Facebook.com.bd এর মালিকানা দাবী নিয়ে হঠাত করেই সরব হয়েছে স্বয়ং ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। যদিও ২০০৮ সালের ৭ ডিসেম্বর Facebook.com.bd ডোমেইনটি কিনে রেখেছিল এ ওয়ান সফটওয়্যার (A1 Software) নামক একটি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান। তখন হয়তো ফেসবুক নিজেও জানতো না এক সময় ফেসবুক বিশ্বব্যাপী এভাবে জনপ্রিয়তা পাবে কিংবা বিশ্বের প্রতিটি দেশের লোকাল ডোমেইন কিনতে হবে তাদের! কিন্তু হঠাত করেই ফেসবুক কেন এই ডোমেইনটি নেওয়ার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠলো?
উল্লেখ্য যে, ফেসবুক রীতিমতো গত রবিবার (২২ নভেম্বর ২০২০) ফৌজদারি আইনের ১৫১ ধারায় এ ওয়ান সফটওয়্যার (A1 Software) এর সত্ত্বাধিকারী এস কে শামসুল আলম নামে এক বাংলাদেশির নামে ৫০ হাজার মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়ে ঢাকা জেলা জজ আদালতে মামলাও করেছে। ফেসবুক কি আসলে এই ডোমেইনটি মালিকানার অধিকার রাখে? কে জিতবে এই আইনী লড়াইয়ে? সব প্রশ্নের উত্তর থাকছে এই প্রতিবেদনটিতে। প্রতিবেদনটি লিখেছেন সালাউদ্দিন সেলিম…..
লক্ষ করলে দেখবেন, এখন বিশ্বের প্রায় সব দেশের নিজস্ব ডোমেইন এক্সটেনশনে (Countries Local DNS) ফেসবুকের ডোমেইন রয়েছে এবং ব্যবহারকারীরা যে দেশ থেকে ফেসবুক ব্রাউজ করে সে দেশের এক্সটেনশন (extension) দিয়ে তা ওপেন হয়। কিন্তু বিপত্তি বাধে তখন, যখন .BD (ডট বিডি) অর্থাত Facebook.com.bd ডোমেইন চালু করতে গিয়ে। দেখা গেলো এই ডোমেইনের মালিক অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান এ ওয়ান সফটওয়্যার (A1 Software)। যদিও বাংলাদেশকে ফেসবুক এতদিন পাত্তাই দিতো না, সরকারী পর্যায় থেকে একাধিকবার চেষ্টা করেও গত কয়েক বছর ধরে ফেসবুকের সারা পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে প্রায় ১২ বছর পর হঠ্যাত করেই যেন এই ডোমেইনটি ফেসবুকের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলো!
তবে উল্লেখ্য যে, এই Facebook.com.bd ডোমেইনটি বিক্রি করার জন্য একটি উন্মুক্ত নোটিশ এ ওয়ান সফটওয়্যার (A1 Software) প্রতিষ্ঠানটি অনেক আগে থেকেই দিয়ে রেখেছিল এবং এর দাম উল্লেখ করা রয়েছে ৬মিলিয়ন ইউএস ডলার। হয়তো এত দাম দেখে মাথা খারাপ ফেসবুকের! তাই একটি মাত্র ডোমেইনের জন্য এত টাকা বিনীয়োগ আইনী লড়াইয়ের ঘোষণা দেওয়া ফেসুবকের একটি কৌশলও হতে পারে! যদিও ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলছে A1 Software কোম্পানীকে তারা একাধিকবার আইনী নোটিশ দিয়েও সারা পাচ্ছে না, তাই এবার বাধ্য হয়েই আইনী লড়াই করতে বাংলাদেশে আইনজীবি নিয়োগ দিয়েছে তারা।
কে জিতবে এই লড়াইয়ে?
