবী দূর্গা হলেন সকল দেবতার শক্তির সম্মিলিত রুপ।

    পুরান ঢাকার ওয়ারীর তিন শত বছরের পুরনো জয়কালী মন্দিরের পুরোহিত “দূর্গা” শব্দটির ব্যাখ্যা দিলেন ঠিক এই ভাবে-
    “দ”- অক্ষর মানে হল দৈত্য নাশক
    “উ”- অক্ষর হল বিঘ্ন নাশক
    “গ”- অক্ষর দিয়ে বোঝানো হয়েছে পাপ নাশক
    “অ”-কার দ্বারা বোঝায় ভয়, শত্রু নাশক
    অর্থাৎ দেবী দূর্গা হলেন দৈত্য, বিঘ্ন, পাপ, ভয় আর শত্রু নাশকারী বা ধ্বংসকারী দেবী।

    দেবী দূর্গার যে সপরিবার রূপটির পূজা করা হয় তার সূচনা করেন কলকাতার সাবর্ণ রায় চৌধুরি ১৬১০ সালে। প্রথম দিকে এই পূজা পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তখন বিভিন্ন পরিবার এই পূজা পারিবারিক ভাবে আয়োজন করতো। তবে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময় এই পূজা সবাই মিলে আয়োজন করা শুরু করে। তখন থেকে এর নাম দেয়া হয় সার্বজনীন শারদীয় দূর্গা পূজা।

    আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ দিন এই পূজা শুরু হয়। এই দিন কে বলা হয় দূর্গাষষ্ঠী। এরপর দিন মহাসপ্তমী। তারপর দিন মহাঅষ্টমী। শেষ দুই দিন হল মহানবমী আর বিজয় দশমী।

    দূর্গা পূজার সব থেকে আকর্ষণীয় দিন হল মহাঅষ্টমী। এই দিনটি আকর্ষণীয় হবার কারণ হল এই দিনে কুমারী পূজা করা হয়। কুমারী পূজা মূলত হল নারীর প্রতি সম্মান জানানো বা নারীর শক্তিকে শ্রদ্ধা করা। এই দিন ১ থেকে ১৬ বছরের বয়সী একটি মেয়েকে দেবীরূপে কল্পনা করে পূজা করা হয়।

    কুমারী পূজার দিন মণ্ডপগুলোতে ভক্তদের আগমন ঘটে সবচেয়ে বেশি। ঢাকায় এই কুমারী পূজা হয় গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মিশনে।

    ঢাকায় পূজার আয়োজন অনেক জাঁকজমকপূর্ণ। ঢাকার প্রধান প্রধান পূজা মণ্ডপগুলো হয় গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকেশ্বরী মন্দির, রমনা কালীমন্দির, ধানমণ্ডির কলাবাগান মাঠ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, বনানি, উত্তরা, নাখালপাড়া (শাহীনবাগ), লক্ষ্মীবাজার, তাঁতিবাজার, শাঁখারিবাজারে।

    যদি কেউ পরিবার নিয়ে এক সাথে অনেকগুলো পূজার মণ্ডপ দেখতে চান তাহলে চলে যেতে পারেন পুরনো ঢাকায়। গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মিশনের পূজা দেখে চলে যেতে পারেন ওয়ারিরি বিভিন্ন মন্দিরে। পূজা দেখার এক ফাঁকে খেয়ে নিতে পারেন বিখ্যাত স্টার হোটেল কিংবা আল রাজ্জাক হোটেলে। তারপর চলে যেতে পারেন শাঁখা বানানোর জন্য বিখ্যাত শাঁখারিবাজারের মণ্ডপগুলোতে। পাশেই আছে লক্ষিবাজার। এখানেও সাড়ম্বরে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়। এখানেও খেতে পারেন বিখ্যাত পুরান ঢাকার বিখ্যাত নান্না বিরিয়ানি। এছাড়াও বাচ্চাদের জন্য রয়েছে হাজারো রকমের খেলনা, খাবার।

    এছাড়া যেতে পারেন রমনার কালি মন্দিরের পূজা মণ্ডপে। পাশেই আছে বিশাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আর স্বাধীনতাস্তম্ভ। শত মানুষের ভীড়ের মাঝে পরিবার নিয়ে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারবেন। সঙ্গেই রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের দূর্গা পূজার আয়োজন। সেটিও দেখে আসতে পারেন।

    এছাড়াও যেতে পারেন ধানমণ্ডি (কলাবাগান মাঠ), রায়েরবাজার, বনানী অথবা উত্তরায়। মনে রাখা দরকার এটি একটি ধর্মীয় উৎসব। তাই পূজামণ্ডপগুলোতে যাওয়ার পর সেখানকার পবিত্রতার বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত। দূর্গাপূজা অসম্ভব বির্ণল একটি উৎসব। সন্ধ্যার পর গেলে মণ্ডপগুলোর বৈচিত্র্যময় আলোকসজ্জা উপভোগ করতে পারবেন। আর প্রতিটি মণ্ডপেই সন্ধ্যার পর সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। চাইেল সেগুলোও উপভোগ করতে পরবেন। দুর্গাপূজা শুরু হচ্ছে আজ (মঙ্গলবার,৩০ সেপ্টম্বর) থেকে আর ৪ অক্টোবর দশমী। তাই পূজোর আয়োজন দেখতে হলে যেতে হবে এর মধ্যেই। ভালো কথা পূজামণ্ডপগুেলা কিন্তু সকলের জন্যই উন্মুক্ত।

    সর্বশেষ

    পড়েছেন তো?

    Stay in touch

    To be updated with all the latest news, offers and special announcements.