শুরু হয়ে গেছে পরীক্ষার মৌসুম। সারা দেশের স্কুলগুলোতে শুরু হয়ে গিয়েছে বার্ষিক পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলেই কেবল মিলবে পরের ক্লাসে ভর্তির সুযোগ।
আর ভালো ফল করতে পারলেই হবে তবে বাবা মায়ের মুখ উজ্জ্বল। আবার অনেক বাচ্চাকে পরীক্ষা শেষে বসতে হবে ভর্তি যুদ্ধে। সেই যুদ্ধে জয়ী হতে পারলেই তবে ভালো স্কুলে ভর্তির সুযোগ পাওয়া যাবে। সব মিলিয়ে বাচ্চাদের জন্য বিভীষিকাময় মাস এই নভেম্বর-ডিসেম্বর।
স্বাভাবিকভাবেই পরীক্ষার জন্য এ সময় পড়াশোনার একটি বাড়তি চাপ তৈরি হয় বাচ্চাদের ওপর। তবে এই চাপ বহুগুন বেড়ে যায় বাবা মায়ের প্রত্যাশার সঙ্গে যুক্ত হয়ে। ছোট্ট ওইটুকু মানুষকে বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে শারীরিক-মানসিক দুই ধরণের চাপই বইতে হয়।
অনেক বাবা-মা তো পরীক্ষার কটাদিন সন্তানকে রীতিমতো রাত জেগে পড়াশােনার জন্য চাপ দেন। কখনো কখনো তারা শিশুদের কাছ থেকে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের সমান পরিশ্রম আশা করেন। সন্তানদের ভালো ফলাফলের জন্য অভিভাবকদের এই প্রাণান্ত চেষ্টা বেশিরভাগ সময়ই শিশুদের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
এ সময় কী করা উচিত অধিকাংশ বাবা-মা তা বুঝে উঠতে পারেন না। এটা করো, ওটা করা যাবে না, এটা করতেই হবে ইত্যাদি বিষয়ে কড়া নির্দেশ দিয়ে সন্তানকে পড়াশোনায় ব্যস্ত রাখাকেই উত্তম পন্থা মনে করেন তারা। ভাবেন এটা করলেই বুঝি তাদের সন্তান পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করবে।
কিন্তু আসলেই কি তাই? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল এ্যাণ্ড ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম পরীক্ষার সময় অভিভাবকদের করণীয় সর্ম্পকে জানিয়েছেন বেশ কিছু পরামর্শ-
০ সন্তানের পরীক্ষা সামনে বলে জোর করে ওকে বইয়ের দিকে ঠেলে দেবেন না। আগে ওর সমস্যাটা কী সেটা বোঝার চেষ্টা করুন। যদি প্রস্তুতিতে কোনো কমতি থাকে সেই বিষয়ে লক্ষ রাখুন। কোন কোন বিষয়গুলোতে সন্তানের দুর্বলতা আছে সেগুলো চিহিৃত করুন। তারপর ওর জন্য একটা রুটিন বানিয়ে দিন। এবং সেটা মানতে ওকে উৎসাহিত করুন।
০ সন্তানের পড়া শিখতে তাকে সাহায্য করুন। পড়া ও লেখার মধ্যে যাতে একটি ভারসাম্য থাকে সেটা খেয়াল রাখবেন।
০ আপনার কাজের ফাঁকে ফাঁকে সন্তানের পড়া দেখিয়ে দিন। যেমন, ওর পড়া ধরা, উত্তর চেক করে দেওয়া।
০ ভালো কোনো বিষয়ে সন্তানের সঙ্গে আপনি নিজে আলোচনা করুন। তাতে সেই বিষয়ের পড়াটা বুঝতে সন্তানের সুবিধা হয়। তার আত্মবিশ্বাস বাড়বে। তাতে বাচ্চারা বুঝতে পারে যে আপনিও ওর সঙ্গে আছেন।
০ সামনে পরীক্ষা বলে অনেক অভিভাবক ছেলেমেয়েদের খেলাধুলা বা অন্য অনেক কাজকর্ম থেকে দূরে সরিয়ে রাখেন। এটা করবেন না। বন্ধুদের সঙ্গে ওদের খেলাধুলা করতে দিন।
০ সন্তানের পড়ার সময় যেনো কোনো অসুবিধা না হয় সেদিকটা খেয়াল রাখুন। যেমন সন্ধ্যেবেলা টিভি দেখা বা ফোনে উচ্চশব্দে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। অযথা সন্তানকে ফোন ধরতে দিবেন না।
০ পরীক্ষার সময় সন্তানকে তার থেকে পড়াশােনায় ভালো কোনো ছেলেমেয়ের সঙ্গে তুলনা করে তার মনোবলে আঘাত করবেন না। তাকে সবসময় উৎসাহ দিন। যাতে সে তার সামর্থ্যের সবটুকু কাজে লাগাতে পারে।
০ রাত জেগে পড়াশোনার জন্য কফি জাতীয় পানীয় দেবেন না। পরীক্ষার অন্তত পনের দিন আগে থেকে সন্তানকে বাইরের খাবার খাওয়া থেকে বিরত রাখুন।
০ দিনে কমপক্ষে এক ঘন্টা খেলাধুলা করতে দিন। কারণ শরীর সুস্থ্য রাখার জন্য খেলাধুলা ও ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই।
০ নিজেদের ঘরের সমস্যা সন্তানের মধ্যে যাতে সংক্রমিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।
০ বাচ্চাকে নিজের সমস্যাটা নিজেই চিহ্নত করতে সহায়তা করুন। এবং সেই সমস্যার সমাধানেও ওকে সাহায্য করুন।
০ হাতের কাছে বই খাতা কলম গুছিয়ে রাখতে বলুন। বারবার টেবিল থেকে উঠতে হলে মনোযোগ নষ্ট হয়ে যায়।
০ স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও সন্তানের পড়াশোনার ব্যাপারে সাহায্য নিতে পারেন।
০ মনে রাখবেন, কোনো পরীক্ষাই জীবনের শেষ কথা নয়। পরীক্ষার ফলাফল যাই হোক তাকে সামনের পথে এগিয়ে যেতে উৎসাহ দিন।