কে হবে facebook.com.bd ডোমেইনের মালিক? বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান A1 Software, নাকি ফেসবুক নিজেই? প্রকৃতঅর্থে ডোমেইন কারও নিজস্ব সম্পদ নয় এটা অনেকটা লীজ নেওয়ার মতো। নিয়ম অনুযায়ী খালি থাকা নামে যেকেউ যে কোন ডোমেইন-ই কিনতে পারে এবং তা অকশনে বিক্রি করতে পারে কিংবা বিনা পয়সাতেও কাউকে মালিকানা দিয়ে দিতে পারে। বিশ্বের অনেক বড় বড় নামীদামী প্রতিষ্ঠান এই ডোমেইন অকশনের ব্যবসা করে থাকে, সেই বিবেচনায় A1 Software প্রতিষ্ঠানটিকে খারাপভাবে দেখার কিছু নেই। কিন্তু ডোমেইনের সত্ত্বাধীকারী যেই হোক নিয়ম অনুযায়ী কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাও কিন্তু হাতছাড়া হতে পারে। প্রকৃতঅর্থে যেকোন ডোমেইনের মূল মালিক বা নিয়ন্ত্রক হলো- ‘‘ICANN’’ (Internet Corporation for Assigned Names and Numbers)। ‘‘ICANN’’ এর শর্ত ভঙ্গ করলে যেকোন ডোমেইন স্থগিত, বাতিল, মালিকানা বদল ইত্যাদিসহ যেকোন কিছুই হতে পারে।
কে হবে facebook.com.bd ডোমেইনের মালিক? বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান A1 Software, নাকি ফেসবুক নিজেই? প্রকৃতঅর্থে ডোমেইন কারও নিজস্ব সম্পদ নয় এটা অনেকটা লীজ নেওয়ার মতো।
এবার facebook.com.bd এর প্রসঙ্গে আসি। ‘‘ICANN’’ এর শর্ত অনুযায়ী কেউ যদি ট্রেডমার্ক করা কোন প্রতিষ্ঠানের নামে Domain রেজিস্ট্রেশন করে বা ডোমেইন ক্রয় করে তবে উক্ত ট্রেডমার্ককৃত প্রতিষ্ঠানটি উক্ত ডোমেইনের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চাওয়াসহ আইনী প্রক্রিয়ায় উক্ত ডোমেইনের মালিকানা দাবী করতে পারবে। এই শর্তানুযায়ী ফেসবুক কর্তৃপক্ষ A1 Software এর বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে পারবে এবং ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে ৫০,০০০ ইউএস ডলার ক্ষতিপূরণ দাবীসহ আইনজীবি নিয়োগ দেওয়ার কথা ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু কথা হচ্ছে Facebook নিজেই কি আসলে ট্রেডমার্ককৃত কোন প্রতিষ্ঠান? আমেরিকার সরকার নিয়ন্ত্রিত ট্রেডমার্ক নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান ‘United States Patent & Trademark Office’ (USPTO.GOV) এর তথ্য অনুযায়ী ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সর্বশেষ গত ৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ সালে ট্রেডমার্কের জন্য আবেদন করেছে কিন্তু তা এখনো অনুমোদন পায়নি তাই ট্রেডমার্ককৃত প্রতিষ্ঠান হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়নি। তাই এই বিবেচনায় ফেসবুক কোন ট্রেডমার্ককৃত প্রতিষ্ঠান নয় এখন পর্যন্ত।
তাহলে A1 Software কি তাহলে আইনী লড়াইয়ে জিতে যাবে? হয়তো না, কারণ এইক্ষেত্রে আরও একটি অলিখিত আইন রয়েছে তাহলো- কোন জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান যার রয়েছে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা, যে প্রতিষ্ঠান কোন কমিউনিটি পরিচালনা করে কিংবা সেবামূলক কাজ করে থাকে, তার রয়েছে বিশ্বব্যাপী সুনাম। সেই প্রতিষ্ঠানের নামে যদি কেউ ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন কিংবা ওয়েবসাইট পরিচালনা করে তাহলে জনপ্রিয় ওই প্রতিষ্ঠানটি চাইলে উক্ত ডোমেইনের মালিকানা দাবী কিংবা ওই নামে পরিচালিত ওয়েবসাইট বন্ধের জন্য আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে, কারণ জনপ্রিয় ওই প্রতিষ্ঠানটির নাম ব্যবহার করে কেউ যাতে অপরাধমূলক কোন কার্যকলাপ কিংবা অন্য কোন কাজে ব্যবহার করতে না পারে। এই নিয়ম অনুযায়ী আইনি লড়াইয়ে ফেসবুকের জিতে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এবার আসি বিটিসিএল’র ডোমেইন পলিসিতে। A1 Software এর ক্রয় করা ডোমেইনটি facebook.com নয় facebook.com.bd অর্থাত সঙ্গে বাংলাদেশের ডট বিডি এক্সটেনশনটি যুক্ত রয়েছে যেটি বাংলাদেশের নিজস্ব dotbd ডিএনএস সার্ভার নিয়ন্ত্রিত। তবে আইনি লড়াইয়ের ক্ষেত্রে এটাও কোন বাধা হবে না। কারণ প্রত্যেকটি লোকাল ডিএনএস সার্ভারই ‘‘ICANN’’ নিয়ন্ত্রিত সার্ভারের সঙ্গে সংযুক্ত এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম মানতে বাধ্য। তবে ডট বিডি ডোমেইন ক্রয় করার ক্ষেত্রে বিটিসিএল শুধু দেশীয় (বাংলাদেশী) প্রতিষ্ঠানকেই অনুমতি দিয়ে থাকে। ডটবিডি এর শুরুর দিকে ডোমেইন রেজিস্ট্রেশনের জন্য দেশিয় প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক তথ্য ও কাগজপত্রসহ আবেদন করতে হতো (যদিও এখন ডোমেইন রেজিস্ট্রেশনের জন্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কোন তথ্য বা কাগপত্র দিতে হয় না)।
বাংলাদেশকে ফেসবুক এতদিন পাত্তাই দিতো না, সরকারী পর্যায় থেকে একাধিকবার চেষ্টা করেও গত কয়েক বছর ধরে ফেসবুকের সারা পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে প্রায় ১২ বছর পর হঠাত করেই যেন এই ডোমেইনটি ফেসবুকের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলো!
কিন্তু কথা হলো- ফেসবুক কি দেশিয় (বাংলাদেশি) প্রতিষ্ঠান? অথবা বাংলাদেশে ফেসবুকের কোন অফিস আছে? উত্তর হলো-‘না’। তাহলে বিটিসিএলের নিয়ম অনুযায়ী ফেসবুক কি facebook.com.bd ডোমেইন কিনতে পারে? এই ক্ষেত্রে আইন হয়তো A1 Software এর দিকেই। কিন্তু সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবং আইন ফেসবুকের পক্ষে থাকলেও ব্যাপারটি কিন্তু ওতো সহজ নয়! এই আইনী লড়াই চলতে পারে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর… তাই এই ধরনের জটিলতা এড়াতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সবাই বেছে নেয় সহজ পদ্ধতি আর তাহলো-সমঝোতা। রেজিস্টার্ডকৃত ডোমেইনটি দামাদামির মাধ্যমে কিনে নেয় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো। তাই ফেসবুক এখন কোন পদ্ধতি বেছে নিবে, সমঝোতা নাকি আইনি লড়াই? সেটা আমরা দেখার অপেক্ষায়…
facebook.com.bd ডোমেইনটি দিয়ে কি লাভ হবে ফেসবুকের?
এটার মূল উদ্দেশ্য মূলত এই ডোমেইনটির মাধ্যমে ফেসবুকের পরিচিতি কিংবা সুনাম ব্যবহার করে অন্য কেউ এটাকে অন্যকোন ব্যবসায়িক কিংবা অপরাধমূলক কাজ ব্যবহার করতে পারে, তাই এটাকে প্রতিহত করা। এ ছাড়াও বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কিছু বাড়তি সুবিধাও পাওয়া যাবে। গোটা বিশ্বের ইন্টারনেট প্রযুক্তি বিশেষ করে ওয়েবসাইট এবং ইন্টারনেটনির্ভর মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন প্রযুক্তিতে এসেছে কিছুটা পরিবর্তন, তাহলো- টার্গেট বেজড অডিয়েন্স এবং ইন্টারেস্ট বেজড অডিয়েন্স।
একটি মাত্র ডোমেইনের জন্য এত টাকা বিনীয়োগ আইনী লড়াইয়ের ঘোষণা দেওয়া ফেসুবকের একটি কৌশলও হতে পারে!
অর্থাত ইন্টারনেট নির্ভর বিভিন্ন সেবা কিংবা কনটেন্টগুলো এখন শুধু যার যার দরকার কিংবা যে চাইবে শুধু তার কাছেই যাবে অযথা অপ্রয়োজনীয় অডিয়েন্স এর কাছে গিয়ে তা জ্যাম বাধাবে না। এর ফলে অডিয়েন্সরা একদিকে যেমন চাহিদামাফিক তাদের সেবাগুলো দ্রুত পাচ্ছে অন্যদিকে এই সেবায় ব্যবহৃত সার্ভারের লোড এবং ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের ওপর চাপও কম পড়ছে। লক্ষ করলে দেখবেন এখন ইন্টারনেট সংযোগের সঙ্গে আলাদা করে ইউটিউব এবং ফেসবুকের ব্যান্ডেউইথ বিক্রি হয়। এই প্রযুক্তির অপর নাম ক্যাশিং প্রযুক্তি। ব্যবহারকারীরা যাতে বেশি স্পীডে সাইট কিংবা অ্যাপস ব্রাউজ করতে পারে তার জন্য ইউটিউব এবং ফেসবুক বাংলাদেশেও অনেকগুলো ক্যাশিং সার্ভার বসিয়ে রেখেছে যার কাজই হলো- আমেরিকায় থাকা মূল সার্ভারের সব তথ্য সার্বক্ষণিক এই ক্যাশ সার্ভারে রেখে দেওয়া এবং বাংলাদেশ থেকে যখন কোন ব্যবহারকারী ইউটিউব কিংবা ফেসবুক ব্রাউজ করে তখন আসলে বাংলাদেশে তাদের বসানো ক্যাশ সার্ভার থেকেই তা ওপেন হয়।
প্রশ্ন থাকতে পারে এই facebook.com.bd ডোমেইনের সঙ্গে ক্যাশ সার্ভারের সম্পর্ক কোথায়?
১. যেহেতু ব্যবহারকারীদেরকে দ্রুততম সময়ে ওয়েবসাইট কিংবা মোবাইল অ্যাপস ব্রাউজ করানোই মূল উদ্দেশ্য তাই যখনই বাংলাদেশ থেকে কোন ব্যবহারকারী ফেসবুকে লগইন করবে তখন সেই রিকয়েস্টটি আর বাংলাদেশের বাইরে যাবে না, এটি তখন লোকাল ইন্ট্রানেট এর মতো করে বাংলাদেশের মধ্যে থেকেই ওপেন হবে ফলে এটা অনেক দ্রুতগতির হবে। কিন্তু বর্তমানে যেটা হয় তাহলো- ব্রাউজারে যখন facebook.com লেখা হয় তখন ‘‘ICANN’’ নিয়ন্ত্রিত ডোমেইন সার্ভার ঘুরে আসে। এভাবে ঘুরে আসতে হলে অনেকগুলো নেটওয়ার্ক হোপ পার হয়ে ঘুরে আসতে হয়, এরকম প্রতিদিন মিলিয়ন মিলিয়ন রিকয়েস্ট পার হওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই ব্যবহারকারীরা ফেসবুক ব্যবহার করে থাকে যা অনেকেরই অজানা।
আমেরিকার সরকার নিয়ন্ত্রিত ট্রেডমার্ক নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এখনো অনুমোদন পায়নি তাই ট্রেডমার্ককৃত প্রতিষ্ঠান হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়নি।
২. শুধু ব্যবহারকারীদেরকেই দ্রুতগতির ওয়েবসাইট উপহার দেওয়া নয় এখানে বাণিজ্যিকভাবে ফেসবুকের রয়েছে অনেক লাভ, তাহলো – টার্গেট বেজড বিজ্ঞাপণ পরিচালনা। এই করোনাকালীন সময়ে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে ডিজিটাল বিজ্ঞাপণ পেয়েছে ফেসবুক। তাই যখন লোকাল ডোমেইনের আওতায় চলে আসবে তখন দেশের মধ্যে টার্গেটভিত্তিক বিজ্ঞাপন প্রচারে অনেক সুবিধা হবে ফেসবুকের।
Facebook.com.bd ডোমেইনটি বিক্রি করার জন্য একটি উন্মুক্ত নোটিশ এ ওয়ান সফটওয়্যার (A1 Software) প্রতিষ্ঠানটি অনেক আগে থেকেই দিয়ে রেখেছিল এবং এর দাম উল্লেখ করা রয়েছে ৬মিলিয়ন ইউএস ডলার। হয়তো এত দাম দেখে মাথা খারাপ ফেসবুকের!
৩.বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ফেসবুকের কাছে দীর্ঘদিনের দাবী ছিল দেশিয় কনটেন্টগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশেই একটি মডেরেটর প্যানেল দেওয়া যার মাধ্যমে বিশেষ করে বিভিন্ন ফেক নিউজ, গুজব সংবাদ, প্রাইভেসি ও অ্যাডাল্ট কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণসহ ফেসবুকের মাধ্যমে অপরাধমূলক কার্যকলাপ পরিচালনাকারীদের খুঁজে বের করার কাজগুলো সহজেই করা যায়। facebook.com.bd ডোমেইনটি চালু হলে হয়তো বাংলাদেশের জন্য এই বিশেষ সুবিধা কিছুটা পাওয়া যেতে পারে।
৪. লোকাল নিউজ পরিবেশনায়ও সুবিধা হবে facebook.com.bd ডোমেইনের বদৌলতে। বিশ্বব্যাপী ফেক নিউজ নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে ফেসবুক রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। গত বছর ফেসবুক শুধু নিউজ মনিটর করার জন্যই অনেক সদস্যের একটি নিউজ টিম নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু ইংরেজী ভাষা কিংবা অন্যান্য ভাষার নিউজ নিয়ন্ত্রণ করা যতটা সহজ হচ্ছে কিন্তু বাংলা ভাষার ফেক নিউজ মনিটর করাটা ততটা সহজ হচ্ছে না। তাছাড়া বাংলাদেশে ফেক নিউজ এবং গুজব ছড়ানোর পরিমাণটা বিশ্বের অন্য দেশগুলোর তুলনায় অনেক অনেক গুন বেশি। তাই facebook.com.bd মাধ্যমে হয়তো এক সময় দেশিয় ফেক নিউজ মনিটর করার ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে।
যদিও আলাদা ডোমেইন ছাড়াও এখন পর্যন্ত শুধু facebook.com দিয়েই উপরোক্ত বেশিরভাগ সুবিধাগুলোই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, তারপরেও facebook.com.bd ডোমেইন যুক্ত হলে এই প্রক্রিয়াগুলো আরও বেশি স্পেসিফিক হবে। ডটবিডি ডোমেইনটি মূলত রিডিরেক্ট হয়ে facebook.com এই যাবে, তারপরেও জোনালভিত্তিক বিভিন্ন কন্ট্রোল কিংবা ফিল্টারিংয়ে কিছুটা সুবিধা হবে।
সবমিলিয়ে প্রতিটি দেশেই আলাদা আলাদা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তৈরি করাই ফেসবুকের মূল উদ্দেশ্য, বাংলাদেশ ছাড়া বিশ্বের প্রায় সব দেশেই রয়েছে ফেসবুকের স্থানীয় অফিস, লোকাল ডোমেইন ইত্যাদি। এর ফলে ব্যবসায়িকভাবে ফেসবুক লাভবান হওয়ার পাশাপাশি ব্যবহারকারীরাও পাচ্ছে চাহিদামাফিক কনটেন্ট, বিজ্ঞাপন কিংবা দ্রুতগতির ব্রাউজিং সুবিধা ।
লেখক: সালা্উদ্দিন সেলিম, সম্প্রচার ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রধান- সময় টিভি; ই-মেইল: salaudinsalim@gmail.com